গ্রাম-বাংলার প্রায় ৭০ রকমের ফল, যাদের কদর এখন প্রায় একেবারেই নেই, ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে। বনে জঙ্গলে অচেনা গাছ হিসাবে পরিচিতি পাচ্ছে। পরিণত হচ্ছে লুপ্তপ্রায় ফল এ। জনপ্রিয়তা না থাকায় এই ফলগুলিকে এখন আর বাণিজ্যিক কারণে চাষাবাদ করা হয় না। এক সময়ে গ্রাম-বাংলার অতি পরিচিত ফল হলেও এগুলির অধিকাংশকেই এখন বুনো ফল হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
এক সময় প্রাকৃতিক ফলগুলির একটা নির্দিষ্ট স্থান ছিল। অর্থাৎ এই ফলগুলির গাছ পরিবেশের মাটি ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট কোনও অঞ্চলে জন্মাতো। পরে মানুষের বিভিন্ন কারণে বা প্রয়োজনে স্থান পরিবর্তন করতে শুরু করে (অবশ্যই মানুষের দ্বারা)। এখন সমগ্র বিশ্ব জুড়ে ফলগুলি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, কোনটি কোন অঞ্চলের স্থায়ী ফল তা বুঝতে পারা মুশকিল।
নিজেদের প্রয়োজনে মানুষ এখন কিছু ফলকে সবচেয়ে বেশি গ্রহণ ও জনপ্রিয় করেছে। আবার কিছু ফলকে দূরে সরিয়ে ক্রমশ জনপ্রিয়তার আড়ালে পৌঁছে দিয়েছে। এই ফলগুলির কদর এখন অনেক কম। অচেনার সঙ্গে ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ছে ফলগুলি। এভাবেই ক্রমশ স্থায়ী ফলগুলি লুপ্তপ্রায় ফল এ পরিণত হওয়া শুরু করেছে।
গ্রাম-বাংলার যে সব আঞ্চলিক ফল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন গ্রাম-বাংলার প্রায় ৩০ রকমের নিজস্ব ফল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছে। এই ফলগুলিকে ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিক কারণে উৎপাদন করা হয় এবং সেই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করা হয়। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফলগুলি এখন সুনামের সঙ্গে উৎপাদন করা হচ্ছে। বলা বাহুল্য, এই ফলগুলির মধ্যে অন্যতম আম, কাঁঠাল, কলা, জাম, কুল, তাল প্রভৃতি।
গ্রাম-বাংলার যে সব আঞ্চলিক ফল তুলনামূলক কম জনপ্রিয়
গ্রাম-বাংলার প্রায় ৪০ রকমের ফল খুব বেশি জনপ্রিয় না হলেও একশ্রেণীর মানুষের কাছে এখনও কিছুটা জনপ্রিয় ফল হিসাবে পরিচিত হয়ে রয়েছে। এই ফলগুলি বাণিজ্যিক কারণে তেমনভাবে চাষাবাদ হয় না। তবে উপকারিতার কথা বিচার করে বেশ প্রচলন রয়েছে এগুলির। এই ফলগুলির মধ্যে অন্যতম বেল, কতবেল, চালতা প্রভৃতি।
যে সব ফল আঞ্চলিক না হলেও গ্রাম-বাংলায় ব্যাপকভাবে জন্মায়
কিছু দেশি ফল যেমন ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বিদেশের মাটিতে পৌঁছে গিয়েছে, ঠিক তেমনই কিছু ফল আবার বিভিন্ন কারণে ও বিভিন্ন সময়ে বিদেশ থেকে এদেশের মাটিতে চলে এসেছে। তারপর জনপ্রিয়তা পেয়ে এমনভাবে এদেশের মাটিকে নিজের করে নিয়েছে, কোনওভাবেই এদেরকে আর বিদেশি ফল হিসাবে চিহ্নিত করা যায় না। এই ফলগুলির মধ্যে অন্যতম লিচু (চিন), পেয়ারা (দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা), নারকেল (প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ), আনারস (দক্ষিণ আমেরিকা), তরমুজ (দক্ষিণ আফ্রিকা), আমড়া (ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্স), পেঁপে (মধ্য আমেরিকা), কমলালেবু (চিন), সফেদা (মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকো), ডালিম বা বেদানা (আফগানিস্থান) প্রভৃতি।
গ্রাম-বাংলার সে সব দেশি ফল এখন লুপ্তপ্রায়
গ্রাম-বাংলার প্রায় ৭০ রকমের ফল, যাদের কদর এখন প্রায় একেবারেই নেই, ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে। বনে জঙ্গলে অচেনা গাছ হিসাবে পরিচিতি পাচ্ছে। পরিণত হচ্ছে লুপ্তপ্রায় ফল এ। জনপ্রিয়তা না থাকায় এই ফলগুলিকে এখন আর বাণিজ্যিক কারণে চাষাবাদ করা হয় না। এক সময়ে গ্রাম-বাংলার অতি পরিচিত ফল হলেও এগুলির অধিকাংশকেই এখন বুনো ফল হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সংরক্ষণের চেষ্টা না করা হলে হয়তো কোনও একদিন এই লুপ্তপ্রায় ফল গুলি চিরকালের জন্য বিদায় নেবে গ্রাম-বাংলা থেকে। এই লুপ্তপ্রায় ফল গুলির মধ্যে অন্যতম লটকন, বেতফল, ডেউয়া, করমচা, কাঠবাদাম, গোলাপজাম, তিনকরা, সাতকরা, মনফল, আঁশফল, গাব, কাউফল, তৈকর, বৈঁচি, জিলাপিফল, মাখনা, বকুল, ফলসা, চুকুর, চিকান, বিলিম্বি প্রভৃতি।