কার্তিকের এই অমাবস্যার বিশেষ কালী পুজোর দিনে সিদ্ধেশ্বরী মাকে সাজিয়ে তোলা হয় এক নতুন রূপে। এই সময় মন্দির প্রাঙ্গন সেজে ওঠে ফুল ও রংবেরঙের আলোর রোশনায়। তিন দিন ধরে মহাসমারোহে পালিত হয় এই কালী পুজো। এই পুজো এলাকার ধর্মীয় সম্প্রীতিরও বার্তা বয়ে আনে প্রতি বছর। কারণ বিসর্জনের দিন এই সিদ্ধেশ্বরী মাকে নিয়ে মুসলিম অধ্যুষিত পাড়ার মধ্য দিয়ে শোভাযাত্রা করার প্রথা রয়েছে।
বীরভূম জেলার দুবরাজপুর ব্লকের উত্তর-পূর্ব কোণে সদাইপুর থানার অন্তর্গত অতি পরিচিত একটি গ্রাম চিনপাই। সড়ক পথে সিউড়ি-দুবরাজপুর রুট এবং রেলপথে অন্ডাল-সাঁইথিয়া রুটের মধ্যে পড়ছে এই গ্রামটি। ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামটি বেশ কয়েকটি ছোট-বড় প্রাচীন মন্দিরের ঐতিহ্য বহন করে আসছে। এই প্রাচীন মন্দিরগুলিরই অন্যতম ‘সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির’। প্রতিদিন নির্দিষ্ট নিয়ম ও রীতি মেনে এই মন্দিরের ‘সিদ্ধেশ্বরী কালী মা’-এর নিত্যপুজো হলেও, সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এবং প্রতি মাসের অমাবস্যায় এখানে বিশেষ পুজো দেওয়া হয়।
আর কার্তিকের এই অমাবস্যার বিশেষ কালী পুজোর দিনে সিদ্ধেশ্বরী মাকে সাজিয়ে তোলা হয় এক নতুন রূপে। এই সময় মন্দির প্রাঙ্গন সেজে ওঠে ফুল ও রংবেরঙের আলোর রোশনায়। তিন দিন ধরে মহাসমারোহে পালিত হয় এই কালীপুজো। এই পুজো এলাকার ধর্মীয় সম্প্রীতিরও বার্তা বয়ে আনে প্রতি বছর। কারণ বিসর্জনের দিন এই সিদ্ধেশ্বরী মাকে নিয়ে মুসলিম অধ্যুষিত পাড়ার মধ্য দিয়ে শোভাযাত্রা করার প্রথা রয়েছে। সেদিন মুসলিম পাড়ার সকলেই তাদের বাড়ির সম্মুখ অংশ পরিস্কার রাখে বিসর্জনের শোভাযাত্রার জন্য।
চিনপাই গ্রামের এই শতাব্দী প্রাচীন পুজো ও মন্দির নিয়ে প্রচলন রয়েছে একাধিক জনশ্রুতির। শোনা যায়, এলাকাটি এক সময় জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। কোনও এক অবাঙালি সাধু এখানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই ‘সিদ্ধেশ্বরী কালী’ -কে। তাঁর মৃত্যুর পর পাঁচজন প্রধান সেবাইত (আচার্য, মিত্র, চক্রবর্তী, চ্যাটার্জী ও মহাশয়)-এর হাতে জমি ব্যবস্থার মাধ্যমে পুজো চলে আসে।
এই বিরল মূর্তির পুজোর প্রচলন রয়েছে কুরুক্ষেত্রেও। সিদ্ধেশ্বরী মা-এর পা-দুটি অবস্থান করছে অনেকটা পাশাপাশি। তাই এই মা দক্ষিণা বা বামাকালী নয়। মনে করা হয়, এখানে মায়ের শান্ত রূপ পূজিত হয়। পুজোতে পাঁঠা বলির চল রয়েছে। এছাড়াও কৈলিকী বলির প্রচলন থাকলেও অনেকের মানতে এখানে বলি হয় অসংখ্য। কিন্তু এই পুজোয় কোনও সন্ধ্যারতির প্রচলন নেই।
আচার্য পরিবারের সদস্য রবীন্দ্রনাথ আচার্য জানালেন, পুজো উপলক্ষে গ্রামে কয়েক দিনের মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় নবারুণ সংঘের পরিচালনায়। এই সংঘের ব্যাবস্থাপনায় মন্দির প্রাঙ্গন সাজানো, মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রসাদ ও অমৃতভোগ বিতরণ এরকম সবই সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়। মন্দিরের প্রাচীনত্ব, পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং মানুষের আবেগ এক স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করে এখানে।