বর্ষা মরশুমে সাপ এর চলাফেরা অত্যন্ত বেড়ে যায়। তাই মানুষের অন্যতম চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই সাপ। প্রতি বছর অসংখ্য মানুষের মৃত্যুও এই সাপ এর কামড়ে ঘটে। মানুষ তখন বাধ্য হয় সাপ থেকে নিজেদের রক্ষার্থে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে। উল্টো দিকে আবার মানুষের এই রক্ষণশীলতার কারণে প্রতি বছর অসংখ্য নিরীহ সাপ এরও মৃত্যু ঘটে।

চলছে বর্ষা মরশুম। সূর্যের দেখা পাওয়া এখন প্রায় বিরল। সমস্ত আকাশ ঘিরে রয়েছে কালো মেঘের চাদরে। কখনও ঝিরিঝিরি, কখনও ইলশে গুঁড়ি, আবার কখনও বা দু-এক পশলা ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হয়ে চলেছে প্রায় সারাদিন ধরেই। পরিবেশের তাপমাত্রা এখন রয়েছে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে। তবে বাতাসে আর্দ্রতা অনেকটাই বেশি।
বর্ষা মরশুমের এই পরিবেশ অনেকের কাছে মনোরম হলেও, এই পরিবেশেই বিপদের আশঙ্কা থাকে অনেক বেশি। মশা-মাছি সহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রব বাড়ার পাশাপাশি অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে সাপ প্রজাতি। বিশেষ করে সাপ এদের জন্য এই বর্ষাকাল সবচেয়ে নিরাপদ ও সক্রিয় মরশুম। বছরের অন্য ঋতুগুলিতে তেমন সক্রিয় দেখা না গেলেও, বর্ষা মরশুমে এদের চলাফেরা অত্যন্ত বেড়ে যায়। তাই মানুষের অন্যতম চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই সাপ। প্রতি বছর অসংখ্য মানুষের মৃত্যুও এই সাপ এর কামড়ে ঘটে। মানুষ তখন বাধ্য হয় সাপ থেকে নিজেদের রক্ষার্থে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে। উল্টো দিকে আবার মানুষের এই রক্ষণশীলতার কারণে প্রতি বছর অসংখ্য নিরীহ সাপ এরও মৃত্যু ঘটে।
বর্ষা মরশুমে গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি শহরাঞ্চলেরও প্রায় প্রতিটি বাড়িতে আনতে দেখা যায় বোতলজাত কার্বলিক অ্যাসিড অথবা ব্লিচিং পাউডার। অধিকাংশের ধারণা, কার্বলিক অ্যাসিড বা ব্লিচিং পাউডারে সাপ তাড়ানো সম্ভব। এই ধারণা আদৌ কী সত্য? কতটা যুক্তি রয়েছে এই ধারণার পিছনে? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক কার্বলিক অ্যাসিড বা ফেনল সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ফেনল আসলে একটি অ্যারোমেটিক জৈব যৌগ। এর রাসায়নিক সংকেত C6H5OH। এটি একটি মৃদু অ্যাসিড এবং উদ্বায়ী, অর্থাৎ সহজে উবে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। সাধারণ অবস্থায় ফেনল সাদা কেলাস আকারে থাকে। কিন্তু বাতাসের জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে তরল আকার ধারণ করে। বোতল বন্দী ফেনলের ঢাকনা খুললে একটি তীব্র ঝাঁঝালো ফিনাইলের মতো গন্ধ নির্গত হয়। কারণ ফেনলের অণুতে একটি ফিনাইল মূলক থাকে। ফেনল উদ্বায়ী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ঝাঁঝালো গন্ধের তেজ ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে। প্রথম দিকে আলকাতরা থেকে তৈরি করা শুরু হলেও বর্তমানে পেট্রোলিয়াম থেকেই ফেনল তৈরি করা হয়। নাইনল, ডিটারজেন্ট, কীটনাশক ও বিভিন্ন ওষুধ শিল্পে এই ফেনল ব্যবহার করা হয়।
অপরদিকে কার্বলিক অ্যাসিড অম্লধর্মী হলেও ব্লিচিং পাউডার কিন্তু ক্ষারধর্মী। রাসায়নিক উপারে চুন (CaO)-এর সঙ্গে ক্লোরিন (Cl) মিশিয়ে এই ব্লিচিং পাউডার তৈরি করা হয়। এর রাসায়নিক সংকেত Ca(ClO)2। ব্লিচিং পাউডারের থেকেও তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ নির্গত হয়। এটি আসলে ক্লোরিনের গন্ধ। কারণ বাতাসের সংস্পর্শে এই পাউডার থেকে ক্লোরিন মুক্ত হয়ে যায়। সাধারণভাবে জীবাণু নাশক হিসাবেই ব্লিচিং পাউডারের ব্যবহার বেশি। তাই এই বর্ষা মরশুমে পোকামাকড় ও জীবাণু নাশ করতে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা যেতেই পারে।
কিন্তু সাপ তাড়াতে এই দুটি রাসায়নিক যৌগের কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনও সরাসরি পাওয়া যায়নি। অধিকাংশের ধারণা, এই দুই যৌগের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ সাপ প্রজাতি সহ্য করতে পারে না। তাই তারা এর থেকে দূরে সরে যায়। কিন্তু সাপ এর ঘ্রাণশক্তি অত্যন্ত ক্ষীণ। তারা কোনওভাবেই কার্বলিক অ্যাসিড ও ব্লিচিং পাউডারের ঝাঁঝালো গন্ধ অনুভব করতে পারে না।
তবে হ্যাঁ, কোনওভাবে যদি এই দুই যৌগ সাপ এর সংস্পর্শে আসে, অবশ্যই এদের শরীরে তীব্র জ্বালা ধরায়। সেই কারণে বাড়ির আশেপাশে কার্বলিক অ্যাসিড বা ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে রাখলে সাপ তার ওপর দিয়ে সাময়িক যেতে পারে না। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে কার্বলিক অ্যাসিড উবে গেলে বা ব্লিচিং পাউডার মাটিতে মিশে গেলে সাপ তার উপর দিয়ে দিব্যি চলাচল করতে পারে।
সাপ তাড়াতে তাই কার্বলিক অ্যাসিড বা ব্লিচিং পাউডারের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর না করাই ভালো। বরং এই বর্ষা মরশুমে কিছুটা সতর্কভাবে চলাফেরা করলে উভয়েরই বিপদের সম্ভাবনা কমবে।