এতদিন প্রযুক্তি বাণিজ্যের বিনিয়োগকারীদের নিশ্চিত স্থল ছিল চিন। করোনা পরিস্থিতির পর বেশ ভোল বদলে দিয়েছে প্রযুক্তি বিশ্ব এর। চিনের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্রমশ তলানিতে ঠেকায়, বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ এখন ভারতের দিকেই। স্যামসুং, অ্যাপেল-এর মতো বড়ো বড়ো কোম্পানিগুলিও চিন থেকে সরে ভারতের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে। আর এই সুযোগে ‘মেক-ইন-ইন্ডিয়া’-র পথও অনেকটা প্রশস্ত হয়েছে ভারতের। অস্ত্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ভারত এখন ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে।

কথায় বলে, ‘অন্যের হিংসা নিজের উন্নতি’। অর্থাৎ অন্যেরা যতই হিংসা করুক, ষড়যন্ত্র করুক নিজের লক্ষ্য ঠিক থাকলে, সৎ পথে চললে তার উন্নতি কেউই আটকাতে পারবে না। যুগ যুগ ধরে এটাই বার বার প্রমাণিত হয়েছে। এই একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছে সেই সত্য আবারও প্রমাণ হওয়ার পথে। তবে এক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষে নয়, বরং গোটা একটা দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
স্বাধীনতার পর থেকেই মূলত চিন ও পাকিস্থানের সঙ্গে সংঘর্ষ করে চলতে হচ্ছে ভারতকে। উত্তর ও পশ্চিমের এই দুই প্রতিবেশী দেশ কখনওই ভারতকে সহজভাবে নেয়নি। সীমান্ত সংঘাত থেকে শুরু করে বিশ্ব মঞ্চে বারংবার বিভিন্ন দিক থেকে ভারতের বিরোধিতা করে চলেছে। ভারতের মর্যাদাকে নিচ করার চেষ্টা করে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের অভ্যন্তরেও বিভেদ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে তারা। কিন্তু মজার ব্যাপার, ততবারই বিশ্ব মঞ্চে ভারতেরই বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়েছে। নাক কাটা গিয়েছে ওই দেশগুলিরই। প্রথম দেশটি ক্রমশই হারিয়ে ফেলছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা। আর দ্বিতীয় দেশটি তলিয়ে যাচ্ছে দারিদ্রতার নিচে। অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা ছাড়া তাদের আর কোনও উপায় এখন প্রায় নেই।
এই যেমন করোনা পরিস্থিতি। বিশেষজ্ঞরা অসংখ্য প্রমাণ পাওয়ার পরেও চিন আজও গলা উচিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে বিশ্ব জুড়ে করোনার এই পরিণতির জন্য তারা কোনওভাবেই দায়ী নয়। কিছুদিন আগেও তারা প্রচার চালিয়েছে করোনার জন্ম তাদের দেশেই নাকি ঘটেনি! বরং ঘটেছে ভারত, বাংলাদেশ সহ আরও অন্যসব দেশে!
মিথ্যা প্রচারের একটা সীমা থাকা উচিত। চিন যে অনেক আগেই সেই সীমা লঙ্ঘন করে গিয়েছে, একথা ওদের বোঝাবে কে। বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশই আজ প্রায় একমত, যে বিশ্ব জুড়ে করোনার ছড়িয়ে পড়া এই দাবানলের জন্য দায়ী একমাত্র চিন-ই। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রথম অবস্থায় এই ভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য চিন গোপন না করলে, বিশ্বের পরিণতি আজ এমনটি কখনওই হত না।
অপরদিকে ভারত নিজের কাজ চালিয়ে গিয়েছে নিজের মতো করেই। বরং নিঃশব্দে, বিনা প্রচারে। তুলনামূলক দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সঙ্গী করেই কঠোর হাতে মোকাবিলা করেছে করোনার। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে শত্রু-মিত্র বিচার না করেই ধাপে ধাপে পাঠিয়েছে একাধিক চিকিৎসা সামগ্রী ও সেই সঙ্গে অন্যসব প্রয়োজনীয় জিনিসও। এর পাশাপাশি করোনাকে দমন করতে ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রেও ভারত কাজ করে গিয়েছে প্রশংসনীয়ভাবে। ফলে বেড়েছে ভারতের বন্ধুত্ব। প্রসারিত হয়েছে অর্থনীতির সুগম পথও।
অস্বীকার করার উপায় নেই, প্রযুক্তি বিশ্বে চিন কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছে ভারত থেকে। এতদিন প্রযুক্তি বাণিজ্যের বিনিয়োগকারীদের নিশ্চিত স্থল ছিল চিন। করোনা পরিস্থিতির পর বেশ ভোল বদলে গিয়েছে প্রযুক্তি বিশ্বের। চিনের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্রমশ তলানিতে ঠেকায়, বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ এখন ভারতের দিকেই। স্যামসুং, অ্যাপেল-এর মতো বড়ো বড়ো কোম্পানিগুলিও চিন থেকে সরে ভারতের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে। আর এই সুযোগে ‘মেক-ইন-ইন্ডিয়া’-র পথও অনেকটা প্রশস্ত হয়েছে ভারতের।
অস্ত্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ভারত এখন ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যেই ‘আকাশ’ মিসাইল রপ্তানির সবুজ সংকেত পেয়েছে প্রতিরক্ষা বিভাগ। গত বছরের শেষ দিনেই একথা টুইট করে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ভারত এতদিন শুধুমাত্র যন্ত্রাংশ-ই রপ্তানি করত। কিন্তু এবার নিজস্ব প্রযুক্তি তে তৈরি একটা আস্ত মিসাইল রপ্তানি করতে পারবে। রাজনাথ সিং টুইট থেকে আরও জানিয়েছেন, অস্ত্র রপ্তানির বাণিজ্য থেকে ভারতে লক্ষ্য এখন ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের।