ফুল –এর কথা উল্লেখ করলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রঙ-বেরঙের প্রতিফলন। সবুজের মাঝে বিভিন্ন রঙের ছোঁয়া যে কাউকেই আকর্ষিত করবে। আসলে ফুল –কে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে প্রবিত্র ও সুন্দর অংশ। যার শেষ পরিণতি নতুন প্রজন্মের ধারক।
কোনও গাছ যখন মনে করে তার পরিপূর্ণ বয়স উপস্থিত বা তার সমস্ত অঙ্গের বৃদ্ধি পরিপূর্ণ তখনই সে ফুল ফোঁটাতে উদ্যত হয়। কারণ সে ততদিনে নিজেকে পরবর্তী প্রজন্মকে নিয়ে আসার জন্য প্রস্তুত করে নিয়েছে। ফুলের পরই আসে ফল। তারপর বীজ, যার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকে গাছের নতুন প্রজন্ম।
কিন্তু ফুলের রঙ নিয়েও রহস্যের শেষ নেই। বিশেষ করে যে সমস্ত ফুল সময় পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রঙ পরিবর্তন করে। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে একাধিক কারণে ফুলের এই রকম রঙ পরিবর্তন হতে পারে। তার অধিকাংশের জন্য দায়ী মূলত তিনটি রঞ্জক পদার্থ যেমন- অ্যান্থোসায়ানিন, ক্যারোটিনয়েড ও বেটালাইন। এছাড়া পিএচ এর হেরফের বা পরাগায়নের ফলেও ফুল –এর রঙ পরিবর্তন হতে পারে।
অসংখ্য ফুল দিনের বিভিন্ন সময়ে নিজেদের রঙ পরিবর্তন করে বাহবা পেতে চায়। আজ অবশ্য ৫টি চেনা বা জানা ফুল নিয়েই এখানে আলোচনা করা হচ্ছে।
১। স্থলপদ্ম
নামের সঙ্গে ‘পদ্ম’ শব্দটি যুক্ত থাকলেও পদ্মের সঙ্গে কোনও অংশের মিল নেই স্থলপদ্মের। পদ্ম ফোটে জলে আর স্থলপদ্মের বসতি মাটির ওপর। চিন দেশ থেকে বহু প্রাচীনকালের কোনও এক সময়ে এই ফুল ও তার গাছ ছড়িয়ে পড়েছিল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। মহাকবি কালিদাসের কুমারসম্ভব কাব্যেও স্থলপদ্মের উল্লেখ রয়েছে।
স্থলপদ্ম (হিবিসকাস মিউটাবিলিস) মালভেসি পরিবারের সদস্য। যা আমাদের দেশের ঢেঁড়স বা ভেণ্ডি গণের অংশ। দিনের বিভিন্ন সময়ে রঙ পরিবর্তন এই ফুল –এর অন্যতম আকর্ষণ। বঙ্গদেশের পরিবেশে হেমন্তের আধো ঠাণ্ডা এই ফুল ফোটার উপযুক্ত সময়। দিনের শুরুতে সাদা, তারপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে হালকা গোলাপি ও পরে গাঢ় গোলাপিতে রূপান্তরিত হয় স্থলপদ্ম।
২। লান্টানা
দক্ষিণ আমেরিকার ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে এই ফুল এখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। লান্টানা ফুল গাছের পরিচর্যায় বিশেষ কোনও বেগ পেতে হয় না। কারণ এই গাছের সহ্য ক্ষমতা অসীম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফুল শোভা বর্ধনের জন্য চাষ করা হলেও বঙ্গদেশে এখন আগাছায় পরিণত হয়েছে এই লান্টানা।
রঙ পরিবর্তনের জন্য লান্টানা বিশেষ পরিচিত। সাধারণত পরাগায়নের জন্যেই এই পরিবর্তন ঘটে বলে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা মনে করেন। তাদের দাবি অনুযায়ী, ফুল –এর মধুভাণ্ড পরিপূর্ণ থাকার সময়ে রঙ হয়ে থাকে হলুদ। পরে প্রজাপতি বা অন্যান্য কীটপতঙ্গের দ্বারা মধু নিঃশেষের ফলে রঙ বদলে যায় গোলাপি বা বেগুনীতে।
৩। মর্নিং গ্লোরি
লতা জাতীয় গাছ। এই ফুল –এরও আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল। বর্তমানে বাগানের শোভা বৃদ্ধি করতে এই ফুল গাছের জুরি মেলা ভার। এর অন্যতম রহস্য ফুল –এর রঙ পরিবর্তনে। সকালে ফোটার সময় কম তাপমাত্রায় মর্নিং গ্লোরির রঙ হয়ে থাকে নীল বা বেগুনী। পরে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রঙও পালটে গোলাপিতে রূপান্তরিত হয়।
৪। বোগেনভিলিয়া
বোগেনভিলিয়ার সঙ্গে কম-বেশি প্রায় সকলেই পরিচিত। বাগান সাজাতেই এই ফুল বেশি ব্যবহার করা হয়। এই ফুল গাছেরও আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। সব বোগেনভিলিয়া নয়, বিশেষ কয়েকটি বিরল প্রজাতির বোগেনভিলিয়া রঙ পরিবর্তন করতে পারে। এমনিতেই বোগেনভিলিয়ার ফুল একবার ফুটে বেশ কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। এক্ষেত্রে এই সমস্ত বিরল প্রজাতির ফুল প্রায় প্রতিদিনই নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলে।
৫। শ্যারন
চিন থেকে এই ফুল এসেছে। অনেকটা বঙ্গদেশের জবা ফুল –এর মতো। তবে সারাদিন ধরেই এই ফুল রঙ পরিবর্তন করে চলে। সকালের দিকে ফোটার সময় শ্যারন এর রঙ হয় হালকা গোলাপি। পরে রঙ পরিবর্তন করতে করতে দিনের শেষে তা হয়ে যায় গাঢ় নীল বা বেগুলি। বঙ্গদেশের অনেকেই এই ফুল –কে নীল জবা হিসেবে পরিচয় দেয়।