Monday, December 9, 2024

দেবসেনাপতি কার্তিক বিবাহিত না অবিবাহিত?

- Advertisement -

পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, উল্লেখ রয়েছে দেবসেনাপতি কার্তিক দেবসেনা ও বল্লী নামে দুই কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। দেবসেনা ছিলেন দেবরাজ ইন্দ্রের নিজের মেয়ে। একবার ভয়ানক যুদ্ধে অসুর রাজ সুরাপদ্মন-কে পরাস্ত ও বধ করেছিলেন কার্তিক। তখন খুশি হয়ে নিজের মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দেন ইন্দ্রদেব। বল্লী ছিলেন নম্বীরাজের মেয়ে। তবে অন্য পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী কার্তিক হলেন চিরকুমার। আর এই ধারণা-ই বঙ্গদেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত।

কার্তিক

বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী, কার্তিক মাসের শেষ তারিখ বা কার্তিক সংক্রান্তিতে কার্তিক পুজোর আয়োজন করা হয়। বঙ্গদেশে এই দেবতার পুজো করা হয় পুত্র সন্তান কামনায় অথবা সন্তান বড় না হওয়া পর্যন্ত তাকে সমস্ত রকম বিপদ থেকে রক্ষা করার আশায়। আর সে জন্যেই বিবাহিত দম্পতি, যারা এখনও সন্তানের পিতা-মাতা হতে পারেননি অথবা সদস্য পিতা-মাতা হতে পেরেছেন, সাধারণত তারাই কার্তিক সংক্রান্তিকে দেবসেনাপতির পুজোর আয়োজন করে থাকেন।

শুধু বঙ্গদেশ নয়, সমগ্র ভারত বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে বেশ ঝাঁক-জমকের সঙ্গে কার্তিক পুজোর আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ ভারতে কার্তিক -কে ‘মুরগন’ বলা হয়ে থাকে। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, দেবসেনাপতির পদ পাওয়ার পর একবার মহাদেবের নির্দেশে কার্তিক দক্ষিণ ভারত অভিযান করেছিলেন। এই অঞ্চলের অধিবাসীরা সেসময় অসুরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। এরপর দেবসেনাপতি কার্তিক -এর বিক্রমে সমগ্র দক্ষিণ ভারত অসুর মুক্ত হয়ে যায়। অধিবাসীরা তখন কার্তিক-কে ‘মুরগন’ নামে অভিহিত করেন। তামিল ভাষায় ‘মুরগন’ কথার অর্থ ‘রক্ষাকর্তা’।

বঙ্গদেশে সদ্য বিবাহিতদের আরাধ্য দেবতা এই কার্তিক। কিন্তু দেবসেনাপতি নিজে কি বিবাহিত না চিরকুমার? এব্যাপারে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী দুই রকম মত রয়েছে। কোথাও উল্লেখ রয়েছে কার্তিক বিবাহিত এবং তার দুই জন স্ত্রী রয়েছে। আবার কোথাও উল্লেখ পাওয়া যায়, কার্তিক কখনও বিয়েই করেননি।

পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, তারকাসুরকে বধ করার জন্য কার্তিকের জন্ম হয়েছিল। মহাদেবের বরে অসুর রাজ তারকাসুর তখন অজেয়। দেবতাদের উপর বারংবার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। শিবের বর অনুসারে তাকে রুখতে ও বধ করতে পারবে একমাত্র শিব পুত্র। তখন পরম পূজ্য শিব ও আদিশক্তি পার্বতী যোগ বলে এক অগ্নিকুণ্ডের জন্ম দিয়েছিলেন। অগ্নিকুণ্ডের জন্মের পরও কিছু সময়ের জন্য শিব ও পার্বতী যোগাসনে বিলীন ছিলেন। তখন তারকাসুরের হাত থেকে রক্ষা করার অভিপ্রায়ে দেবরাজ ইন্দ্রের কথা মতো অগ্নিদেব অগ্নিকুণ্ডটি চুরি করে পালিয়ে যান।

- Advertisement -

কিন্তু অগ্নিকুণ্ডের অসীম তাপশক্তি অগ্নিদেবও সহ্য করতে পারেননি। তিনি গঙ্গাগর্ভে অগ্নিকুণ্ডটি নিক্ষেপ করেন। পরে সেটি শরবনে এসে উপস্থিত হয় এবং পুত্র সন্তানে রূপান্তরিত হয়। সেখানে বসবাসরত কৃতিকারা এই পুত্র সন্তানকে নিজেদের পুত্র মেনে লালন-পালন করতে থাকেন। কৃতিকাদের কাছে পালিত হওয়ার জন্যই তার নাম হয় কার্তিক। পরে শিব-পার্বতী সেখান থেকে কৈলাসে তাকে নিয়ে আসেন। এই কার্তিকের হাতেই অবশেষে মৃত্যু হয় অসুর রাজ তারকাসুর। তারপর তাকে দেবাসেনাপতি ঘোষিত করা হয়।

পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, উল্লেখ রয়েছে কার্তিক দেবসেনা ও বল্লী নামে দুই কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। দেবসেনা ছিলেন দেবরাজ ইন্দ্রের নিজের মেয়ে। একবার ভয়ানক যুদ্ধে অসুর রাজ সুরাপদ্মন-কে পরাস্ত ও বধ করেছিলেন কার্তিক। তখন খুশি হয়ে নিজের মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দেন ইন্দ্রদেব। বল্লী ছিলেন নম্বীরাজের মেয়ে।

তবে অন্য পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, কার্তিক হলেন চিরকুমার। আর এই ধারণা-ই বঙ্গদেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। একবার অসুরদের পরাজিত করে তিনি যখন কৈলাসে ফিরছিলেন, তখন পথে এক সুন্দরী কন্যার সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। তার নাম ছিল ঊষা। দুজনেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কার্তিক বিবাহের পূর্বে মায়ের সম্মতির প্রয়োজন অনুভব করেন। তখন ঊষা-কে কৈলাসের বাইরে অপেক্ষায় রেখে তিনি মায়ের সম্মতি চাইতে গেলেন। মা পার্বতী সম্মতি দিলে তিনি ঊষা-কে আনতে চাইলেন। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর তার মনে হল, তিনি মাকে প্রণাম করেননি। পরে প্রণাম করতে যাওয়ার সময় তিনি দেখতে পান, মা বিশাল আয়োজন সহকারে আহার করতে বসেছেন। মাকে এর আগে তিনি এক সঙ্গে এতটা পরিমাণ আহার করতে দেখেননি। তখন এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে পার্বতী জানান, পুত্রবধূ যদি খেতে না দেয়, তাই তিনি খাওয়া সেরে রাখছেন। এই ঘটনায় কার্তিক দুঃখ পেয়ে আর বিয়ে করেননি।

যাইহোক, দেবসেনাপতি কার্তিক বিবাহিত না অবিবাহিত এই প্রশ্ন চলতে থাকবে যুগের পর যুগ ধরে। তার চেয়ে বরং বাঁশবেড়িয়া, চুঁচুড়া বা কাটোয়ার কার্তিক লড়াইয়ে মেতে ওঠা যাক। কাটোয়া দীর্ঘদিন ধরেই কার্তিক পুজোর জন্য বিখ্যাত। এখানে মন্দির বা প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে চলে কার্তিক পুজোর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তাই স্থানীয়রা একে ‘কার্তিক লড়াই’ বলেছেন।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর