অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলেও হতে পারে বিপদ। বেড়ে যেতে পারে উচ্চ রক্তচাপ। কারণ অতিরিক্ত লবণ শরীরে প্রবেশ করলে তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শরীর প্রথমে লবণ –কে গলিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। তখন শরীর অতিরিক্ত জল ধরে রাখতে চায়। ফলে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে রক্তনালী দুর্বল হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় রক্তনালী ফেটে গিয়ে ব্যক্তির স্ট্রোক পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
রসায়ন বিজ্ঞানের সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl)-ই বাংলায় লবণ বা নুন নামে পরিচিত। যে কোনও খাদ্য দ্রব্য প্রস্তুতির অন্যতম ও কমন উপাদান এই লবণ। যা আমাদের নিত্য-নৈমিত্তিক জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। প্রায় ৬ হাজার বছর আগেও মানুষ খাদ্য দ্রব্যে এর ব্যবহার জানত।
লবণ এমনই একটি উপাদান, যা খাবারে স্বাদের ভারসাম্য বজায় রাখে। কোনও খাবারে এর পরিমাণের সামান্যতম কমা বা বাড়াতেও তার স্বাদ বদলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে বিষাদে পরিণত হতে পারে সেই খাবার।
এই অপরিহার্যের কথা বিবেচনা করেই হয়তো ব্রিটিশ সরকার গত শতাব্দীর ৩০ এর দশকে ভারতীয়দের জন্য লবণ তৈরি আইন করে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। পরে ১৯৩০ সালের ১২ মার্চ গাঁধীজির ডাণ্ডি অভিযানের মাধ্যমে সেই আইন ভেঙেছিল ভারতীয়রা। যা ভারতীয় ইতিহাসে ‘লবণ সত্যাগ্রহ’ নামে পরিচিত হয়ে রয়েছে। আর সেই অভিযানের হাত ধরেই মূলত শুরু হয়েছিল ‘আইন অমান্য আন্দোলন’।
যাইহোক, এই লবণ কিন্তু শুধুমাত্র খাবারের স্বাদ নিয়ন্ত্রণ করতেই সাহায্য করে না। শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতেও এর অপরিসীম ক্ষমতা রয়েছে। বিবিসি সংবাদ মাধ্যমের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রটগার্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল ব্রেসলিন। তার কথায় মেরুদণ্ড, মস্তিষ্ক, নিউরন, হাড়, পেশি, ত্বক সহ সমস্ত কোশের জন্য লবণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও শরীর ও মনের শক্তি যোগায় লবণ। কারণ লবণ –এ থাকে সোডিয়াম। যা এক রকমের বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গের মতো কাজ করে।
অন্যান্য খনিজ পদার্থের মতো সোডিয়ামও মানুষের শরীরের অপরিহার্য উপাদান। শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে হাইপোনাট্রেমিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত, বমি, খিঁচুনি এমনকি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই ডায়রিয়ার সময় চিকিৎসকেরা বারবার রোগীকে ORS গোলা জল পান করতে পরামর্শ দেন। কারণ এই সময়ে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম নির্গত হয়ে যায়।
আবার অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলেও হতে পারে বিপদ। বেড়ে যেতে পারে উচ্চ রক্তচাপ। কারণ অতিরিক্ত লবণ শরীরে প্রবেশ করলে তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শরীর প্রথমে লবণ –কে গলিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। তখন শরীর অতিরিক্ত জল ধরে রাখতে চায়। ফলে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে রক্তনালী দুর্বল হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় রক্তনালী ফেটে গিয়ে ব্যক্তির স্ট্রোক পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু (WHO) প্রতিদিনের লবণ খাওয়ার পরিমাণকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব ব্যাপী গড়ে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৫ থেকে ১১ গ্রাম লবণ খাওয়া উচিত। কারণ প্রতি ৫ গ্রাম লবণ থেকে পাওয়া যায় ২ গ্রাম সোডিয়াম।