খরা পরিস্থিতির জন্য দেশের নাগরিকদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে অন্য কোনও উপায় না দেখে নামিবিয়া সরকার তাই পশুহত্যার মতো নির্দয় ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে একটি ঘোষণায় জানানো হয়েছে, দেশের একাধিক জাতীয় উদ্যান ও অন্য বনভূমি থেকে ৭২৩টির মতো বন্যপ্রাণী হত্যা করা হবে।

পরিস্থিতি মানুষকে কতটা নির্দয় করে তুলতে পারে, সম্ভবত তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে চলেছে নামিবিয়ায়। দেশটির সরকার দিন কয়েক আগেই ঘোষণা করেছে, দেশে চলা তীব্র খাদ্য সংকট মেটাতে ৭২৩টির মতো বড় আকারের বন্যপ্রাণী মেরে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যার মাংস বিতরণ করা হবে খরা প্রবণ এলাকার মানুষদের মধ্যে।
আসলে বন্যপ্রাণীদের উপর নির্দয় হত্যাযজ্ঞ ছাড়া অন্য কোনও উপায়ও নেই দেশটির হাতে। চলতি বছরের প্রথম থেকেই নামিবিয়াতে শুরু হয়েছে তীব্র খরা। কমে যাচ্ছে দেশটির জলস্তর। চাষবাসে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে এর। এর পাশাপাশি দেশে পশুপালনও ব্যাহত হয়েছে। ফলে তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটি।
আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে অবস্থান করা সত্ত্বেও নামিবিয়া বরাবরই একটি খরা প্রবণ দেশ। পূর্বেও বহুবার তীব্র খরা র মতো প্রাকৃতিক অভিশাপের স্বীকার হয়েছে দেশটি। এ বছর তীব্র খরা র জন্য বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন ‘এল নিনো’-কে। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের উষ্ণ জল পশ্চিমে সরে গিয়ে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়া মহাদেশের পূর্ব উপকূলে। কিন্তু এল নিনো উপস্থিত হলে ঠিক এর উল্টো প্রভাব পড়ে প্রশান্ত মহাসাগরে। সেই সঙ্গে এর আঁচ আটলান্টিক মহাসাগরেও পড়া স্বাভাবিক। ফলে আফ্রিকায় শুরু হয়েছে তীব্র খরা পরিস্থিতি।
এই তীব্র খরা –র প্রভাব পড়েছে আফ্রিকার নামিবিয়া সহ জাম্বিয়া, জিম্বাবোয়ে, মালাউই ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশের প্রায় ৭ লক্ষ নাগরিকের উপর। তীব্র জল সংকটের জন্য চাষবাসের পাশাপাশি পশুপালনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপক পরিমাণে।
খরা পরিস্থিতির জন্য দেশের নাগরিকদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে অন্য কোনও উপায় না দেখে নামিবিয়া সরকার তাই পশুহত্যার মতো নির্দয় ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে একটি ঘোষণায় জানানো হয়েছে, দেশের একাধিক জাতীয় উদ্যান ও অন্য বনভূমি থেকে ৭২৩টির মতো বন্যপ্রাণী হত্যা করা হবে। এবং সেই মাংস পৌঁছে দেওয়া হবে খরা প্রবণ অঞ্চলের ক্ষুধার্ত মানুষদের কাছে।
আরও জানানো হয়েছে হত্যা করা এই বন্যপ্রাণীদের মধ্যে থাকবে ৩০০টি জেব্রা, ১০০টি করে নীল ওয়াইল্ডারবিস্ট ও ইল্যান্ড, ৮৩টি আফ্রিকান হাতি, ৬০টি মহিষ, ৫০টি ইম্পালা ও ৩০টি জলহস্তী। পেশাদার শিকারিদের উপর এই পশু শিকারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নামিবিয়া সরকার।