বিশ্বের অন্যতম দামি সুগন্ধি তৈরিতে আগর গাছের কাঠের ব্যবহার রয়েছে। তবে চন্দনের মতো নির্দিষ্ট বয়সে এই গাছের কাঠ সুগন্ধির জন্য তৈরি হতে হয় না। এর জন্য প্রয়োজন হয় সংক্রমণের। প্রাকৃতিক উপায়ে এই গাছে কাঠ খাওয়ার জন্য বাসা বাধে অ্যামব্রোসিয়া বিটল নামক এক ধরণের পোকা। তখন গাছে ক্ষতস্থান তৈরি হয়।
ভারতীয় পরিবেশে প্রাকৃতিক উপায়ে শুধুমাত্র চন্দন গাছ থেকেই যে সুগন্ধি তৈরি হতে পারে, এমনটি কিন্তু নয়। আরও একটি গাছ এই ভারতীয় পরিবেশে জন্মায়, যার নির্যাস থেকেও তৈরি হতে পারে বিশ্বের সবচেয়ে দামি সুগন্ধিগুলি। ভারতীয় বাজার তো অবশ্যই, যার কদর বিদেশের বাজারেও উপরের সারিতে রয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাছের নাম বলতে বললে এক বাক্যেই চলে আসে আফ্রিকার ব্ল্যাকউড, ইবোনি, ইউরোপের পিঙ্ক আইভরি আর ভারতের চন্দন গাছের নাম। কিন্তু এরই সঙ্গে আরও একটি নাম নিঃসন্দেহে জুড়ে দেওয়া যায়, যার ব্যবহার বৈদিক যুগেও ছিল। বিভিন্ন ভাষায় গাছটি বিভিন্ন নামে পরিচিত হলেও বাংলায় গাছটি আগর গাছ নামে পরিচিত।
আগর গাছ সাধারণত ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব গাছ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে এই গাছ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। গাছটি বৃক্ষ জাতীয় চিরহরিৎ। ৬০ থেকে প্রায় ৮০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে আগর গাছ। পাতাগুলি পাতলা ও বেশ উজ্জ্বল। প্রায় তিন বছর বয়স থেকে ফুল ফুটতে শুরু করে এই গাছে। ফুলের রঙ সাদা।
বিশ্বের অন্যতম দামি সুগন্ধি তৈরিতে আগর গাছের কাঠের ব্যবহার রয়েছে। তবে চন্দনের মতো নির্দিষ্ট বয়সে এই গাছের কাঠ সুগন্ধির জন্য তৈরি হতে হয় না। এর জন্য প্রয়োজন হয় সংক্রমণের। প্রাকৃতিক উপায়ে এই গাছে কাঠ খাওয়ার জন্য বাসা বাধে অ্যামব্রোসিয়া বিটল নামক এক ধরণের পোকা। তখন গাছে ক্ষতস্থান তৈরি হয়। ক্ষতস্থানে এই সময় অ্যাসকোমাইসেটিস নামক ছত্রাকে আক্রান্ত হয়। গাছ তখন বেশ বুঝতে পারে তার ক্ষতস্থান সারিয়ে তোলার সময় হয়েছে। তখন ওষুধ হিসেবে ক্ষতস্থানে এক ধরণের রজন নিঃসৃত করে আগর গাছ। যা ছত্রাকের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করে। এই রজন থেকেই তৈরি হয় আগর গাছের মূল সুগন্ধি।
এখানে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, কোনও আগর গাছ যদি কখনও ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত না হয়, সেই গাছে কখনও সুগন্ধি তৈরি হবে না। তাই আগর গাছ চাষিরা রজন পাওয়ার জন্য কৃত্রিম উপায়ে গাছকে ছত্রাকে আক্রান্ত করে তোলে।
সুগন্ধি নির্মাণের জন্যই আগর গাছের পরিচিতি বিশ্ব জুড়ে। বহু প্রাচীনকাল এমনকি বৈদিক যুগের বেদেও এই গাছের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ পাওয়া যায়। সেসময়ে এই গাছ বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহার করা হত। তবে বর্তমানে দামি সুগন্ধি বিশেষ করে আরবীয় সুগন্ধি বা আতর এবং সুগন্ধি তেল তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে একটি পরিপূর্ণ গাছের ৭০ কেজি কাঠ থেকে প্রায় ২০ মিলিলিটার তেল পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও এই গাছের কাঠের গুড়ো সুগন্ধি ধূপ নির্মাণেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
তবে আশ্চর্য ব্যাপার, আগর গাছ ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব গাছ হওয়া সত্ত্বেও এই গাছ অনেকের কাছেই অজানা। অধিক বৃষ্টিযুক্ত বনাঞ্চলগুলিতেই এখন এই গাছের প্রাধান্য বেশি। সেখানে অবশ্য চোরাশিকারিদের হামলার কারণে এই গাছের সংখ্যা বেশ কমে এসেছে। তবে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়াতে আগর গাছের চাষ শুরু হয়েছে।