Monday, December 9, 2024

১০টি দুর্গন্ধময় ফুল এর একটি গ্রাম-বাংলাতেই রয়েছে, জেনে নিন

- Advertisement -

এমন কিছু ফুল কে সুগন্ধের বদলে এমনই দুর্গন্ধময় করে তুলেছে, তাদের কাছে ঘেঁষা খুবই মুশকিল। হয়তো এদের মধ্যে অনেকেই কিছুটা সৌন্দর্যের অধিকারী হয়েছে, কিন্তু দুর্গন্ধের জন্য বাড়ির আঙিনায় এদেরকে কেউ আনতেই চায়বে না।


টাইটান অরাম
টাইটান অরাম – Image by Wikimedia Commons

ফুল যে শুধু সৌন্দর্য আর সুগন্ধ ছড়াতে জানে, এমনটি ভাবলে ভুল হতে পারে। এক এক জাতের ফুলকে প্রকৃতি ভিন্নভাবে সাজিয়েছে। কিছু ফুল কে এমনভাবে সাজিয়েছে, যারা শুধুমাত্র সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত হয়ে রয়েছে। কিছু ফুল কে আবার প্রকৃতি দিয়েছে শুধুমাত্র সুগন্ধ। সৌন্দর্য ও সুগন্ধ দুই-ই দিয়েছে এমন ফুল ও রয়েছে। আবার কিছু ফুল কে সৌন্দর্য বা সুগন্ধ তেমন কিছুই দেয়নি।

আবার এমন কিছু ফুল কে সুগন্ধের বদলে এমনই দুর্গন্ধময় করে তুলেছে, তাদের কাছে ঘেঁষা খুবই মুশকিল। হয়তো এদের মধ্যে অনেকেই কিছুটা সৌন্দর্যের অধিকারী হয়েছে, কিন্তু দুর্গন্ধের জন্য বাড়ির আঙিনায় এদেরকে কেউ আনতেই চায়বে না।

তবে এই সৌন্দর্য, সুগন্ধ বা দুর্গন্ধ, যাইহোক না কেন, এসবই মানুষের বিচার্য বিষয়। প্রকৃতি কাউকেই বড় বা ছোট করার জন্য এসব দান করেনি। পরিবেশে নিজেদের টিকিয়ে রাখার কৌশল হিসাবেই প্রকৃতি এদেরকে এমনভাবেই সাজিয়ে তুলেছে। আজ এখানে সবচেয়ে দুর্গন্ধময় ১০টি ফুল এর কথা সংক্ষেপে তুলে ধরা হল। জানলে অবাক হতে হবেন, এদের একটি গ্রাম-বাংলারই নিজস্ব ফুল।

১০. ওয়েস্টার্ন স্কঙ্ক ক্যাবেজ

বড় বড় সবুজ পাতার মাঝে কচু ফুল এর মতো দেখতে এক গুচ্ছ হলুদ ফুল যখন ফুটে থাকে, নাজানি কত মনোরম হয়ে ওঠে ওই স্থানটির পরিবেশ। যে কাউকে দৃষ্টি আকর্ষণ করাবে এই ওয়েস্টার্ন স্কঙ্ক ক্যাবেজ। তবে এর কাছে কেউই যেতে চায়বে না। কারণ এর থেকে নির্গত হয় অত্যন্ত বাজে একটি গন্ধ। গন্ধটা অনেকটা আমেরিকান এক জাতের কাঠবিড়ালির গায়ের দুর্গন্ধের মতো। স্থানীয় ভাষায় এই কাঠবিড়ালিদের স্কঙ্ক বলা হয়ে থাকে। ওয়েস্টার্ন স্কঙ্ক ক্যাবেজ মূলত উত্তর আমেরিকার স্যাঁতসেঁতে ও জলা অঞ্চলের স্থানীয় ফুল।

- Advertisement -

হাইডনোরা আফ্রিকানা
হাইডনোরা আফ্রিকানা – Image by Wikimedia Commons

৯. হাইডনোরা আফ্রিকানা

দক্ষিণ আফ্রিকার শুষ্ক অনুর্বর মরু অঞ্চলের একটি অদ্ভুত স্থানীয় গাছ এই হাইডনোরা আফ্রিকানা। সম্পূর্ণ গাছটি মাটির নিচে অদৃশ্য থাকে। তাই এই উদ্ভিদটির শরীরে কোনও ক্লোরোফিল থাকে না। শুধুমাত্র ফুলটি মাটির উপরে এসে ফুটে ওঠে। ফুলটির গন্ধ অনেকটা পঁচা গোবরের মতো। তাই গুবরে পোকা জাতীয় পতঙ্গদের পরাগায়নের জন্য সহজে আকৃষ্ট করতে পারে।

৮. এরিস্টোলোসিয়া জাইগানটিয়া

লতা জাতীয় এই গাছটির সমস্ত শরীর জুড়ে সারিবদ্ধভাবে ঝুলে থাকে হাতির কানের মতো বড় বড় প্রায় মেরুন রঙের চকচকে ফুল। দেখতে যতটা অদ্ভুত, এর গন্ধও ততটাই দুর্গন্ধময়। অনেকটা ইঁদুরের মলের মতো ঝাঁঝালো দুর্গন্ধে ভরে থাকে এরিস্টোলোসিয়া জাইগানটিয়া ফুল টির আশেপাশের পরিবেশ। ব্রাজিলের স্থানীয় ফুল এটি।


ড্রাকুনকুলাস ভালগারিস
ড্রাকুনকুলাস ভালগারিস – Image by Wikimedia Commons

৭. ড্রাকুনকুলাস ভালগারিস

এটিও অনেকটা কচু জাতীয় ফুল এর মতো দেখতে। গাঢ় গোলাপি রঙের একটি বড় পাপড়ির মাঝে লম্বা বেগুনী রঙের একটি মঞ্জরী অবস্থান করে। তাই অনেকেই ফুল টিকে একটি ড্রাগনের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। এই ফুল থেকে তীব্র পঁচা মাংসের দুর্গন্ধ নির্গত হয়। ফুল টি বলকান অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।

৬. অরাম ডিস্কর্ডিস

এটিও একটি কচু জাতীয় ফুল। হালকা হলুদের ওপর মেরুন রঙের ছিট যুক্ত ফুল টি আকর্ষণীয় হলেও অত্যন্ত দুর্গন্ধের জন্য একে অনেকেই এড়িয়ে চলেন। এই ফুল থেকে পঁচা মৃতদেহের মতো গন্ধ নির্গত হয়। ফুল টি সাধারণত বসন্তের শেষ দিকে ফুটে থাকে। গ্রিস, সাইপ্রাস অঞ্চলে এই অরাম ডিস্কর্ডিস এর দেখা মেলে সবচেয়ে বেশি।


স্টেপেলিয়া
স্টেপেলিয়া – Image by Wikimedia Commons

৫. স্টেপেলিয়া

মূলত একটি ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ এটি। গাছটিতে যে বড় আকারের ফুল ফুটতে দেখা যায়, সেটি অনেকটা একটি স্টার বা তারার মতো। ফুল টি বেশ পুরু। তবে আপাদমস্তক সৌন্দর্যে ভরা হলেও এই ফুল থেকেও পঁচা মাংসের দুর্গন্ধ বের হয়। তবে অনেকেই শখের বসে বাড়ির আঙিনায় এই স্টেপেলিয়া গাছটি রাখতে পছন্দ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার একটি স্থানীয় গাছ এটি।

৪. র‍্যাফেলসিয়া

পোশাকি নাম র‍্যাফেলসিয়া আর্নল্ডি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই ফুল সম্পর্কে হয়তো কারওরই অজানা কিছু নেই। ইন্দোনেশিয়ার অধিক বৃষ্টি যুক্ত বনভূমিতেই একমাত্র এই পরজীবী গাছটির দেখা পাওয়া যায়। ফুল এর একটি পাপড়ির ব্যাস প্রায় ৩ ফুটেরও বেশি হতে পারে। ওজনও হতে পারে প্রায় ১১ কেজিরও বেশি। তবে এই ফুল এর কাছে কেউ-ই যেতে চাইবে না। কারণ এর থেকে নির্গত হয় বিকট পঁচা মাংসের মতো দুর্গন্ধ।

৩. বুলবোফাইলাম ফেলাইনপসিস

এই অর্কিডটির পাতা অন্য অর্কিডগুলির তুলনায় বেশ লম্বা, প্রায় ৪ ফুটেরও বেশি। বছরে একবারই ফুল ফোটে নিউগিনির স্থানীয় এই অর্কিডটিতে। ফুল গুলি মেরুন রঙের লোমশ প্রকৃতির হয়ে থাকে। দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হলেও এর থেকেও তীব্র মাংস পঁচা গন্ধ নির্গত হয়।

২. টাইটান অরাম

ইন্টারনেটের দৌলতে টাইটান অরামও একটি পরিচিত ফুল এখন। র‍্যাফেলসিয়ার পরেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফুল এটি। তবে দুর্গন্ধের বিচারে টাইটান অরাম প্রথম স্থান অধিকার করে রয়েছে। এই ফুল টিকেও ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া যায়। গাঢ় মাংসের মতো এর রঙ। ফুল টি প্রতি বছর ফোটে না। প্রায় ৪-৫ বছর অন্তর এই ফুল কে ফুটতে দেখা যায়। আর তখন প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এই ফুল এর আশেপাশের পরিবেশ ভরে ওঠে তীব্র পঁচা মৃত লাশের মতো গন্ধে। অনেকেই তাই মজা করে এই ফুল কে ‘লাশ ফুল’ বলে থাকেন।


ঘেটকচু
ঘেটকচু – Image by Wikimedia Commons

১. ঘেটকচু

এটিই গ্রাম-বাংলার একমাত্র গাছ, যার ফুল এর গন্ধ বিশ্বের ১০টি দুর্গন্ধময় ফুল এর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। অবহেলায় গ্রাম-বাংলার যে কোনও স্থানে এই গাছ জন্মাতে পারে। স্থানভেদে ঘেটকচু ঘেটকোল, খারকোন, ঘেটওল, খারকান নামে পরিচিত। বর্ষার মরশুমেই এই গাছে ফুল ফোটে বেশি। ফুল টি দেখতেও অনেকটা কচু ফুল এর মতো। তবে ফুল এর রঙ গাঢ় মেরুন রঙের। বাগান ভরে যখন ফুল ফুটতে থাকে, মনে হবে সমস্ত বাগানটি যেন মানুষের মলে ভরে রয়েছে। তবে গ্রাম-বাংলার মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এই ঘেটকচু। বিভিন্নভাবে রান্না করে খেতে পছন্দ করেন গ্রামীণ মানুষেরা।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর