পট শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ পট্র থেকে। যার অর্থ কাপড়। অন্যান্য পটের মতই পটের দুর্গা -ও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই পটের দুর্গা আজও লোকসংস্কৃতি ও কৃষ্টির অন্যতম বাহক। বীরভূম জেলার অন্যতম এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যও একে বলা যেতে পারে। এই জেলায় কম-বেশি ৫০টিরও বেশি দুর্গা পুজো হতে দেখা যায় পটের দুর্গা -কে সামনে রেখে।
দেবী দুর্গা-কে যে শুধু খড়-মাটি দিয়েই তৈরি করা হয়, তা কিন্তু নয়। কাপড়ের ক্যানভাসে মাটির প্রলেপ টেনে তার উপর রঙ-তুলিতে ফুটিয়ে তোলা হয় দুর্গার অবয়ব। আর একেই বলা হয় পটের দুর্গা। পটের দুর্গা -ও কিন্তু বেশ প্রাচীন। তবে বীরভূম জেলাতেই এই পটের দুর্গা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
পট শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ পট্র থেকে। যার অর্থ কাপড়। অন্যান্য পটের মতই পটের দুর্গা -ও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই পটের দুর্গা আজও লোকসংস্কৃতি ও কৃষ্টির অন্যতম বাহক। বীরভূম জেলার অন্যতম এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যও একে বলা যেতে পারে। এই জেলায় কম-বেশি ৫০টিরও বেশি দুর্গা পুজো হতে দেখা যায় পটের দুর্গা -কে সামনে রেখে।
বীরভূম বরাবরই একটি দরিদ্র জেলা। এককালে বারবার বর্গী আক্রমনের শিকার হয়েছে এই জেলা। তার উপর ভাদ্র-আশ্বিনে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলি প্লাবিত হয়েছে বহুবার। তাই খড়-মাটির মূর্তি পুজোর বদলে পটের অঙ্কিত মূর্তিকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে এই জেলার গ্রাম-বাংলার হত-দরিদ্র মানুষগুলি। এছাড়াও পটের অঙ্কিত মূর্তিকে খুব সহজেই বহন করা সম্ভব। নির্মাণের খরচও অনেক কম। তবে খড়-মাটির নির্মিত দুর্গার জনপ্রিয়তায় এখন অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছে এই পটের দুর্গা। সংখ্যাও এখন প্রায় হাতেগোনা।
খড়-মাটির দুর্গার মতো পটের দুর্গা নির্মাণেও শিল্পীদের যথেষ্ট পারদর্শী হতে হয়। বেশ কয়েকটি ধাপে তাঁরা এই দুর্গা নির্মাণ করেন। প্রথমে দুর্গার কাঠামো বাঁধা হয়। অপরদিকে একটি সাদা সুতি কাপড় বা থানকে কাদা ও গোবর মিশ্রিত পাত্রে কিছুক্ষণ চুবিয়ে রাখা হয়। তারপর সেই কাদা ও গোবর মিশ্রিত কাপড়কে কাঠামোর ওপর বিছিয়ে ক্যানভাস তৈরি করা হয়। রোদে শোকানোর পর সেই ক্যানভাসের উপর খড়ি দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় পেনসিলের কারসাজি। ফুটিয়ে তোলা হয় দেবীর প্রথম পেনসিল স্কেচ। তারপর আসে রঙ-তুলির কাজ। ঠিক যেমনভাবে শিল্পীরা ক্যানভাসের ওপর নিজের শিল্পকলা প্রদর্শন করে। এখানেও তেমনিভাবে ফুটিয়ে তোলা হয় মা দুর্গার পূর্ণ অবয়ব। অলংকরণও বাদ যায় না এখানে।
দোনাইপুরের চক্রবর্তী পরিবার
বীরভূমে যে কয়েকটি পটের দুর্গার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম দোনাইপুর গ্রামের পটের দুর্গা। কুঁয়ে নদীর গাঁ ঘেঁষা এই বর্ধিষ্ণু গ্রামটি বরাবরই কালী পুজোর জন্য পরিচিত। তবে ৩২৭ বছর ধরে এই গ্রামের চক্রবর্তী পরিবার পটের দুর্গা পুজো করে আসছে। ১১০০ বঙ্গাব্দে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল। তখন নবপত্রিকায় পুজো হতো। ১১১৫ বঙ্গাব্দে প্রথম পটপুজো প্রতিষ্ঠা করেন এই পরিবারের সদস্য সারদাপ্রসাদ চক্রবর্তী।
সারদাপ্রসাদ চক্রবর্তী আবাডাঙা গ্রামের পটপুজো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের গ্রামে এই পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে ষষ্ঠ প্রজন্মে পড়ল এই পুজো। আগে দুর্গাপট আঁকতেন দাঁড়কা গ্রামের যতীন পটুয়া। এখন পট আঁকেন আবাডাঙা গ্রামের জগন্নাথ কুন্ডু ও অনাথবন্ধু কুন্ডু।
আবাডাঙার ব্যানার্জি পরিবার
দোনাইপুর গ্রামের পটপুজো শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই আবাডাঙা গ্রামে পটের দুর্গা পূজিত হয়ে আসছে। মূয়রাক্ষী নদীর তীরবর্তী এই গ্রামটিতে অধিকাংশই তাঁতি সম্প্রদায়ের বসবাস। এখানকার পট পুজো প্রায় ৩৫০ বছরেরও বেশি প্রাচীন।
ব্যানার্জি পরিবারের সদস্য সুভ্রাংশু ব্যানার্জি জানালেন, তাঁদের বংশের কোনও পূর্বপুরুষ দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে মাটির প্রতিমা পুজো শুরু করেন। কিন্তু পরের বছর বিসর্জনের সময় গনেশের কড়ে আঙুল ভেঙে যায়। তিনি আবার দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান, দেবীকে পট প্রতিস্থাপন করেই পুজো দিতে হবে। তখন থেকেই এই পটপুজোর সূচনা। এখানেও পট অঙ্কন করেন শিল্পী জগন্নাথ কুণ্ডু ও অনাথবন্ধু কুণ্ডু। এই ব্যানার্জি পরিবারের পটপুজোর বিশেষ আকর্ষণ ‘কুমারী পুজো’। একটি কম বয়সী মেয়েকে দেবী সাজিয়ে কুমারী পুজোর রীতি রয়েছে এখানে।