Monday, December 9, 2024

বাঙালিরা রান্নাপুজো কেন করে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন?

- Advertisement -

আসলে রান্নাপুজো –র সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মা মনসার আরাধনাও। এদিন মা মনসাকেও বিশেষভাবে স্মরণ করে বাঙালিরা। এমনিতেই বর্ষাকালে গ্রাম-বাংলায় সাপের উপদ্রব বাড়ে অন্য সময়ের চেয়ে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা সাপের হাতে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি। তাই তারা স্বাভাবিকভাবেই সর্পদেবী মা মনসার শরণাপন্ন হয় এই সময়ে।

রান্নাপুজো
Image by Wikimedia Commons

সমগ্র বাংলা জুড়ে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলগুলিতে বছরে দু’বার অরন্ধন উৎসব পালন করা হয়। দেখা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের তুলনায় দক্ষিণবঙ্গেই এই উৎসবের প্রচলন বেশি। একবার ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে, আর একবার মাঘ মাসের শুক্লা ষষ্ঠী বা সরস্বতী পুজোর পরের দিন বিশেষ আড়ম্বরের সঙ্গে এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা আবার এই উৎসবকে রান্নাপুজো –ও বলে থাকে।

ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন স্থির করা হয়েছে হিন্দুশাস্ত্রে। সৃষ্টি ও শিল্পের এই দেবতাকে এই দিনেই বিশেষ আড়ম্বরের সঙ্গে আরাধনা করা হয়। ঠিক এর পরের দিনই শুরু হয় আশ্বিন মাস। অর্থাৎ মা দুর্গার আগমনের মাস। হিন্দু শাস্ত্রানুযায়ী মহালয়ার দিন থেকেই শুরু হয় মাতৃপক্ষ। তাই আশ্বিনের প্রথম থেকে দুর্গা পুজো পর্যন্ত অন্য কোনও দেবতার পুজো করা হয় না। অর্থাৎ সেদিক থেকে দেখলে বিশ্বকর্মা পুজো-ই হল পিতৃপক্ষের শেষ পুজো।

আর এই দিনেই হয়ে থাকে অরন্ধন উৎসব বা রান্নাপুজো। অর্থাৎ এই দিনে বাঙালিরা কোনওভাবেই উনুন জ্বালাবে না। আগের দিনের জলে ভিজিয়ে রাখা রান্না করা খাবার খাবে পরের দিন অর্থাৎ ভাদ্র সংক্রান্তিতে। আশ্বিনের শুরুতে আবার নতুন করে উনুন জ্বালিয়ে শুরু হবে রান্না।

আসলে রান্নাপুজো –র সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মা মনসার আরাধনাও। এদিন মা মনসাকেও বিশেষভাবে স্মরণ করে বাঙালিরা। এমনিতেই বর্ষাকালে গ্রাম-বাংলায় সাপের উপদ্রব বাড়ে অন্য সময়ের চেয়ে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা সাপের হাতে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি। তাই তারা স্বাভাবিকভাবেই সর্পদেবী মা মনসার শরণাপন্ন হয় এই সময়ে। খাতায়-কলমে বর্ষাকাল শ্রাবণ মাস পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলেও ভাদ্র-আশ্বিনেও বর্ষার রুদ্ররূপ থাকে। তাই আশ্বিনের আগে ভাদ্রের সংক্রান্তিতে গ্রাম-বাংলার মানুষেরা শেষবারের জন্য মা মনসার আরাধনা করে।

- Advertisement -

এদিন প্রতি বাড়িতে রান্না বন্ধ রাখা হয়। হয় রান্নাপুজো। আগের দিনের রান্না করা খাবার খাওয়া হয় এদিন। এই রান্নারও বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন সূর্য ডোবার পর ও সূর্য ওঠার আগে রান্না সম্পূর্ণ করতে হয়। রান্নায় পেয়াজ-রসুন কোনওভাবেই ব্যবহার করা চলে না। সামর্থ্য অনুযায়ী যে যেমন খুশি বিভিন্ন ধরণের পদ রান্না করে থাকে। অনেকে ইলিশ ও চিংড়িকে বেশি প্রাধান্য দেয় এই উৎসবে। এরপর এই খাবার জলে ভিজিয়ে তুলে রাখা হয়।

পরের দিন অর্থাৎ ভাদ্র সংক্রান্তিতে প্রথমে উনুন পুজো হয়। উনুনের পাশে অনেকে মা মনসার মূর্তি প্রতিস্থাপন করে। অনেকে আবার মা মনসার প্রতীক হিসেবে ফণীমনসার ডাল ও শাপলা ফুল দিয়ে ঘট সাজিয়ে প্রতিস্থাপন করে। প্রসাদ হিসেবে অর্পণ করা হয় আগের দিনের রান্না করা জলে ভিজানো ঠাণ্ডা খাবার। প্রচলিত কথা অনুযায়ী, সাপ গরম খাবার খেতে পারে না। তাই ঠাণ্ডা খাবার উৎসর্গ করা হয় এখানে। এরপর ওই দিন আর হাড়ি চড়ানো হয় না উনুনে।

তবে সময় বদলে দিয়েছে অনেক কিছু। রান্নাপুজো -র চলও এখন অনেকটাই কম। আধুনিক সভ্যতার কাছে এই উৎসব যেন অনেকটাই বেমানান এখন। অতীতে যেমন বছরে দু’বার রান্নাপুজো -র চল ছিল। এখন এলাকা ভেদে একবারই পালন করা হয় এই উৎসব। লক্ষ্য করে দেখা গিয়েছে বাংলার পূর্বাঞ্চলের বাঙালিরাই এখন সবচেয়ে বেশি ভাদ্রের সংক্রান্তিতে রান্নাপুজো চালু রেখেছে। পশ্চিমাঞ্চলের বাঙালিরা ধরে রেখেছে মাঘের শুক্লা ষষ্ঠীর রান্নাপুজো -কে।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর