বঙ্গদেশে এই শৈত্যপ্রবাহ আসে মূলত উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে। এই সময়ে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তৈরি হয় নিম্নচাপ। তার প্রভাবে বাতাস অত্যধিক শীতল হয়ে ধেয়ে আসে বঙ্গের দিকে। কিন্তু কোনও কারণে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে নিম্নচাপ তৈরি কম হলে বা ভারতের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা চললে বঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ কমে যায়।

মাঘের প্রায় মাঝামাঝি এখন। বসন্ত প্রায় দুয়ারে। অথচ শীত যেন জাঁকিয়ে পড়ল না এবছর। যদিও একাধিক আবহাওয়াবিদের ধারণা ছিল, তুলনামূলক অধিক বৃষ্টির পাশাপাশি এবছর যথেষ্ট বেশি শীত পড়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ঘটল ঠিক তার উলটোটি। বর্ষার মরশুম পেরিয়ে যেতেই শীত পড়তে শুরু করেছিল প্রথম দিকে। কিন্তু ভরা শীতের মরশুমেও মেলেনি তেমন শীতের ছোঁয়া। তেমনভাবে বইতেও দেখা যায়নি শৈত্যপ্রবাহ। কিন্তু কেন?
তার আগে জেনে নেওয়া যাক, শৈত্যপ্রবাহ আসলে কী? বঙ্গদেশে খাতায়-কলমে পৌষ ও মাঘ মাসকে শীতকাল হিসেবে গণ্য করা হয়। ইংরেজি মাস হিসেবে ধরা হয় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত। এই সময়কালে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হিমালয়ের পাদদেশ ছুঁয়ে তুলনামূলক ঠাণ্ডা বাতাস ঢোকে বঙ্গদেশে। যার ফলে শীত অনুভূত হয়।
এই সময়ে পরিবেশের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে আসে। পরিবেশের তাপমাত্রা যখন আরও কমে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছে যায় তখন তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলে ধরে নেওয়া হয়। আবহাওয়াবিদরা এই শৈত্যপ্রবাহকেও কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ (৮ থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস), মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ (৬ থেকে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস), তীব্র শৈত্যপ্রবাহ (৪ থেকে ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস) ও অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ (৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে)।
তবে দিনের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট মাত্রায় নেমে এলেই যে তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হবে, তার কোনও কথা নেই। এই তাপমাত্রার স্থায়িত্বকাল অন্তত তিনদিন একই রকম থাকতে হবে। শীতের মরশুমে বেশ কয়েকবারই এমনটি ঘটে থাকে। আর এমনটি ঘটলেই বলা হয় ‘শীত বেশ জাঁকিয়েই পড়েছে বঙ্গে’। কিন্তু চলতি বছর এমনটি আর বলার অবকাশ থাকছে না। শৈত্যপ্রবাহ বইলেও তার সংখ্যা তুলনামূলক বেশ কম।
বঙ্গদেশে এই শৈত্যপ্রবাহ আসে মূলত উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে। এই সময়ে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তৈরি হয় নিম্নচাপ। তার প্রভাবে বাতাস অত্যধিক শীতল হয়ে ধেয়ে আসে বঙ্গের দিকে। কিন্তু কোনও কারণে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে নিম্নচাপ তৈরি কম হলে বা ভারতের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা চললে বঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ কমে যায়। এবছর যেমনটি হয়েছে।
এরই সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের অবস্থান। এবছর শীতের একটি বড় অংশ জুড়েই এই অঞ্চলে নিম্নচাপ পরিলক্ষিত হয়েছে। ফলে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়া ছিল উষ্ণ। শীত তেমনভাবে প্রবেশ করতে পারেনি এই অঞ্চলে।
এবছর বঙ্গদেশে যতটুকু শীত অনুভূত হয়েছে তার অন্যতম কারণ ছিল ঘন কুয়াশা। দিনের একটি বড় অংশ জুড়ে সূর্যের আলো পড়েনি মাটিতে। দিনের অংশে মাটি তেমনভাবে উষ্ণ না হওয়ায় শীতল আবহাওয়া তৈরি করেছে বঙ্গদেশে।
গত বেশ কয়েকদিন কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের আশেপাশে অবস্থান করছে, যা স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রী বেশি। বাতাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে ২৫ থেকে ২৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছে।