একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ-সবল মানুষের শরীরে প্রতিদিন গড়ে ০.৫ থেকে ২.৫ লিটার প্রসাব তৈরি হতে পারে। রেচন পদার্থগুলি জলের সঙ্গে দ্রবীভূত হয়ে প্রথমে সাময়িক মূত্রাশয়ে সঞ্চিত হয়। পরে মূত্রনালির মাধ্যমে প্রসাব আকারে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এই প্রসাব এ ৯০-৯৭ শতাংশ থাকে জল।
শরীরে প্রতি মুহূর্তে জমা হয় বিভিন্ন দূষিত বা রেচন পদার্থ। এই পদার্থগুলি জৈব অজৈব দুই-ই হতে পারে। এগুলি শরীরে কোনও প্রয়োজনে লাগে না। বরং ক্ষতিই করে বেশি। তাই শরীর সব সময়ই চায়বে এই ক্ষতিকর পদার্থগুলিকে সম্পূর্ণভাবে বের করে দিতে। আমাদের শরীরের বর্জ্য পদার্থ যেমন মল আকারে বেরিয়ে যায়, ঠিক তেমনি রেচন পদার্থগুলি প্রসাব এর মাধ্যমে শরীর থেকে বিহিস্কৃত হয়।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ-সবল মানুষের শরীরে প্রতিদিন গড়ে ০.৫ থেকে ২.৫ লিটার প্রসাব তৈরি হতে পারে। রেচন পদার্থগুলি জলের সঙ্গে দ্রবীভূত হয়ে প্রথমে সাময়িক মূত্রাশয়ে সঞ্চিত হয়। পরে মূত্রনালির মাধ্যমে প্রসাব আকারে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এই প্রসাব এ ৯০-৯৭ শতাংশ থাকে জল। বাকিটা থাকে দ্রবীভূত বিভিন্ন জৈব (ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, হিপপিউনিক অ্যাসিড, ক্রিয়েটিনিন, কিটোনবডি) ও অজৈব (সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, অ্যামোনিয়া, ম্যাগনেসিয়াম, ক্লোরাইড) পদার্থ।
স্বাভাবিক অবস্থায় প্রস্রাব হয় ঝাঁঝালো গন্ধ (ইউরিনোড এর উপস্থিতির জন্য) যুক্ত প্রায় বর্ণহীন বা হালকা হলুদ বর্ণের। কিন্তু কখনও সখনও প্রস্রাব এর রঙ অস্বাভাবিকও হতে পারে। তখন ধরে নেওয়া হয় কোনও একটি রোগ তার শরীরে বাসা বেঁধেছে। কারণ অস্বাভাবিক রঙ মানেই শরীর থেকে কোনও কিছু অধিক পরিমাণে প্রস্রাব এর মাধ্যমে বেরিয়ে যাচ্ছে। এটি মোটেও ভাল লক্ষণ নয়। এই অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
তবে প্রস্রাব এর রঙ দেখে রোগের লক্ষণ কিছুটা আন্দাজ করা সম্ভব। বিবিসি সংবাদ মাধ্যমে সম্প্রতি এই রকমই একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
আগেই বলা হয়েছে প্রস্রাব এর রঙ প্রায় বর্ণহীন বা হালকা হলুদ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু গাঢ় হলুদ হওয়া মানেই শরীরে জলের পরিমাণ কমে যাওয়ার লক্ষণ। কম পরিমাণে জল পান করলে বা অতিরিক্ত ঘাম হলে প্রস্রাব এর রঙ গাঢ় হলুদ হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থায় অতিরিক্ত জল পান করা প্রয়োজন। তবে জণ্ডিস রোগের কারণেও প্রস্রাব এর রঙ গাঢ় হলুদ হয়ে থাকে।
প্রস্রাব এর রঙ যদি লাল হয়, তবে বুঝতে হবে রক্ত মিশে রয়েছে। ক্যানসার, কিডনিতে পাথর বা মূত্রনালিতে সংক্রমণ ঘটলে রক্তপাতের ফলে প্রস্রাব এ রক্ত মিশতে পারে। এই অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
অনেক সময় পিত্তথলিতে পাথর বা ক্যানসারের কারণে পিত্তনালী বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন বিলিরুবিন প্রস্রাব এর মাধ্যমে নির্গত হয়। এমনটি হলে প্রস্রাব এর রঙ হয়ে যেতে পারে কমলা বা বাদামি। তবে নিয়মিত কিছু প্রকারের ওষুধ সেবনেও প্রস্রাব কমলা রঙের হতে পারে।
অনেক সময় প্রস্রাব এর রঙ সবুজ বা নীলও হয়ে যেতে পারে। তবে এটি বিরল ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে বুঝতে হবে খাবারে অধিক পরিমাণে সবুজ বা নীল রঙ মেশানো হয়েছে। তবে সিউডোমোনাশ অ্যারুগিনোসা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলেও প্রস্রাব এর রঙ হয়ে যেতে পারে সবুজ বা নীল। এই অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
এছাড়াও পোরফাইরিয়া বা পার্পল ইউরিন ব্যাগ সিনড্রোম রোগে আক্রান্ত হলে প্রস্রাব এর রঙ হতে পারে বেগুনী। এই অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। আবার অনেক সময় বিটরুট খাওয়ার জন্যেও গোলাপি হতে পারে প্রস্রাব এর রঙ।
তবে সবশেষে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, প্রস্রাব এর রঙ অস্বাভাবিক হলে বা প্রস্রাব এর সময় কোনও রকম অসুবিধা ঘটলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সঠিক কারণটি একমাত্র চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন। এবং সেই সঙ্গে তারা উপযুক্ত পরামর্শ দিতে পারবেন।