অহম রাজাদের সমাধিক্ষেত্রগুলিই মৈদাম নামে পরিচিত। এই মৈদাম প্রায় ৭০০ বছরেরও বেশি পুরনো। এগুলি অনেকটা মিশরের পিরামিডের আদলে তৈরি করা হত। সাধারণত অহম রাজপরিবারের সদস্য ও উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীদের মৃত্যুর পর মৈদাম প্রথায় সমাধিস্থ করা হত সে সময়। ঐতিহাসিক দিক থেকে তাই এগুলির গুরুত্ব অপরিসীম।
গত বছর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়ার জন্য ইউনেস্কোর কাছে আবেদনা করা হয়েছিল। এবছর সেই আবেদনে ছাড়া দিয়ে ইউনেস্কো আসামের মৈদাম গুলিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় নথিভুক্ত করে নিয়েছে। গত ২৬ জুলাই দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ৪৬তম সম্মেলনে একথা জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি। মৈদাম এর পাশাপাশি আসামের মানস জাতীয় উদ্যান ও কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানকেও বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছে ইউনেস্কো।
মৈদাম কী? অহম রাজাদের সমাধিক্ষেত্রগুলিই মৈদাম নামে পরিচিত। এই মৈদাম প্রায় ৭০০ বছরেরও বেশি পুরনো। এগুলি অনেকটা মিশরের পিরামিডের আদলে তৈরি করা হত। সাধারণত অহম রাজপরিবারের সদস্য ও উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীদের মৃত্যুর পর মৈদাম প্রথায় সমাধিস্থ করা হত সে সময়। ঐতিহাসিক দিক থেকে তাই এগুলির গুরুত্ব অপরিসীম।
এই মৈদাম গুলি ছিল অনেকটাই মিশরের পিরামিডের মতো। তবে এক্ষেত্রে রয়েছে বেশ কিছু পার্থক্য। এখানে মৈদাম নির্মাণে ব্যবহার করা হত ইট, বালি, মাটি ও কাঠ। প্রথমে মৃতদেহকে স্নান করিয়ে একটি কাঠের নির্মিত বিশেষ সজ্জায় শুইয়ে দেওয়া হত। যাকে বলা হত রুংডাঙ। তারপর সেখানে নির্মাণ করা হত একটি দ্বিতল ঘর। একে বলে রুংডাঙ কারেং। ঘরগুলিতে বেশ কয়েকটি কুঠুরি থাকত। এরপর ঘরের মধ্যেই মৃতদেহের পাশে তার ব্যবহার করা প্রিয় জিনিসগুলি অনেকটা মিশরীয়দের মতো সাজিয়ে দেওয়া হত। বাইরে থেকে প্রবেশের জন্য একটি সুরঙ্গও থাকত এই মৈদাম গুলিতে।
সবশেষে এর উপরিভাগে একটি গোলাকার মাটির ঢিবি বা টিলার মতো নির্মাণ করা হত, যা একটি বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। পরে এই টিলা বা ঢিবিগুলি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘাস, লতাপাতা বা আগাছায় ভরে যেত।
সব মিলিয়ে আসামে ১৫০টিরও বেশি মৈদাম আবিস্কার করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩০টি মৈদাম ভারত সরকার ও আসাম সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগ দ্বারা সংরক্ষিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যোরহাটের শেষ আসাম রাজা পুরন্দর সিংহ ও প্রধান সেনাপতি লাচিত বরফুকনের মৈদাম। পরবর্তীকালে অহম জনগোষ্ঠী হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করলে মৈদাম প্রথা উঠে যায়।