জনপ্রিয়তা কমলেও এখনও এই কাঠের মচকা চিরুনি একই রকমভাবে তৈরি হয়ে চলেছে বীরভূম জেলায়। বিশেষ বৈশিষ্ট্যের এই চিরুনি তৈরি করছেন ওই জেলার সাঁইথিয়া ব্লকের বাঘডাঙা গ্রামের সুখদেব সিংহের পরিবার। চাহিদা কমে গেলেও বংশ পরম্পরায় আজও এই পেশা আঁকড়ে রেখেছে তাঁরা।

মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই রূপ বা কেশচর্চার জন্য চিরুনি অত্যাবশ্যক। রূপ বা কেশচর্চা ছাড়াও গ্রাম ও শহরাঞ্চলের বিভিন্ন সামাজিক উপাচারে এই চিরুনি র ব্যবহার হয়ে আসছে অতি প্রাচীনকাল থেকে। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন রকমের সস্তার প্ল্যাস্টিকের চিরুনি তে বাজার ছেয়ে যাওয়ায় চাহিদা কমছে এক সময়ের জনপ্রিয় কাষ্ঠ নির্মিত মচকা চিরুনি র।
জনপ্রিয়তা কমলেও এখনও এই কাঠের মচকা চিরুনি একই রকমভাবে তৈরি হয়ে চলেছে বীরভূম জেলায়। বিশেষ বৈশিষ্ট্যের এই চিরুনি তৈরি করছেন ওই জেলার সাঁইথিয়া ব্লকের বাঘডাঙা গ্রামের সুখদেব সিংহের পরিবার। চাহিদা কমে গেলেও বংশপরম্পরায় আজও এই পেশা আঁকড়ে রেখেছে তাঁরা।
৭০ ঊর্ধ্ব সুখদেব বাবু এবিষয়ে জানালেন, তাঁর বাবা দ্বারকানাথ সিংহ ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ চিরুনি শিল্পী। তাঁর কাছেই এই শিল্পে হাতেখড়ি তাঁর। শুধু তিনি নন, এই কাজে যুক্ত আছেন তাঁর গৃহিণী রেণকা দেবী এবং ছোট ছেলে রাজু সিংহ। চিরুনি তৈরির উপকরণ হিসাবে তিনি জানালেন, তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় গামা, চাকলদা, শিরীষ ও নিম গাছের কাঠ। তবে সবচেয়ে ভাল চিরুনি তৈরি হয় গামা ও চাকলদা গাছের কাঠে। চাকলদার কাঠে আঁশ নেই, বেশ শক্ত, অথচ মচকায় কিন্তু ভাঙে না।
আগে চিরুনি তৈরি করতে যথেষ্ট সময় ও পরিশ্রমের প্রয়োজন হত। কারণ বিভিন্ন ধরণের ছোট ছোট যন্ত্রাংশ দিয়ে শুধুমাত্র হাতের কাইদায় তৈরি করতে হত। বর্তমানে ইলেক্ট্রনিকের মেশিন বসানো হয়েছে। এতে পরিশ্রম হয় ঠিকই, কিন্তু কম সময়ে বেশি চিরুনি তৈরি করা যায়।
সহদেব বাবুর ও তাঁর পরিবারের নিজের হাতের তৈরি এই চিরুনি পৌঁছে যায় গ্রাম-বাংলার হাটে-বাজারে, দশকর্মা বিপণীতে, শান্তিনিকেতনের শনিবারের হাটে, পৌষমেলায়, মাঘমেলায়।
তবে তাঁর আক্ষেপ, কোনও মেলায় চিরুনি নিয়ে গেলেও তা নিছকই প্রদর্শনীর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। মানুষ সৌখিনতার খাতিরেই শুধু কেনে। তবে এই চিরুনির দাম রাখা হয় সাধ্যের মধ্যে, নকশা অনুযায়ী ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া চিরুনির পাশাপাশি তিনি তৈরি করেন মেয়েদের চুলের কাঁটা, কাঙ্গি, পরিত্যক্ত নারকেল মালা দিয়ে তৈরি বালা প্রভৃতি।
তবে বর্তমানে এসবই মানুষ কিনছে সৌখিনতার বশে। ব্যবহারের জন্য নির্ভর করছে সেই প্লাস্টিকজাত দ্রব্যাদির ওপর। তাই এই শিল্প থেকে অর্থ আসে যৎসামান্য। তবুও বংশপরম্পরার পুরনো শিল্পকে আজীবন আঁকড়ে ধরে রাখতে চান বাঘডাঙার এই সুখদেব সিংহ ও তাঁর পরিবার।