Friday, November 8, 2024

ব্যতিক্রমী দুর্গা : মূর্তি নয়, পুজো করা হয় নবপত্রিকা বাসিনী রূপে

- Advertisement -

বিরুপাক্ষ ছিলেন মা দুর্গা তথা অম্বিকার উপাসক। কিন্তু দীর্ঘদিন সাধনা করার পরেও যখন তিনি অম্বিকার দর্শন লাভ করতে সমর্থ হলেন না, তখন তিনি এর কারণ জানতে চাইলেন দেবীর কাছে। দেবী অম্বিকা তাঁকে অপ্রকটিতভাবে জানালেন, তাঁর গুরু প্রদত্ত মন্ত্র অশুদ্ধ। তিনি তাঁকে শুদ্ধ মন্ত্রটি দান করে তা জপ করার পরামর্শ দিলেন।

দুর্গা

সিউড়ি থেকে স্বল্প দূরত্বে চন্দ্রভাগা নদীর অদূরে রয়েছে সিঙ্গুর গ্রাম। গ্রামটি নেহাতই অখ্যাত। এখানেই এক সময় বাস করতেন মহাসাধক বিরুপাক্ষ দেব। তাঁর সময়কাল সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়নি। তবে মনে করা হয় তিনি পাল যুগের একদম শেষ দিকে অথবা মুসলিম যুগসন্ধিকালে বর্তমান ছিলেন।

বিরুপাক্ষ ছিলেন মা দুর্গা তথা অম্বিকার উপাসক। কিন্তু দীর্ঘদিন সাধনা করার পরেও যখন তিনি অম্বিকার দর্শন লাভ করতে সমর্থ হলেন না, তখন তিনি এর কারণ জানতে চাইলেন দেবীর কাছে। দেবী অম্বিকা তাঁকে অপ্রকটিতভাবে জানালেন, তাঁর গুরু প্রদত্ত মন্ত্র অশুদ্ধ। তিনি তাঁকে শুদ্ধ মন্ত্রটি দান করে তা জপ করার পরামর্শ দিলেন।

এই ঘটনায় বিরুপাক্ষ অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছিলেন। তিনি দেবীকে জানালেন, তাঁর গুরু প্রদত্ত মন্ত্র অশুদ্ধ হলেও তিনি সেই মন্ত্রই জপ করে যাবেন। এতে যদি দেবী তাঁকে দর্শন না দেন, তাতেও তাঁর কিছু এসে যাবে না।

দেবী অম্বিকা তাঁর গুরুভক্তি দেখে অত্যন্ত প্রসন্ন হলেন এবং দর্শন দিয়ে তাঁকে প্রার্থিত বর চাওয়ার জন্য বললেন। এই সময় বিরুপাক্ষ একটি বড় প্রস্তরখণ্ডে বসে জপ করছিলেন। তিনি প্রার্থনা করলেন, যখন যেখানে তিনি জপ শুরু করবেন সেইখানেই যেন দেবী এই প্রস্তরখন্ডটি বয়ে নিয়ে যান। দেবী তার প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন।

- Advertisement -

অতঃপর বিরুপাক্ষ যেখানেই জপের জন্য বসতেন, সেইখানেই দেবী প্রস্তরখন্ডটি বয়ে নিয়ে যেতেন। পরবর্তীকালে বিরুপাক্ষের পুত্র কবীন্দ্র ও তার পরিবার এই গ্রাম ত্যাগ করে দুর্গাপুরের নিকটবর্তী অঞ্চলে চলে যান। কথিত আছে, এই প্রস্তরখন্ডটি থেকেই রাঢ়েশ্বর শিব তৈরি হয়েছিল।

যাইহোক, বিরুপাক্ষ প্রতিষ্ঠিত সেই প্রাচীন পুজো এখনও বর্তমান। কিন্তু বিরুপাক্ষ-র নিষেধ থাকায় এখন আর মূর্তি গড়ে পুজো করা হয় না। পুজো করা হয় নবপত্রিকা বাসিনী দুর্গা -র।

প্রাচীন দুর্গা মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বর্তমান মন্দিরটি ষাটের দশকে নির্মাণ করিয়ে দেন পানুড়িয়া গ্রামের পরলোকগত সমাজসেবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্য প্রয়াত ভোলানাথ মুখোপাধ্যায়। এই মন্দিরটিও বর্তমানে সংস্কার করা হয়েছে। মন্দিরের সংলগ্নে রয়েছে একটি গোপাল মন্দিরও। প্রাচীন মন্দিরটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেখানেও একটি নতুন মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে।

বর্তমানে নিত্যপুজাসহ দুর্গা পুজোটি চালাচ্ছেন বিরুপাক্ষের পরিবারের শ্রীযুক্ত উদয় ভট্টাচার্য্য এবং তাঁদের অন্যান্য শরিকরা। অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে এই পুজো আজও অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর