আসলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইলিশ এর সঙ্গে অনেকটা সাদৃশ্য থাকায় সার্ডিন, চৌক্কা বা চাপিলা মাছগুলিকেও এই মরশুমে ইলিশ হিসেবে বিক্রি করে থাকেন। এদের মধ্যে সার্ডিন তো দেদার বিক্রি হয় খোলা বাজারে। মজার ব্যাপার, এই মাছগুলিও ইলিশ এর মতো নোনা জলের বা সমুদ্রের মাছ। যা কৃত্রিমভাবে কখনও চাষ করা যায় না। তবে সাদৃশ্য যতই থাক, ভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে বাহ্যিক অমিল অবশ্যই থাকতে হবে।

বর্ষার মরশুম চলছে। তাই ইলিশ এর খোঁজ পড়বে না, তা কি হয়! কর্মক্ষেত্র থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মাঝে ছাতা মাথায় বাড়ি ফেরার সময় কর্তা যখন পথের ধারে মাছওয়ালাদের ‘ইলিশ, ইলিশ’ হাঁকডাক শুনতে পান, তখন আর চুপ করে থাকেন কি করে! কাছে গিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে পছন্দসই একটা ইলিশ হাতে নিয়ে দর-দাম মিটিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। মনে যেন রাজ্য জয়ের খুশি তাঁর। তারপর গিন্নির হাতের জাদুতে তৈরি হয় ইলিশ ভাপা, সর্ষে ইলিশ বা ইলিশ পাতুরি।
বর্ষার মরশুমে বাঙালির ঘরে ঘরে এই ছবি অতি স্বাভাবিক। জিভে জল আনা এই আদরের ইলিশ ছাড়া যেন পুরো বর্ষাকালটাই বৃথা। রুই-কাতলা তো সারা বছরই কম দামে পাওয়া যায়। কিন্তু ইলিশের দাম যেন বর্ষার মরশুম ছাড়া কিছুতেই কমতে চায় না। যদিও ভরা ইলিশ এর মরশুমেও তার দাম নেহাত কম নয়। কলকাতার বাজারে এই সময়ে পূর্ণাঙ্গ ইলিশের দাম স্থান ভেদে ও আকার অনুযায়ী ৬০০-১২০০ টাকা প্রতি কেজি।
তবে দাম যাইহোক, ইলিশ তো কিনতেই হবে। তবে বাজারে এই আদরের ইলিশ কিনতে গিয়ে ঠকছেন না তো? মানে, ইলিশ কিনতে গিয়ে, ইলিশের মতো দেখতে অন্য মাছ কিনে ফেলছেন না তো? আসলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইলিশের সঙ্গে অনেকটা সাদৃশ্য থাকায় সার্ডিন, চৌক্কা বা চাপিলা মাছগুলিকেও এই মরশুমে ইলিশ হিসেবে বিক্রি করে থাকেন। এদের মধ্যে সার্ডিন তো দেদার বিক্রি হয় খোলা বাজারে। মজার ব্যাপার, এই মাছগুলিও ইলিশ এর মতো নোনা জলের বা সমুদ্রের মাছ। যা কৃত্রিমভাবে কখনও চাষ করা যায় না।
তবে সাদৃশ্য যতই থাক, ভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে বাহ্যিক অমিল অবশ্যই থাকতে হবে। এবার জেনে নেওয়া যাক, আদরের ইলিশ এর সঙ্গে ওই মাছগুলির তফাৎ আসলে কোথায় –
১। ইলিশ এর গন্ধ অন্য যে কোনও মাছের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। একটি পূর্ণাঙ্গ ইলিশ কে যে কোনও পরিস্থিতিতে নাকের কাছে নিয়ে গেলে তার নিজস্ব গন্ধ পাওয়া যাবে। কিন্তু সার্ডিন, চৌক্কা বা চাপিলা মাছে সেই রকম কোনও গন্ধ থাকবে না।
২। আকারে ইলিশ এর পিঠ ও পেট দুটি অংশই সমান বাঁকানো থাকবে। সার্ডিনের পেটের অংশ যতটা বাঁকানো থাকে, পিঠ ততটা থাকে না। মূলত এটিই ইলিশ ও সার্ডিনকে দৃশ্যগতভাবে আলাদা করে দেয়।
৩। ইলিশ এর দৈর্ঘ্য চৌক্কার তুলনায় বেশি। তবে ছোটো ইলিশ বা ‘খোকা ইলিশ’ লম্বায় চৌক্কার প্রায় সমান। তবে যে কোনও ইলিশ প্রস্থে চৌক্কার তুলনায় চওড়া।
৪। সার্ডিন, চৌক্কা বা চাপিলার চোখ ইলিশ এর তুলনায় অনেকটাই বড় হয়ে থাকে।
আপাতত ইলিশ কেনার সময় এই তফাৎগুলি ভাল করে লক্ষ্য করলেই চলবে। এই প্রসঙ্গে আরও একটি কথা বলে নেওয়া যাক। স্বাদের দিক থেকে পদ্মার ইলিশ এর ধারে পাশে আসে না অন্য যে কোনও অঞ্চলের ইলিশ। আসলে পদ্মার পলি মিশ্রিত ঘোলা জলে ‘ডায়াটম’ নামের এক ধরণের শৈবাল প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। পদ্মায় আগত ইলিশ সেগুলি খেয়ে পুষ্টিলাভ করে। তাই এর স্বাদ হয় অন্য যে কোনও অঞ্চলের ইলিশ এর থেকে আলাদা।