Sunday, February 16, 2025

বায়ুমণ্ডলীয় নদী ভবিষ্যতে আরও ভয়ঙ্কর আকার নিতে অগ্রসর হচ্ছে

- Advertisement -

বায়ুমণ্ডলীয় নদী! নামটি অদ্ভুত শোনালেও এর প্রকৃত অবস্থান নিয়ে অবশ্য কোনও সন্দেহ নেই। আসলে জল যে শুধু ভূ-পৃষ্ঠের দৃশ্যগত নদী মাধ্যমেই প্রবাহিত হবে এমন কোনও কথা নেই। আকাশ পথেও নদী প্রবাহিত হতে পারে। অন্তত এমনটাই জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। তবে এই বায়ুমণ্ডলীয় নদী নিজে কিন্তু অদৃশ্যই থাকে। সাধারণ চোখে এর অস্তিত্ব বোঝা মুশকিল।

বায়ুমণ্ডলীয় নদী
Image by J Lloa from Pixabay

প্রায় সারা বছর ধরেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকি মাঝে মধ্যে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মরু অঞ্চলগুলি বন্যায় আক্রান্ত হয়ে ওঠে। খুব কম সময়ের বৃষ্টিপাতে এতটাই জোরালো বন্যা দেখা দেয় যে স্থানীয় মানুষদের জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে। এই যেমন সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের ত্রিপুরা বা বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই রকমই এক বন্যায়। শুধু বন্যা নয়, ভূমিধ্বসও দেখা দিয়েছে ওই সমস্ত অঞ্চলে।

এই পরিস্থিতি শুধু ভারত-বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এর আগেও চিন, অস্ট্রেলিয়া, পেরু, চিলি কানাডা, এমনকি মরু অঞ্চল কুয়েত, ইরান, ইরাক, জর্ডানেও সংঘটিত হয়েছে। শুধু বন্যা নয়, সেই সঙ্গে ক্রমাগত হয়ে চলেছে শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত। আবহাওয়াবিদরা লক্ষ করছেন প্রকৃতির এই ভয়াবহ রূপ উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে এবং ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার নেওয়ার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে আবহাওয়াবিদরা ‘বায়ুমণ্ডলীয় নদী’ –র অতি বেশি সক্রিয়তাকে মনে করছেন।

বায়ুমণ্ডলীয় নদী! নামটি অদ্ভুত শোনালেও এর প্রকৃত অবস্থান নিয়ে অবশ্য কোনও সন্দেহ নেই। আসলে জল যে শুধু ভূ-পৃষ্ঠের দৃশ্যগত নদী মাধ্যমেই প্রবাহিত হবে এমন কোনও কথা নেই। আকাশ পথেও নদী প্রবাহিত হতে পারে। অন্তত এমনটাই জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। তবে এই বায়ুমণ্ডলীয় নদী নিজে কিন্তু অদৃশ্যই থাকে। সাধারণ চোখে এর অস্তিত্ব বোঝা মুশকিল।

আসলে আবহাওয়াবিদদের কথায়, বায়ুমণ্ডলীয় নদী হল বায়ুমণ্ডলে ঘনীভূত জলীয়বাষ্প বা আর্দ্রতার একটি সরু চ্যানেল। পৃথিবীতে বায়ুপ্রবাহের সীমানা বরাবরই এর অবস্থান। এই নদীগুলি সাধারণত ২ হাজার কিলোমিটার বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে ৫ কিলোমিটার বা তারও বেশি দীর্ঘ হয়ে থাকে। প্রস্থে হতে পারে ২০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। এবং এর গভীরতা প্রায় ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

- Advertisement -

বায়ুমণ্ডলীয় নদী গুলির জলীয়বাষ্প বা জলধারণ ক্ষমতাও যে কাউকে অবাক করে দেবে। এই ধরণের কোনও কোনও নদী পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা জল প্রবাহিত নদী অ্যামাজনের মোট জল ধারণের দ্বিগুণ ক্ষমতারও অধিকারী হয়ে উঠতে পারে।

তবে এই বায়ুমণ্ডলীয় নদী খালি চোখে কখনওই দেখা সম্ভব নয়। মেঘের পুঞ্জিভূত স্তূপ হিসেবেই মানুষের চোখে ধরা দিয়ে থাকে। আবহাওয়াবিদদের দাবি, একমাত্র ইনফ্রায়েড ও মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমেই এর অস্তিত্ব বোঝা সম্ভব। তাই স্যাটেলাইট মাধ্যমে আবহাওয়াবিদরা এর উপর নজর রাখেন সব সময়।

শক্তি ও আকারের উপর নির্ভর করে এই নদীগুলিকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর স্থায়িত্বকালও ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ধরা হয়। তবে ক্রমশই ভয়ঙ্কর হচ্ছে এই বায়ুমণ্ডলীয় নদী গুলি। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, কোনও কোনও বায়ুমণ্ডলীয় নদী আরও বেশি দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছে। যার ফলে খুবই কম সময়ের মধ্যে অতি মাত্রায় বৃষ্টি হয়ে সৃষ্টি করছে ভয়াবহ বন্যার। সেই সঙ্গে অতিমাত্রায় বাড়ছে বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি। বাড়ছে ভূমিধ্বসের মতো ঘটনা।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ১৯৪০ সালের পর আরও বেশি করে নতুন নতুন বায়ুমণ্ডলীয় নদী সৃষ্টি হয়েছে। আর ১৯৬০ সালের পর এই নদীগুলিতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।

কেন এই ভয়াবহ পরিস্থিতি বায়ুমণ্ডলীয় নদী গুলির? এর অন্যতম কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা দায়ী করছেন ভূ-পৃষ্ঠের উত্তরোত্তর তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে। বিশেষ করে মহাসাগরগুলির জল কম সময়ের মধ্যে এতটাই উষ্ণ হয়ে উঠছে অতি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে জমা হচ্ছে বায়ুমণ্ডলীয় নদী গুলিতে। যার ফলে কম সময়ে অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত ঘটতে দেখা যাচ্ছে। আর তার থেকে সৃষ্টি হওয়া বন্যার রূপ হয়ে উঠছে আরও ভয়ঙ্কর।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর