চকলেট সম্পূর্ণ একটি প্রাকৃতিক উপাদান। কোকো বা কোকোয়া নামের একটি গাছের বীজ থেকে মূলত চকলেট পাওয়া যায়। গাছটির উচ্চতা মোটেও ২৫ ফুটের বেশি হয় না। আবার চিরহরিৎ এই গাছটি খুব বেশি গরম বা ঠাণ্ডা কোনওটাই সহ্য করতে পারে না। তাই পৃথিবীর সব স্থানে এই গাছের দেখা মেলে না।
সবচেয়ে মিষ্টি খাবার বলতে যদি কেউ চিনি জাতীয় দ্রব্যকে মনে করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তিনি ভুল করবেন। কারণ চকলেট এর চেয়ে বেশি মিষ্টি আর কোনও কিছুই হতে পারে না। প্রাকৃতিক এই খাদ্যটি এখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। কেক, পাউরুটি, আইসক্রিম, বিশেষ ধরণের পানীয় তৈরিতে এখন চকলেট এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। তাই পৃথিবী জুড়ে চকলেট এখন যথেষ্ট জনপ্রিয়।
তবে চকলেট এর ইতিহাস কিন্তু মোটেও খুব বেশি পুরনো নয়। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগেও চকলেট এর অদ্ভুত স্বাদ থেকে বঞ্চিত ছিল সভ্য সমাজ। পরে বিভিন্ন উপায়ে ও সময়ের মধ্য দিয়ে চকলেট পৌঁছে গিয়েছে সভ্য মানুষের কাছে। সেই ইতিহাসে পৌঁছানোর আগে জেনে নেওয়া যাক চকলেট আসলে কী।
চকলেট আসলে কী?
চকলেট সম্পূর্ণ একটি প্রাকৃতিক উপাদান। কোকো বা কোকোয়া নামের একটি গাছের বীজ থেকে মূলত চকলেট পাওয়া যায়। গাছটির উচ্চতা মোটেও ২৫ ফুটের বেশি হয় না। আবার চিরহরিৎ এই গাছটি খুব বেশি গরম বা ঠাণ্ডা কোনওটাই সহ্য করতে পারে না। তাই পৃথিবীর সব স্থানে এই গাছের দেখা মেলে না। কোকো গাছের আদিভূমি দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অরণ্যের গভীর জঙ্গল। পরে ইউরোপীয়রা এই গাছের সন্ধান পেয়ে নিজেদের দেশে নিয়ে আসে। এখন বহু দেশে চকলেট এর জন্য কোকো গাছের চাষ করা হচ্ছে।
সমস্ত গাছ জুড়ে বছরে দু’বার সাদা বা হালকা গোলাপি ফুল ফোটে কোকো গাছে। তারপর একাধিক শিরা যুক্ত নাশপাতির মতো ফল হতে দেখা যায়। প্রজাতি ভেদে ফল পাকলে তার রঙ হয় গাঢ় মেটে বা উজ্জ্বল হলুদ। এই ফলের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে সাজানো থাকে পেঁপের মতো বীজগুলি। বীজ থেকেই মূলত তৈরি হয় চকলেট। তবে এর স্বাদ অত্যন্ত তেতো। তাই বীজগুলিকে ফারমেনট বা গাঁজিয়ে প্রথমে শুকনো করে নেওয়া হয়। পরে এই গাঁজানো শুকনো বীজগুলি গুড়ো করে যে ডাস্ট তৈরি করা হয় তার থেকেই তৈরি হয় চকলেট।
চকলেট এর ইতিহাস
জনপ্রিয় এই চকলেট এর ইতিহাস কিন্তু খুব বেশি পুরনো নয়। তবে কোকো বীজের ব্যবহার বেশ পুরনো। সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে একে ব্যবহার করত মায়া ও আজটেক সভ্যতার মানুষেরা। ইতিহাস বলছে, ১১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের আগে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার মানুষেরা কোকো গাছের এই বীজের ব্যবহার জানত। তারা বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে এই বীজ থেকে তৈরি এক প্রকারের তেতো পানীয় ওষুধ হিসাবে পান করত। তখনও তারা এর থেকে চকলেট তৈরির প্রক্রিয়া জানতে পারেনি। ইউরোপীয়রাই এই বীজ থেকে প্রথম চকলেট তৈরি করেছিল।
বিখ্যাত নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস মধ্য আমেরিকা থেকে ১৪৯৫ সাল নাগাদ প্রথম কোকো ফল আমেরিকায় নিয়ে আসে। তার হাত ধরেই এই ফলের ব্যবহার জানতে পারে সমগ্র ইউরোপ। পরে ফরাসিরা ষোলশ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই ফলের বীজ থেকে চকলেট তৈরি করতে শুরু করে। ১৬৫৭ সালের পর থেকে বাণিজ্যিকভাবে সেই চকলেট বিক্রিও শুরু হয়। আর এই সময় থেকেই চকলেট এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে।
চকলেট এর উপকারিতা
কোকো গাছ এক সময় শুধুমাত্র দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সে সময় মানুষ এই গাছের বীজ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতেই ব্যবহার করত। পরে জানা যায়, চকলেট এ যথেষ্ট খাদ্যগুণ রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে থিওব্রোমাইন ও ক্যাফেইন। যা উত্তেজক ও মূত্র রোগে ব্যবহার করা হয়।
আগেই বলা হয়েছে, কোকো গাছ খুব বেশি গরম বা ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে না। তাই সব স্থানে এই গাছের দেখা মেলে না। পৃথিবীর যে সমস্ত সমভাবাপন্ন স্থানের আবহাওয়া খুব বেশি বদলায় না বর্তমানে সেই সমস্ত স্থানেই এখন কোকো গাছের চাষ করা হচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দক্ষিণ আমেরিকার একাধিক দেশ, আফ্রিকার নাইজেরিয়া, আইভরি কোস্ট, ক্যামেরুন, ঘানা, এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নিউগিনি। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশেও এখন কোকো গাছের চাষ ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে। বর্তমানে আইভরি কোস্ট প্রায় ৪০ শতাংশেরও বেশি চকলেট এর ডাস্ট তৈরি করে।