মানুষের মতো মৌমাছি -রাও কিন্তু ভোট দিতে জানে। পুরনো বাসা ছেড়ে নতুন বাসা কোথায় নির্মাণ করা হবে তা বেছে নেওয়ার জন্যই শুরু হয় এই ভোট গণনা। এক্ষেত্রে কিছু কর্মী মৌমাছি আলাদাভাবে প্রথমে নির্দিষ্ট জায়গা পরিদর্শন করে আসে। বাসায় পৌঁছে নেচে নেচে সেই জায়গার বর্ণনা দিতে থাকে এরা। তখন বাকি মৌমাছি -দের ভোট গণনার মাধ্যমে নতুন বাসা নির্মাণের জায়গা বেছে নেওয়া হয়।
এই বিশ্বে মৌমাছি -দের আগমন মানুষেরও আগে। ফসিলস পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, দেড়শো মিলিয়ন বছর আগেও এদের অস্তিত্ব ছিল। এরা আকারে ক্ষুদ্র হলেও এদের স্বভাব আর প্রকৃতি এতটাই আকর্ষণের যে গবেষণার ক্ষেত্রে পতঙ্গ বিজ্ঞানীদের অত্যন্ত প্রিয় একটি বিষয় এই মৌমাছি। আর প্রতি নিয়ত তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে মৌমাছি সম্পর্কে নতুন নতুন অজানা তথ্য। এখানে সেই রকমই কিছু অজানা তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
১। মৌমাছি -দের মধু সংগ্রহ করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। দেখা গিয়েছে, মাত্র এক পাউন্ড মধু সংগ্রহ করতে এদের প্রায় ৮৮ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। আর এই সময় এদের প্রায় ২ মিলিয়ন ফুলের প্রয়োজন পড়ে।
২। মধু সংগ্রহ করার সময় মৌমাছি -রা এদের মৌচাক থেকে সাধারণত ৬ কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থান করে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, এদের প্রায় ২০ কিলোমিটার পথও অতিক্রম করতে হয়েছে।
৩। ওড়ার জন্য মৌমাছি -দের প্রচুর পরিমাণে শক্তি ক্ষয় হয়। এরা অন্য পতঙ্গদের থেকে খুব বেশি দ্রুতগামী না হলেও প্রতি সেকেন্ডে এদের ডানা প্রায় ২০০ বার বা প্রতি মিনিটে প্রায় ১২ হাজার বার নড়তে পারে।
৪। মৌমাছি -দের সাধারণত ৫টি চোখ থাকে। ৩টি থাকে মাথার উপরের দিকে আর ২টি চোখ থাকে মাথার নিচের অংশে। চোখগুলি সূক্ষ্ম রোমে ঢাকা থাকে।
৫। ভাবতে অবাক লাগলেও সত্যি যে মৌমাছি -দের ৫টি চোখ থাকা সত্ত্বেও এরা লাল রঙ আদৌ দেখতে পায় না। তবে অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে এরা লাল রঙের ফুলকে চিনতে পারে।
৬। অন্যসব প্রাণীদের মতো মৌমাছি -দেরও ঘুম পায়। বিশ্রামের সময় এরাও ঘুমিয়ে পড়ে। এই সময় এদের অ্যান্টেনা অতি সক্রিয় হয় আর পেট থাকে মেঝের সঙ্গে লেগে। তাতে বিপদের আঁচ পেলে সতর্ক হয়ে সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠতে পারে এরা।
৭। মানুষের মতো মৌমাছি -রাও কিন্তু ভোট দিতে জানে। পুরনো বাসা ছেড়ে নতুন বাসা কোথায় নির্মাণ করা হবে তা বেছে নেওয়ার জন্যই শুরু হয় এই ভোট গণনা। এক্ষেত্রে কিছু কর্মী মৌমাছি আলাদাভাবে প্রথমে নির্দিষ্ট জায়গা পরিদর্শন করে আসে। বাসায় পৌঁছে নেচে নেচে সেই জায়গার বর্ণনা দিতে থাকে এরা। তখন বাকি মৌমাছি -দের ভোট গণনার মাধ্যমে নতুন বাসা নির্মাণের জায়গা বেছে নেওয়া হয়।
৮। মৌমাছি -দের সংগৃহীত প্রাকৃতিক মধু কখনওই নষ্ট হয় না। কয়েক দশক আগে ইজিপ্টে একবার প্রত্ন সামগ্রী খননের সময় ২ হাজার বছরের পুরনো মধু পাওয়া গিয়েছিল। যা এখনও খাওয়ার উপযোগী।
৯। পুরুষ মৌমাছি -ই একমাত্র পতঙ্গ যারা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আত্মবলিদান করে। কারণ মিলনের সময় এদের পুরুষাঙ্গ ভেঙে যায় এবং সাথে সাথেই এরা মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে।
১০। মৌমাছি -দের ঘ্রান শক্তি অত্যন্ত প্রবল। এই বিশেষ শক্তির কথা চিন্তা করে পতঙ্গ বিজ্ঞানীরা এখন মৌমাছি -দের বোম্ব ডিটেক্টর হিসাবে ব্যবহার করা যায় কিনা, তা নিয়ে গবেষণা করছেন। ইতিমধ্যে মৌমাছি -দের এই বিষয়ে ট্রেনিংও দেওয়া শুরু করে দিয়েছেন তারা।