মাঙ্কিপক্স (MPV অথবা MPXV) আসলে একটি দ্বিচারিত DNA জুনেটিক ভাইরাস। যা অরথোপপক্স ভাইরাসের অন্তর্গত। গুটিবসন্ত রোগের ভাইরাসও এই শ্রেণীর অপর আর একটি পরিচিত ভাইরাস। মাঙ্কিপক্স প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৫৮ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে। ওই সময় পরীক্ষাগারে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছিল ম্যাকাক বানরের দেহে।
২০২২ সালের পর আবারও একবার মাঙ্কিপক্স সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ জারি করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO। কারণ ইতিমধ্যে আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে। এর পাশাপাশি কেনিয়া, বুরুন্ডি, উগান্ডা, রুয়ান্ডার মতো প্রতিবেশী দেশগুলিতেও দ্রুত মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।
কোথায় বেশি প্রাদুর্ভাব ঘটেছে?
প্রথম দিকে মাঙ্কিপক্স পশু থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যেত। কিন্তু এখন মানুষ থেকে মানুষের শরীরেই ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। যা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। জানা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের ক্রান্তীয় বনাঞ্চলের গ্রামীণ অঞ্চলগুলিতে, যেখানে বৃষ্টির পরিমাণ অন্যান্য অঞ্চলগুলির তুলনায় অনেকটাই বেশি। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত এই অঞ্চলে মাঙ্কিপক্স এ আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। যার ৯৬ শতাংশই ঘটেছে কঙ্গোতে। এর মধ্যে মারা গিয়েছে প্রায় সাড়ে চারশো জনের মতো মানুষ।
মাঙ্কিপক্স কী?
মাঙ্কিপক্স (MPV অথবা MPXV) আসলে একটি দ্বিচারিত DNA জুনেটিক ভাইরাস। যা অরথোপপক্স ভাইরাসের অন্তর্গত। গুটিবসন্ত রোগের ভাইরাসও এই শ্রেণীর অপর আর একটি পরিচিত ভাইরাস। মাঙ্কিপক্স প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৫৮ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে। ওই সময় পরীক্ষাগারে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছিল ম্যাকাক বানরের দেহে।
মাঙ্কিপক্স মানুষের শরীরে যে রোগের জন্য দায়ী, বিজ্ঞানীরা তাঁকে এমপক্স নামে অভিহিত করেছে। এখনও পর্যন্ত এমপক্সের দুটি ধরণ লক্ষ্য করা গিয়েছে, ক্লেড ১ ও ক্লেড ২। ২০২২ সালে করোনা সংক্রমণের মাঝেই ক্লেড ২ শনাক্ত হওয়ার জন্য বিশ্ব জুড়ে সতর্কতা জারি করেছিল WHO।
মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের লক্ষণ
মাঙ্কিপক্স এ আক্রান্ত হলে জ্বর, মাথা ব্যথা, পিঠ ও পেশিতে ব্যথা, শরীর ঘেমে যাওয়া, সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়া প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। পরে জ্বর কমে যাওয়ার পর গুটিবসন্তের মতো ফুসকুড়ি উঠতে শুরু করে। প্রথমে মুখে, পরে সমস্ত শরীর, বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের পাতায় এই ফুসকুড়ি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এই ফুসকুড়িগুলি পরে শুকিয়ে ঝরে গেলেও সেখানে ক্ষতস্থান দেখা দিয়ে থাকে। সাধারণত মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ সারতে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। সংক্রমণ বেশি গুরুতর হলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
মাঙ্কিপক্স কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে?
প্রথম দিকে মাঙ্কিপক্স শুধুমাত্র পশু শরীর থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ত। কিন্তু এখন পশুদের পাশাপাশি মানুষের শরীর থেকেও এই ভাইরাস অপর মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনও মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করলে অপর ব্যক্তিও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সাধারণত অপর ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ক্ষতযুক্ত ত্বক, নাক, মুখ, চোখ, শ্বাসনালীর মাধ্যমে।
যদিও পূর্বে ধারণা করা হয়েছিল, যৌন সংসর্গের কারণে এই ভাইরাস সাধারণত ছড়ায় না। কিন্তু পরে ২০২২ সাল থেকে এই ধারণাকে ত্যাগ করা হয়। কারণ ওই বছর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী করা হয়েছিল।
সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়
মাঙ্কিপক্স থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় টিকা গ্রহণ। তবে টিকা গ্রহণ সম্ভব না হলে বিশেষ সতর্ক থাকা অতি আবশ্যিক। পারিবারিক কোনও সদস্য এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যতটা সম্ভব রোগীর ব্যবহৃত জিনিস অপরজন যাতে রোগ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার না করে সেদিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। এই সময় যৌন সম্পর্ক কিছুদিন বন্ধ রাখা যেতে পারে, নয়তো সুরক্ষা কবজ হিসেবে কনডম ব্যবহার করা জরুরী।