যে জায়গাটি রাতের বেলায় আলোয় আলোময় হয়ে থাকে, আজ এই ‘রাত দখল’ বা প্রতিবাদের দিনে সেই জায়গাটি ছিল সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঢাকা। রাস্তার পথবাতি সহ মোড়ের বড় আলোটিও ছিল নেভানো। যে বাতিগুলিকে অন্তত রাত সাড়ে নটা পর্যন্ত সবাই জ্বলতে দেখেছেন, সেই বাতিগুলি আকস্মিকভাবে জমায়েতের আগে নিভে গেল।
আজ অর্থাৎ ১৪ আগস্ট মাঝ রাতে কয়েক হাজার মহিলা ও পুরুষ জমায়েত হয়েছিলেন সিউড়ি শহরের প্রাণকেন্দ্র বাসস্ট্যান্ডের নেতাজি সুভাষের মূর্তির পাদদেশে। যদিও তার আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। তবুও জমায়েতে মানুষের কোনও খামতি হয়নি। কেউ কাউকে ডেকে আনেনি এখানে। সবাই এসেছিলেন বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে। ঘটনাচক্রে সময়টি হয়ে দাঁড়ালো ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক মুহূর্ত।
যে জায়গাটি রাতের বেলায় আলোয় আলোময় হয়ে থাকে, আজ এই ‘রাত দখল’ বা প্রতিবাদের দিনে সেই জায়গাটি ছিল সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঢাকা। রাস্তার পথবাতি সহ মোড়ের বড় আলোটিও ছিল নেভানো। যে বাতিগুলিকে অন্তত রাত সাড়ে নটা পর্যন্ত সবাই জ্বলতে দেখেছেন, সেই বাতিগুলি আকস্মিকভাবে জমায়েতের আগে নিভে গেল। ব্যাস, গোটা বাসস্ট্যান্ড চত্বর অন্ধকার।
কিন্তু তাতে কি! জ্বলে উঠল অসংখ্য মোবাইল, এমনকি বাড়ি থেকে আনা ইমারজেন্সি লাইট ও বিভিন্ন মিডিয়ার ফ্ল্যাশ গান। তার সঙ্গে চলতে থাকল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ। সবারই কন্ঠে তখন “we want justice” এর ধ্বনি। দলমত নির্বিশেষে সমস্ত নারী-পুরুষ আজ সমবেত হয়েছিলেন। ছিলেন শহরের অধিকাংশ অধ্যাপক, শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, নাট্যকর্মী সহ সমস্ত স্তরের মানুষ। সবার কণ্ঠে একটাই দাবি, “we want justice”। কি প্রচন্ড উন্মাদনা, কিন্তু কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা নেই। যদিও পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
মেয়েরাই ছিলেন রাত দখল আন্দোলনের পুরো ভাগে। পুরুষের সাহায্য তাদের প্রয়োজন হয়নি। তারা আর জি করের ধর্ষিতা ও খুন হওয়া মেয়েটির বিচারের দাবিতে সরব হন।
এদিন অনেকেই বললেন, ‘আমরা এতদিন সিউড়ি শহর আছি, কিন্তু মানুষের এত বড় স্বতঃস্ফূর্ত অথচ শান্তিপূর্ণ জমায়েত এর আগে আমরা দেখিনি। আজকের দিনটিতে পুরুষেরাই এগিয়ে দিয়েছেন তাদের বাড়ির নারী শক্তিকে। পুরুষেরা ছিলেন একদম পিছনের সারিতে।’
অবশেষে আন্দোলনের একদম শেষ পর্যায়ে লজ্জার মাথা খেয়ে ইলেকট্রিক ডিপার্টমেন্টকে বারবার খবর দেওয়ার ফলে তারা এসে মাঝখানের মূল লাইটটি ঠিক করে দিলেন। কিন্তু ততক্ষণে আন্দোলন প্রায় শেষের দিকে।
এই দিন বীরভূমের বোলপুর, সাঁইথিয়া, আমোদপুর, রামপুরহাট প্রভৃতি শহরের নারী শক্তি স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন পুরুষেরা উপস্থিত থাকলেও। এখানে পুরুষদের ভূমিকা ছিল নেহাত গৌণ। নারীদের কন্ঠে এই দিন বারবার ধ্বনিত হয়েছে, ‘আমরাও পারি, আমরাও পারি’।