এবছর শান্তিতে নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তিকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়নি। নোবেল পুরস্কার পেয়েছে জাপানের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন নিহন হিদানকায়ো। সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরেই পরমাণু অস্ত্রমুক্ত একটি বিশ্ব গঠনের উপর কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৫৬ সালে নিহন হিদানকায়ো নামের এই সংগঠনটি গঠিত হয়েছিল। এটি গঠন করেছিলেন ১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরের ওপর ফেলা পরমাণু হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন ব্যক্তি।
১৮৯৫ সালে সুইডিশ বিজ্ঞানী স্যার আলফ্রেড নোবেল এর করে যাওয়া একটি উইলের ভিত্তিতে প্রতি বছর ৬টি বিষয়ে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। এটি বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক সর্ববৃহৎ পুরস্কার। ১৯০১ সালে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তি-র ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। পরে ১৯৬৯ সালে এই বিষয়গুলির সঙ্গে যুক্ত করা হয় অর্থনীতিকে।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় নরওয়ের অসলো থেকে। বাকি বিষয়গুলির পুস্কার প্রদান করা হয় সুইডেনের স্টকহোম শহর থেকে। পুরস্কার স্বরূপ একটি স্বর্ণপদক, ডিপ্লোমা পত্র, সুইডেনের নাগরিকত্ব ও কিছু অর্থ দেওয়া হয় পুরস্কার প্রাপককে। বর্তমানে এই পুরস্কারের সঙ্গে দেওয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় ১.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এই বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে ৬টি বিষয়ে মোট ১১ জনকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে নোবেল কমিটি। শান্তিতে নির্দিষ্ট কোনও একজন ব্যক্তিকে এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে না। একটি সংগঠনকে দেওয়া হচ্ছে এই পুরস্কার।
পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার
এবছর পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জন জে হপফিল্ড ও জিওফ্রে ই হিন্ট। প্রথম জন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং দ্বিতীয় জন কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী। তাঁরা দুজনেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির উপর অসামান্য অবদান রেখেছেন। জন জে হপফিল্ড বিশেষ অবদান রেখেছেন তথ্য সংরক্ষণ ও পুনর্গঠনের কাঠামো নির্মাণের উপর। আর জিওফ্রে ই হিন্ট –এর অবদান ছিল কীভাবে স্বাধীনভাবে ডেটার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করা যায়। এই দুই বিষয়ই কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত।
রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার
রসায়ন বিজ্ঞানে এবছর নোবেল পেয়েছেন ৩ জন বিজ্ঞানী। তাঁরা হলেন ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস ও জন এম জাম্পার। এদের মধ্যে ডেমিস হাসাবিস ও জন এম জাম্পার ইন্টারনেট সংস্থা গুগল –এ কর্মরত। এই তিন বিজ্ঞানীই অবদান রেখেছেন প্রোটিনের গঠন পাঠোদ্ধার ও নতুন প্রোটিন গঠনের উপর। ডেমিস হাসাবিস ও জন এম জাম্পার এই বিষয়ে ‘আলফাফোল্ড ২ এআই’ নামে একটি মডেল তৈরি করেছে, যার সাহায্যে প্রায় ২০ কোটি প্রোটিন কাঠামোর ভবিষ্যৎ বানী করা সম্ভব।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এবছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যৌথভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল স্কুলের বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোজ এবং হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের বিজ্ঞানী গ্যারি রাভকুন। তাঁরা দুজনেই মাইক্রোআরএনএ আবিস্কারের জন্য নোবেল পুরস্কারে মনোনীত হয়েছেন। মাইক্রোআরএনএ এমনই একটি ক্ষুদ্র জেনেটিক উপাদান, যা কোশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। এই আবিস্কার ক্যানসার ও ডায়াবেটিস –এর চিকিৎসায় অভূতপূর্ব অবদান রাখবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার
এককভাবে এবছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন দক্ষিণ কোরিয়ান লেখিকা হান কাং। তাঁর লেখায় বারবার উঠে এসেছে মানুষের জীবনের দুঃখ-কষ্ট, সহিংসতা সহ বিভিন্ন দিক। নোবেল কমিটি তাঁর লেখায় খুঁজে পেয়েছে তীক্ষ্ণতা ও কাব্যময়তা। হান কাং –এর লেখা বিভিন্ন বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দ্য ভেজেটারিয়ান, হিউম্যান অ্যাক্টস, দ্য হোয়াইট বুক প্রভৃতি।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার
এবছর শান্তিতে নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তিকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়নি। নোবেল পুরস্কার পেয়েছে জাপানের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন নিহন হিদানকায়ো। সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরেই পরমাণু অস্ত্রমুক্ত একটি বিশ্ব গঠনের উপর কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৫৬ সালে নিহন হিদানকায়ো নামের এই সংগঠনটি গঠিত হয়েছিল। এটি গঠন করেছিলেন ১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরের ওপর ফেলা পরমাণু হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন ব্যক্তি। তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন পরমাণু হামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষী।
অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার
একই সঙ্গে তিনজন মার্কিন অর্থনীতিবিদ এবছর পেলেন নোবেল পুরস্কার। তাঁরা হলেন ড্যারন অ্যাসেমোগলু (তুরস্ক বংশোদ্ভূত), সাইমন জনসন (যুক্তরাজ্য বংশোদ্ভূত) ও জেমস এ রবিন্সন। অর্থনীতিতে তাঁদের গবেষণার বিষয় ছিল ‘দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধিতে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’।