পুরাণ অনুযায়ী রাসযাত্রা –কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, শারদ রাস ও বাসন্তী রাস। শ্রীমদ্ভাগবত ও বিষ্ণুপুরাণে শারদ রাসের বর্ণনা দেওয়া রয়েছে। বঙ্গদেশের পঞ্জিকা অনুসারে শারদ উৎসবের পরই শুরু হয় রাসযাত্রা। এখানে কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিকে এই উৎসবের নির্দিষ্ট দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
বৃন্দাবন-মথুরার পাশাপাশি সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে পালিত হচ্ছে রাসযাত্রা। এই উৎসব থেকে বাদ যায় না পশ্চিমবঙ্গও। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে রাসযাত্রা পালিত হলেও নদীয়া জেলার নবদ্বীপ ও শান্তিপুরের রাস উৎসব বেশ বিখ্যাত। এখানকার রাস উৎসব প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো।
পুরাণ অনুযায়ী রাসযাত্রা –কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, শারদ রাস ও বাসন্তী রাস। শ্রীমদ্ভাগবত ও বিষ্ণুপুরাণে শারদ রাসের বর্ণনা দেওয়া রয়েছে। বঙ্গদেশের পঞ্জিকা অনুসারে শারদ উৎসবের পরই শুরু হয় রাসযাত্রা। এখানে কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিকে এই উৎসবের নির্দিষ্ট দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
রাস মূলত শ্রীকৃষ্ণের প্রেম প্রকৃতির উৎসব। এখানে ভগবানের সঙ্গে পরমাত্মার মিলনকেই রাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় এই দিনে ভগবান বিশেষ করে শ্রীকৃষ্ণের প্রেম পাওয়া সম্ভব।
তবে কারও কারও মতে, রাস মূলত এক ধরণের বিশেষ ‘তাল’ সহযোগে নাচ। যা বৃত্তাকারে ঘটে থাকে। এখানে ৮, ১৬ বা ৩২ জনে সম্মিলিতভাবে বৃত্তাকারে নৃত্য পরিক্রমা করতে পারে।
রাসাত্রা –র মূল তাৎপর্য একাধিক পুরাণে উল্লেখ রয়েছে। বিষ্ণুপুরাণ অনুযায়ী, একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রেমে মোহিত হয়ে গোপিনীরা বৃন্দাবনে ছুটে আসেন এবং শ্রীকৃষ্ণের পায়ে নিজেদের উৎসর্গ করে সেখানে বসবাস শুরু করেন। শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের অনেক করে বুঝিয়েও তাঁদের স্বগৃহে ফেরাতে পারেন না। তখন শ্রীকৃষ্ণের ধারণা হল, গোপিনীদের মন অহংকারে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাঁদের সেই অহংকার থেকে মুক্ত করতে হবে।
এরপর শ্রীকৃষ্ণ রাধারানীকে সঙ্গে নিয়ে সেই স্থান পরিত্যাগ করেন। গোপিনীরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। তাঁরা বুঝতে পারেন, শ্রীকৃষ্ণ ত্রিজগতের স্বামী। তাঁকে কোনওভাবেই কোনও মায়া-বাঁধনে আটকে রাখা সম্ভব নয়। তখন গোপিনীরা শ্রীকৃষ্ণের স্তুতি করতে শুরু করেন।
শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের ধ্যানে মুগ্ধ হয়ে পুনরায় তাঁদের কাছে ফিরে আসেন এবং তাঁদের মনুষ্য জীবনের মূল তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। এইভাবে গোপিনীদের মন বিশুদ্ধ হয়ে ওঠে। পরে শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের মনের বাসনা পূর্ণ করতে রাসলীলায় মেতে ওঠেন। যে উৎসবের ধারা যুগ যুগ ধরে আজও প্রবহমান।
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার নবদ্বীপ ও শান্তিপুরের রাস উৎসব বেশ প্রাচীন। বর্তমানে এখানকার উৎসব একটি আন্তর্জাতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই সময়ে অগুন্তি বৈষ্ণবীয় ভাবধারার মানুষ এখানে উপস্থিত হন। প্রায় ৫০০ বছর পূর্বে অদ্বৈত আচার্যের হাত ধরে শান্তিপুরে শুরু হয়েছিল রাসযাত্রা। মূলত রাধাকৃষ্ণের মিলন ঘটাতেই পালন করা হয় এই উৎসব।