কিন্তু এইচ বডলি কেন ক্যাশাপোনা স্থান পরিবর্তন করে, এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানতে পারেননি। তবে এই ব্যাপার নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছিলেন অপর আর এক বিজ্ঞানী পিটার ভ্যানস্কি। তিনি ছিলেন ব্রাতিস্লাভার স্লোভাক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী।

গাছেরা হাঁটতে পারে না। তাদের সে ক্ষমতা একেবারেই নেই। মাটির কোনও একটি নির্দিষ্ট অংশে, যেখানে তার জন্ম, বাহ্যিক কোনও প্রভাব ছাড়া সারাটা জীবন সেখানেই তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। শুধু দাঁড়িয়ে থাকা নয়, ফুল-ফলের পাশাপাশি প্রকৃতির মাঝে জীবনদ্বায়ী অক্সিজেনও তাকে সরবরাহ করতে হয়। অথচ নিজে কখনওই একচুল স্থান পরিবর্তন করতে পারে না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অবশ্যই থাকবে। আর থাকাটাই স্বাভাবিক। এই যেমন ক্যাশাপোনা, ইকুয়েডরের এই গাছটি যে কিনা স্বাধীনভাবে গভীর জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে পারে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্য।
ঘটনাটি প্রথম আবিস্কার করেন বিজ্ঞানী এইচ বডলি। ১৯৮০ সাল নাগাদ ইকুয়েডরের গভীর ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্টে গবেষণার কাজে ঘোরাঘুরি করার সময়ে ক্যাশাপোনা গাছটিকে আবিস্কার করেন। তখন তাঁর বেশ অবাক লেগেছিল গাছটির এই স্থান পরিবর্তনের স্বভাব। তিনি বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে গাছটি সম্পর্কে বহু তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন সে সময়ে। জেনেছিলেন, ক্যাশাপোনা আসলে একটি পাম জাতীয় গাছ। এর সর্ব্বোচ্চ উচ্চতা হতে পারে ১৬ থেকে ২০ মিটার। আর এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য, শিকড়গুলি বেশ লম্বা, মাটির অনেকটা উপর পর্যন্ত উঠে গিয়েছে। ঠিক যেন পায়ের মতো অবস্থান।
কিন্তু এইচ বডলি কেন ক্যাশাপোনা স্থান পরিবর্তন করে, এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানতে পারেননি। তবে এই ব্যাপার নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছিলেন অপর আর এক বিজ্ঞানী পিটার ভ্যানস্কি। তিনি ছিলেন ব্রাতিস্লাভার স্লোভাক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী। তিনিই প্রথম জানিয়েছিলেন, পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্যেই ক্যাশাপোনা স্থান পরিবর্তন করে।
আসলে ইকুয়েডরের ওই রেইন ফরেস্টের মাটি বেশ দুর্বল। এখানে ভূমিক্ষয় অতি সাধারণ ঘটনা। ফলে প্রায়ই গাছের গোঁড়া থেকে মাটি আলগা হয়ে যায়। তখন প্রয়োজন পড়ে নতুন শক্ত মাটির। এই অবস্থায় জঙ্গলের অন্য কোনও গাছের ক্ষমতা না থাকলেও ক্যাশাপোনা গাছের বিশেষ একটি ক্ষমতা রয়েছে। গাছটি পাশের শক্ত মাটি পাওয়ার আশায় নতুন করে শিকড় ছাড়তে শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যে নতুন শিকড় পাশের শক্ত মাটিতে প্রবেশ করলে পুরনো শিকড় আলগা মাটি ছেড়ে দেয়। এইভাবে ক্যাশাপোনা আগের অবস্থান থেকে সামান্য সরে আসে।
তবে এই স্থান পরিবর্তন অতি দ্রুত কখনওই ঘটে না। তার স্থান পরিবর্তনের গতি দিনে প্রায় ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার মাত্র। আর সম্পূর্ণভাবে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে তার সময় লাগতে পারে প্রায় ২ বছর। গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে, এইভাবে কোনও কোনও ক্যাশাপোনা তার জীবদ্দশায় প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত স্থান পরিবর্তন করে ফেলেছে।