এমনিতেই অন্যান্য মাছের তুলনায় তেলাপিয়া মাছের বংশবৃদ্ধি অনেকটাই বেশি। বেশ কয়েক প্রজাতির তেলাপিয়া মাছের চাষ করা হয় দক্ষিণ এশিয়ায়। এই মাছ সাধারণত গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে আমদানি করা হয়েছিল। সেসময়ে আমদানির মূল উদ্দেশ্য ছিল মশা ও ম্যালেরিয়া দমন।

তেলাপিয়া অত্যন্ত নিরীহ একটি মাছ, তাতে সন্দেহ থাকার কোনও কারণ নেই। মাছের বাজারও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে এই মাছ। অনেক সময় যেখানে রুই, কাতলা, মৃগেলের মতো দেশি মাছ বাজারে আগুন ধরিয়ে রাখে, নিম্ন মধ্যবিত্তের কাছে তখন তেলাপিয়া যথেষ্ট রুচির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তেলাপিয়া মাছের বাজারদর সাধারণত বিশেষ কোনও কারণ ছাড়া কখনওই ঊর্ধ্বমুখী হতে দেখা যায় না।
যাইহোক, এবার সেই তেলাপিয়া মাছের আগ্রাসনে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে থাইল্যান্ড সরকারকে। দেশটির প্রায় ১৭টি প্রদেশ জুড়ে এই মাছের সম্প্রতি এতটাই বাড়বাড়ন্ত, প্রায় যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এখানে। জনসাধারণকে ব্যাপক পরিমাণে তেলাপিয়া মাছ শিকারের অনুরোধ জানিয়েছে সরকার। এমনকি পুস্কার সরূপ সরকারিভাবে কেজি প্রতি ১৫ বাথ (থাইল্যান্ডের টাকা) দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।
এমনিতেই অন্যান্য মাছের তুলনায় তেলাপিয়া মাছের বংশবৃদ্ধি অনেকটাই বেশি। বেশ কয়েক প্রজাতির তেলাপিয়া মাছের চাষ করা হয় দক্ষিণ এশিয়ায়। এই মাছ সাধারণত গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে আমদানি করা হয়েছিল। সেসময়ে আমদানির মূল উদ্দেশ্য ছিল মশা ও ম্যালেরিয়া দমন। কারণ তেলাপিয়া বিভিন্ন পোকামাকড়ের লার্ভা সহ নোংরা-আবর্জনা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে।
এই প্রাজাতির মাছের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, স্ত্রী মাছেরা বছরে ৩ থেকে ৪ বার ডিম পেড়ে থাকে। তাই খুবই কম সময়ের মধ্যে এদের বংশবৃদ্ধি ঘটতে দেখা যায়। এছাড়াও এদের দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটার অন্যতম কারণ, অন্যান্য মাছ যেখানে ডিম পাড়ার পর দায়িত্ব থেকে তখনই নিজেদের মুক্ত করে নিতে পারে, তেলাপিয়া তেমনটি করে না। তারা ডিমগুলি মুখে নিয়ে বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকে। তাই এদের ডিম খুবই কম নষ্ট হয়।
তেলাপিয়া যেহেতু নোংরা-আবর্জনা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে, তাই এই মাছ চাষে বিশেষ কোনও অতিরিক্ত খরচ করতে হয় না মৎস্য চাষিদের। এদের বংশবৃদ্ধিও অত্যন্ত বেশি। তাই ভারত, বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে প্রচুর পরিমাণে তেলাপিয়া মাছের চাষ করা হয়। বাজারে আমদানি বেশি হওয়ায় বাজার মূল্যও যথেষ্ট কম থাকে এই মাছের।
কিন্তু সম্প্রতি সমস্যায় পড়েছে থাইল্যান্ড সরকার। বিবিসি সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, ‘ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়া’ (বুকের কাছে কালো দাগ) নামের একটি বিশেষ প্রজাতির তেলাপিয়া অত্যন্ত বংশবৃদ্ধি ঘটাচ্ছে এই দেশের অন্তত ১৭টি প্রদেশে। তাতে অন্যান্য ছোট মাছ, শামুকের লার্ভা বা চিংড়ির জন্য বিপদ ডেকে আনছে। যেগুলিকে এই দেশের জলজ সম্পদ বলে বিবেচনা করা হয়। থাইল্যান্ড সরকার আশঙ্কা করছে, ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা গেলে প্রায় ১ হাজার কোটি বাথ ক্ষতি হতে পারে অর্থনীতি ব্যবস্থায়।
ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়া কীভাবে ছড়িয়ে পড়ল এই দেশে, সেবিষয়েও তদন্ত করছে একাধিক সংস্থা। অনেকেই ধারণা করছে, ২০১০ সাল নাগাদ থাইল্যান্ডের চারোয়েন পোকফান্ড ফুড নামের একটি পশুখাদ্য তৈরি প্রতিষ্ঠান সমীক্ষার জন্য ঘানা থেকে কিছু ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়া আমদানি করেছিল। কোনওভাবে সেই মাছ ছড়িয়ে পড়ায় এই বিপত্তি তৈরি হয়েছে দেশটিতে। যদিও এই বিষয়ে কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
অনেকেই আবার ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়া মাছের জিন পরিবর্তন করে বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষে কথা বলেছেন। যেখানে মাছ জন্ম নেবে কিন্তু তাদের ডিম পাড়ার কোনও ক্ষমতা থাকবে না। কিন্তু এটি সময় সাপেক্ষ পদক্ষেপ বলেই অনেকে মনে করছেন। আবার অনেকেই এই পদ্ধতিতে ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়া মাছের বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, বলেও মত প্রকাশ করেছেন। কারণ এই প্রজাতির মাছের বংশবৃদ্ধি এতটাই দ্রুত, একে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব বললেই চলে।
কিন্তু অন্য কোনও উপায় না দেখে নির্বিচারে ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়া মাছ শিকারের পথ নিয়েছে থাইল্যান্ড সরকার। জনসাধারণকে এবিষয়ে অনুরোধও করেছে প্রশাসন। এমনকি মৎস্য শিকারের পুরস্কার হিসেবে কেজি প্রতি ১৫ বাথ দেওয়ার ঘোষণা করেছে সরকার।