Monday, December 9, 2024

কচ্ছপ এর ডিম ফুটে ছেলে না মেয়ে হবে নিয়ন্ত্রণ করে তাপমাত্রা

- Advertisement -

সামুদ্রিক কচ্ছপ যতই সমুদ্রের জলে বসবাস করুক না কেন, ডিম পাড়ার সময়ে তারা ঠিকই উপকূলে উঠে আসে। ডিম পাড়ার মরশুমে তারা প্রথমেই নির্জন কোনও দ্বীপকে বেছে নেয়। তবে সেই দ্বীপে যেন বালুচর থাকে অনেকটাই দীর্ঘ। কারণ বালি খুঁড়ে তার নিচেই মা কচ্ছপ ডিম পাড়ে। এই খোঁজাখুঁজির পর্বটি অবশ্য মা কচ্ছপ –দেরকেই সারতে হয়।

কচ্ছপ
Image by Pexels from Pixabay

গুটি গুটি পায়ে তারা যেখানেই যাবে, নিজের ঘরটিকে ঠিক সঙ্গে করে নিয়ে যাবে। বিপদের এতটুকু আঁচ বুঝলে সঙ্গে সঙ্গেই সেই ঘরের মতো সেঁধিয়ে নেবে নিজেদের। বিপদ কেটে গেলে, মাথা আর চার পা বের করে আবার হাঁটতে শুরু করবে আগের মতো। প্রকৃতিতে কচ্ছপ –ই একমাত্র প্রাণী যারা এভাবেই নিজেদের জীবন অতিবাহিত করে। কচ্ছপ –এর পিঠে চাপানো ওই ঘরের মতো ছোট অংশটি আর কিছুই নয়, ক্যালসিয়াম দিয়ে নির্মিত একটি শক্ত খোলস। যা তাদের আত্মরক্ষায় সাহায্য করে।

ঝুঁকিতে কচ্ছপ প্রজাতি

যাইহোক, এই রিপোর্টের বক্তব্য আজ এই খোলস নিয়ে নয়, তাদের প্রজনন নিয়ে। কারণ ইতিমধ্যেই প্রাকৃতিক জটিলতার জন্য অধিকাংশ কচ্ছপ –এর প্রজননই এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাদের অধিকাংশ ডিম ফুটেই বেরিয়ে আসছে মেয়ে কচ্ছপ। পুরুষ কচ্ছপ –এর সংখ্যা দিন দিন কমেই যাচ্ছে। কিন্তু কেন?

কারা ঝুঁকিতে?

প্রায় ৩৬০ প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে পৃথিবীতে। বসবাসের উপর নির্ভর করে জীব বিজ্ঞানীরা আবার কচ্ছপ –দের দুই শ্রেণীতে ভাগ করেছেন, স্থল কচ্ছপ আর জলচর কচ্ছপ। স্থল কচ্ছপ সাধারণত জলাধারের আশেপাশে বসবাস করে। কিন্তু জলচর কচ্ছপ শুধুমাত্র ডিম পাড়ার সময়টুকু ছাড়া বাকি জীবন জলেই কাটিয়ে দেয়। জলচর কচ্ছপ –দের আবার জীব বিজ্ঞানীরা মিঠা কচ্ছপ ও নোনা কচ্ছপ –এ ভাগ করেছে। নোনা কচ্ছপ –এর অধিকাংশই আবার বসবাস করে সমুদ্রে।

এখানে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, কচ্ছপ পরিবারের অধিকাংশই কিন্তু এই সামুদ্রিক কচ্ছপ। আর এরাই রয়েছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। বিলুপ্ত হচ্ছে তাদের বংশ। কারণ এদেরই অধিকাংশের ডিম ফুটে বেরিয়ে আসছে মেয়ে কচ্ছপ।

- Advertisement -

সামুদ্রিক কচ্ছপ ডিম পাড়ে কোথায়?

সামুদ্রিক কচ্ছপ যতই সমুদ্রের জলে বসবাস করুক না কেন, ডিম পাড়ার সময়ে তারা ঠিকই উপকূলে উঠে আসে। ডিম পাড়ার মরশুমে তারা প্রথমেই নির্জন কোনও দ্বীপকে বেছে নেয়। তবে সেই দ্বীপে যেন বালুচর থাকে অনেকটাই দীর্ঘ। কারণ বালি খুঁড়ে তার নিচেই মা কচ্ছপ ডিম পাড়ে। এই খোঁজাখুঁজির পর্বটি অবশ্য মা কচ্ছপ –দেরকেই সারতে হয়। পুরুষেরা একাজে কখনওই তাদের সহযোগিতা করে না।

বালুচরে বালি খুঁড়ে ডিম পেড়ে পুনরায় বালি চাপা দিলে মায়েদের কাজ সম্পূর্ণ হয়। তারা ফিরে যায় সমুদ্রে। সন্তানের উপর তাদের আর কোনও দায়িত্ব থাকে না। এক একজন মা এক একবারে সর্বাধিক ৩০টি পর্যন্ত ডিম পাড়তে পারে। সেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় নেই প্রজাতি ভেদে প্রায় ২ থেকে ৪ মাস। তারপর বাচ্চারা নিজেরাই ফিরে যায় সমুদ্রের জলে।

ডিম ফুটে কেন অধিকাংশই মেয়ে বাচ্চা হচ্ছে?

জীব বিজ্ঞানীদের মতে, ডিম ফুটে ছেলে না মেয়ে হবে তা অনেকটাই নির্ভর করে পরিবেশের তাপমাত্রার উপর। ডিম পাড়া অন্যান্য প্রাণী (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া)-রা যেখানে ডিম পেড়ে বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত ‘তা’ দেয়, মা কচ্ছপ কিন্তু তেমনটি করে না। ডিম পেড়ে বালি চাপা দিয়েই তাদের কাজ শেষ হয়ে যায়। প্রকৃতির তাপমাত্রাতেই ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে আসে।

কিন্তু ধীরে ধীরে পরিবেশের তাপমাত্রায় ঘটছে আমূল পরিবর্তন। পরিবেশ ক্রমশই উষ্ণ হয়ে উঠছে। ফলে বালুচরের বালিও ক্রমশ হয়ে উঠছে উত্তপ্ত। জীব বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বালির গড় তাপমাত্রা যদি ২৯.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা তার নিচে থাকে তবে ডিম ফুটে বেরিয়ে আসবে ছেলে বাচ্চা। আর তাপমাত্রা তার উপরে উঠলে হবে মেয়ে বাচ্চা। পরিবেশ ক্রমশ উষ্ণ হয়ে ওঠাই মেয়ে বাচ্চার হারই হচ্ছে এখানে সবচেয়ে বেশি।

কেন ঝুঁকিতে?

একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, অধিকাংশই যদি মেয়ে কচ্ছপ –এর জন্ম হয়, তবে পরবর্তী প্রজন্মে সামুদ্রিক কচ্ছপ –এর প্রজননে ঘটবে বিঘ্ন। তাদের স্বাভাবিক প্রজনন ঘটার সম্ভাবনা অনেকটাই হ্রাস পাবে। যদিও পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় মা কচ্ছপ ডিম পাড়ার ক্ষমতা রাখবে, কিন্তু সেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকবে না।

মানুষের কী এ ব্যাপারে কিছুই করার নেই?

সামুদ্রিক কচ্ছপ সমুদ্রের নিজস্ব সম্পদ। একে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা মানুষ এখনও আয়ত্ত করতে পারেনি। তবে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে মানুষ পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে পারে। বিশেষ করে কার্বন দূষণ ও প্ল্যাস্টিক দূষণকে যত দ্রুত সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর