অধিকাংশ নেকড়ে কখনও একই স্থানে থাকতে পছন্দ করে না। শিকারের সন্ধানে এরা বারংবার স্থান পরিবর্তন করে। যা নেকড়ে মাইগ্রেশন নামে পরিচিত। এবিষয়ে তুন্দ্রা বা বরফ অঞ্চলের নেকড়ে দের মাইগ্রেশন যথেষ্ট অবাক করে দেবে সবাইকে। তারা একটি বিশেষ পদ্ধতি মেনে এই মাইগ্রেশন করে থাকে।
নেকড়ে বা নেকড়ে বাঘের প্রসঙ্গ উঠলে, সবার প্রথমে ‘দ্য জঙ্গল বুক’ এর কথা মনে পড়ে যায়। ১৮৯৪ সাল নাগাদ প্রকাশিত রুডইয়ার্ড কিপ্লিং এর লেখা এই গল্প সঙ্কলনটি এখনও কিশোর-কিশোরীদের কাছে সমান জনপ্রিয়। বহুবার বহু ভাষাতে তাঁর এই বইটি অনুবাদ করা হয়েছে। হয়েছে একাধিক সিরিয়াল ও সিনেমাও।
নিজে একজন ইংরেজ হয়েও রুডইয়ার্ড কিপ্লিং তাঁর এই ‘দ্য জঙ্গল বুক’ গল্প সঙ্কলনটিতে সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় জঙ্গলের পরিবেশকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বইটির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মোগলি নামের একটি ভারতীয় বালক। যে কিনা লোমহর্ষকভাবে একটি নেকড়ে র দলে চলে আসে। পরে এই দলটিই হয় তার পরিবার। এখানে নেকড়ে র দল সম্পর্কে রুডইয়ার্ড কিপ্লিং নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছে। যদিও অনেক কিছুই ছিল তাঁর কল্পনাপ্রসূত। মোগলি মুভি বা সিরিয়াল দেখে তাই ছোট থেকেই যে কেউ নেকড়ে সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে।
যাইহোক, নেকড়ে বা নেকড়ে বাঘ আসলে ক্যানিডে পরিবারের সবচেয়ে বড় সদস্য। এই পরিবারের অন্য সদস্য হল শিয়াল ও কুকুর। বাহ্যিকভাবে এই তিনটি প্রাণীকে প্রায় একই রকম দেখতে মনে হলেও এদের মধ্যে রয়েছে বিস্তর তফাৎ। প্রায় তিন লক্ষ বছর আগে নেকড়ে আবির্ভূত হয়েছিল পৃথিবীতে। তুষার যুগেও এরা টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল নিজেদের। বর্তমানে সমস্ত উত্তর গোলার্ধ জুড়েই এদের এখন আবাস্থল। তবে সমগ্র বিশ্বে এদের সংখ্যা কত, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
অন্য একাধিক বন্য মাংসাশী প্রাণীদের মতো নেকড়ে সমাজবদ্ধ জীব। বিশেষ কোনও কারণ ছাড়া নেকড়ে কখনওই দলছুট হতে চায় না। শিকার ধরা, খাবার খাওয়া, বিচরণ করা সবকিছুই করে একত্রে। বর্তমানে মানুষের বিভিন্ন আচরণে এদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে বিঘ্ন ঘটছে বহুদিন থেকেই। তাই ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে এরা। স্বাভাবিকভাবেই এদের নির্দিষ্ট বিচরণ ভূমি ভেঙে গিয়ে সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ নেকড়ে কখনও একই স্থানে থাকতে পছন্দ করে না। শিকারের সন্ধানে এরা বারংবার স্থান পরিবর্তন করে। যা নেকড়ে মাইগ্রেশন নামে পরিচিত। এবিষয়ে তুন্দ্রা বা বরফ অঞ্চলের নেকড়ে দের মাইগ্রেশন যথেষ্ট অবাক করে দেবে সবাইকে। তারা একটি বিশেষ পদ্ধতি মেনে এই মাইগ্রেশন করে থাকে।
যখন তারা মনে করে কোনও স্থানে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে বা ওই স্থানটি তাদের জন্য আর নিরাপদ নয়, তখন তারা সেই স্থান ত্যাগ করে অন্য উপযুক্ত স্থানে চলে যাওয়া নিশ্চিত করে ফেলে। এই বিষয়ে নেকড়ে দলের অভিজ্ঞ নেকড়ে দের ভূমিকা থাকে বেশি। মাইগ্রেশনের সময় নির্দিষ্ট একটি পথকে বেছে সারিবদ্ধভাবে চলতে শুরু করে তারা। দলটির সবার প্রথমে থাকে অভিজ্ঞ কয়েকটি নেকড়ে। তারা পথ চিনিয়ে দেয়। তাদের পিছনে থাকে দলের সবচেয়ে শক্তিশালী নেকড়ে রা। মাঝে অপেক্ষাকৃত দুর্বল, গর্ভবতী ও শিশু নেকড়ে দের রাখা হয়। তাদের পিছনে আত্মরক্ষার জন্য থাকে শক্তিশালী আরও কয়েকটি নেকড়ে। আর সবার শেষে দলটির সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে নিঃসঙ্গ হয়ে চলতে থাকে দলের নেতা।
এই নেতাকে নিয়েই যত রহস্য বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের। তার নিঃসঙ্গতা দেখে হঠাৎ মনে হতে পারে একে যেন দল থেকে বেরই করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা নয়। এই নিঃসঙ্গ নেকড়ে টি দলের নেতা ও সবচেয়ে অভিজ্ঞ। সে দূর থেকে চলতে চলতে দলের উপর ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে। যেন কোনও বিপদ তাদের পুরো নেকড়ে দলটির উপর ঝাঁপিয়ে না পড়ে। বিপদের আঁচ পেলে তৎক্ষণাৎ তার স্বরে চেঁচিয়ে গোটা দলকে সতর্ক করে দেয়।