Sunday, February 16, 2025

কাসুন্দি আর তৈরি হয় না গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে

- Advertisement -

কাসুন্দি আসলে গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় একটি আচার বা সস। এর প্রধান উপাদান সরিষা। এই সরিষাকে খুব ভালোভাবে পেশায় করে তরল পেস্ট তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে ঝাঁঝের আধিক্যের জন্য সেসময় কালো সরিষাকেই নির্বাচন করা হত বেশি। গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে যে সহজ উপায়ে কাসুন্দি তৈরি করা হত তাতে সরিষার সঙ্গে পরিমাণ মতো লবণ, হলুদ, সরিষার তেল আর কাঁচা আম মেশানো হত।


কাসুন্দি
Image by Wikimedia commons

একটা সময়ে গ্রাম-বাংলার পরিবারগুলির সঙ্গে কাসুন্দি ছিল ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। গরম ভাত, শ্যালাড বা অন্য টক জাতীয় রেসিপির সঙ্গে কাসুন্দির ব্যবহার ছিল যেন অনিবার্য। কাসুন্দি মিশ্রিত খাবার প্রথম ধাপেই নাসিকারন্ধ্রে নিয়ে আসে অসম্ভব রকম ঝাঁঝ আর চোখে নিয়ে আসে তৃপ্তির অশ্রুধারা। এই স্বাদ সেসময়কার গ্রাম-বাংলার প্রতিটি পরিবার উপভোগ করত দারুণভাবে।

তবে সেই দিনগুলি আর যেন নেই। হারিয়ে গিয়েছে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে। যদিও কাসুন্দি রয়েছে। তবে তা বাজারজাত। বসন্তের মরশুমে গ্রাম-বাংলার পরিবারগুলিতে যেভাবে কাসুন্দি তৈরির ধুম পড়ে যেত, এখন আর তেমন কোনও চিত্রই নজরে পড়ে না। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কাসুন্দির ব্যবহারেও এসেছে পরিবর্তন। বিভিন্ন ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টগুলিতেই বাজারজাত বোতল বন্দী কাসুন্দির আধিক্য এখন বেশি। কোনও পরিবার হয়তো কালেভদ্রে স্বাদ পরিবর্তনের জন্য সেই বোতল বন্দী কাসুন্দিই নিয়ে আসে বাড়িতে। তবে এক্ষেত্রে কাসুন্দির সেই ঝাঁঝালো স্বাদ পূর্বের মতো আজও অটুট রয়েছে কি?

কাসুন্দি আসলে গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় একটি আচার বা সস। এর প্রধান উপাদান সরিষা। এই সরিষাকে খুব ভালোভাবে পেশায় করে তরল পেস্ট তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে ঝাঁঝের আধিক্যের জন্য সেসময় কালো সরিষাকেই নির্বাচন করা হত বেশি। গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে যে সহজ উপায়ে কাসুন্দি তৈরি করা হত তাতে সরিষার সঙ্গে পরিমাণ মতো লবণ, হলুদ, সরিষার তেল আর কাঁচা আম মেশানো হত। অনেকেই আবার স্বাদের আলাদা বৈশিষ্ট্যের জন্য মেশাতো পেশায় করা জিরে, রাঁধুনি, গোলমরিচ, জোয়ান প্রভৃতি। ঠিকঠাক পদ্ধতি মেনে একবার এই কাসুন্দি তৈরি করতে পারলে প্রায় ২০ বছর ধরে খাওয়া যেতে পারে। সাধারণত গ্রাম-বাংলার মহিলারা এই কাসুন্দি তৈরির জন্য বসন্তকালকেই বেছে নিতেন। কারণ এই সময়ে সরিষা ও কাঁচা আম দুই’ই পাওয়া যায় সহজভাবে।

অতীতে গ্রাম-বাংলার নিজস্ব আচার ছিল এই কাসুন্দি। গরম ভাত সহযোগে শাক বা যে কোনও ভাজার সঙ্গে এই কাসুন্দি অতি অল্প পরিমাণে খাওয়ার চল ছিল তখন। এর পাশাপাশি যে কোনও টক জাতীয় রেসিপিতেও এই কাসুন্দির ব্যবহার ছিল। তখন গ্রাম-বাংলা থেকেই মাটির পাত্রে এই কাসুন্দি পৌঁছে যেত শহরাঞ্চলগুলিতে। তবে এখন আর গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে কাসুন্দি তৈরি হতে বিশেষ দেখা যায় না। বাজারজাত ভাবে কিনে আনা হয়ে থাকে। রেস্টুরেন্টগুলিতে চপ-কাটলেট বা অন্য রেসিপির সঙ্গে এই কাসুন্দি র ব্যবহার বেড়েছে বেশি।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর