পৃথিবীতে যেভাবে ভূপৃষ্ঠের জল ভূগর্ভে প্রবেশ করে সঞ্চিত হয়, মঙ্গল গ্রহ এও তেমনভাবে জল সঞ্চিত হয়েছে। তবে এই জল যখন সঞ্চিত হয়েছিল মঙ্গল গ্রহ সেসময় ছিল অনেকটাই উষ্ণ। মঙ্গল গ্রহ এ এই জল সঞ্চিত রয়েছে ভূপৃষ্ঠের প্রায় সাড়ে এগারো থেকে কুড়ি কিলোমিটার অভ্যন্তরে।
সৌরজগতের গ্রহগুলির মধ্যে পৃথিবী বহির্ভূত যে গ্রহটিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা, সেটি যে মঙ্গল গ্রহ, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়। লাল এই গ্রহটিকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ বহু আগে থেকেই। আর তাই গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকেই এখানে অভিযান চালাতে শুরু করেছিল নাসা।
মঙ্গল গ্রহ কে নিয়ে কেন এত আগ্রহ
সৌরজগতের একমাত্র গোল্ডীলকস জোনের অন্তর্ভুক্ত পৃথিবী। তাই এখানেই ঘটেছে জীবনের আবির্ভাব। কিন্তু মঙ্গল গ্রহ এর অবস্থানও প্রায় গোল্ডীলকস জোনের কাছাকাছি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা, এখানেও তাই জীবনের আবির্ভাব ঘটলেও ঘটতে পারে। অন্তত সাম্প্রতিক সময়ের একাধিক গবেষণায় তেমনই ইঙ্গিত পাচ্ছেন তাঁরা। আগামীতে পৃথিবীর বাইরে যদি কোথাও বসতি স্থাপনের সম্ভাবনা থাকে, তা একমাত্র মঙ্গল গ্রহ এই সম্ভব।
মঙ্গল গ্রহ এ জলের উপস্থিতি
এই সম্ভাবনাকে আরও কিছুটা এগিয়ে দিয়েছে প্রসিডিং অফ দ্য ন্যাশনাল সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক সময়ের একটি রিপোর্ট। এই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, মঙ্গল গ্রহ এর ভূগর্ভে জমা রয়েছে বিপুল তরল জলের ভাণ্ডার। ঠিক যেমনটি পৃথিবীর ভূগর্ভে জমা থাকে এই জল। পূর্বে যতটা অনুমান করা হয়েছিল মঙ্গল গ্রহ এ এই জলের পরিমাণ রয়েছে তার থেকেও অনেক বেশি।
জল আবিস্কার
৫ মে ২০১৮ সালে নাসা মার্স ইনসাইট ল্যান্ডার নামের একটি রোবটিকস-কে পাঠিয়েছিল মঙ্গল গ্রহ এ। তার উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গল গ্রহ এর অভ্যন্তর অংশ নিয়ে গবেষণা করা। গবেষণার অন্যতম বিষয় ছিল কেমনভাবে ভূমিকম্পের সময় কেঁপে ওঠে মঙ্গল গ্রহ এর মাটি, কি দিয়ে গঠিত সেখানকার ভূ-অভ্যন্তরভাগ প্রভৃতি। মঙ্গল যানটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তার অভিযান চালিয়েছিল। এই চার বছর ধরে সে যা তথ্য পাঠিয়েছে, তার ভিত্তিতে নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনেছে মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে। যার অন্যতম হল এই জলের উপস্থিতি।
এর আগে ৫ নভেম্বর ২০১৩ সালে ভারতের ইসরো-ও একটি মঙ্গল যান পাঠিয়েছিল মঙ্গল গ্রহ এর উদ্দেশ্যে। মিশনটির নাম দেওয়া হয়েছিল মার্স অরবিটার মিশন (MOM)। যেটি ইসরোর প্রথম প্রয়াসেই ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে সফলভাবে মঙ্গল গ্রহ এর কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল। এই মিশনেও মঙ্গল গ্রহ এ জলের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিল ইসরো।
রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্য
প্রকাশিত ওই রিপোর্টটি থেকে জানা যাচ্ছে, পৃথিবীতে যেভাবে ভূপৃষ্ঠের জল ভূগর্ভে প্রবেশ করে সঞ্চিত হয়, মঙ্গল গ্রহ এও তেমনভাবে জল সঞ্চিত হয়েছে। তবে এই জল যখন সঞ্চিত হয়েছিল মঙ্গল গ্রহ সেসময় ছিল অনেকটাই উষ্ণ। মঙ্গল গ্রহ এ এই জল সঞ্চিত রয়েছে ভূপৃষ্ঠের প্রায় সাড়ে এগারো থেকে কুড়ি কিলোমিটার অভ্যন্তরে।
পৃথিবীর মতো মঙ্গল গ্রহ এর ভূপৃষ্ঠেও এক সময় জলে পরিপূর্ণ নদী, হ্রদ, মহাসাগর ছিল। যার উপস্থিতি ছিল ৩০০ কোটি বছর আগে। পরে ধীরে ধীরে সেই জল উবে যায়। কিছু জল এখনও ভূগর্ভে সঞ্চিত হয়ে রয়েছে।
মঙ্গল গ্রহ এ জীবনের সম্ভাবনা
জীবন সৃষ্টি ও জীবনকে ধরে রাখতে জল একটি অপরিহার্য উপাদান। পৃথিবীতে জীবনের আবির্ভাবও ঘটেছিল সমুদ্রের জলে। তাই স্বাভাবিকভাবেই মঙ্গল গ্রহ এ জল আবিস্কার সেখানে জীবনের উপস্থিতির দিকেই ইঙ্গিত দেবে। পৃথিবীতেও ভূগর্ভের অনেক নিচে অণু জীবদের বসতি রয়েছে। জলের উপস্থিতির জন্য পাথুরে লাল মঙ্গল গ্রহ এর নিচেও তেমন কোনও অণু জীবদের বসতি রয়েছে কিনা সে বিষয় নিয়েই খতিয়ে দেখছেন এখন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তেমনটি হলে সেখানে বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে বলেই মনে করছেন তাঁরা।