কিছু ক্ষেত্রে কয়েক প্রজাতির গাছ রাতের বেলাতেও অক্সিজেন ত্যাগ করতে পারে। তারা এই প্রক্রিয়ার জন্য CAM বা Crassulacean Acid Metabolism নামের এক ধরণের ফটোসিন্থেটিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকে। ফলে রাতের বেলাতেও তারা পরিবেশ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা অক্সিজেন –ও ত্যাগ করে থাকে।

সৌরজগতের গ্রহগুলির মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই প্রাণের উদ্ভব ঘটেছে। তার অন্যতম কারণ, একমাত্র এখানকার বাতাসেই মুক্ত অবস্থায় রয়েছে প্রাণের জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন। যার সবচেয়ে বড় উৎস উদ্ভিদ। পরিবেশের উদ্ভিদই পারে অক্সিজেন সরবরাহ করতে এবং সেই সঙ্গে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে।
তবে গাছেরা সাধারণত দিনের বেলা সূর্যালোকের উপস্থিতিতেই ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাতাসে এই অক্সিজেন পরিত্যাগ করে থাকে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে যেহেতু সূর্যালোক থাকে না, তাই এই সময় তাদের পক্ষে অক্সিজেন ত্যাগ করা সম্ভব হয় না।
তবে কিছু ক্ষেত্রে কয়েক প্রজাতির গাছ রাতের বেলাতেও অক্সিজেন ত্যাগ করতে পারে। তারা এই প্রক্রিয়ার জন্য CAM বা Crassulacean Acid Metabolism নামের এক ধরণের ফটোসিন্থেটিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকে। ফলে রাতের বেলাতেও তারা পরিবেশ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা অক্সিজেন –ও ত্যাগ করে থাকে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক, রাতের অন্ধকারেও অক্সিজেন দিতে পারে এমন ৬টি গাছ সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য। বলা বাহুল্য, এই ৬টি গাছ কিন্তু আমাদের বিশেষ পরিচিত এবং খুবই কাছের।
১. তুলসী :

সুপ্রাচীনকাল থেকে এমন কোনও হিন্দু বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে তুলসী গাছ নেই। হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে তুলসী গাছের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। হিন্দু আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও বিভিন্ন রোগ নিবারণে তুলসী গাছকে প্রায় উপরের সারিতেই রাখা হয়েছে। প্রায় ৩৭ রকমের রোগ নির্মূলের কথা উল্লেখ রয়েছে কবিরাজি শাস্ত্রেও। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, এই তুলসী গাছে রয়েছে অফুরন্ত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল গুণ। সেই সঙ্গে পরিবেশের বাতাসও বিশুদ্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে এর। এছাড়াও রাতের বেলা তুলসী গাছ কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে পারে। যা বাড়ির পরিবেশকে বিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য করে।
২. অ্যালোভেরা :

প্রাচীন হিন্দু আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীরও উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীন যুগ থেকে এই গাছ মূলত রূপচর্চা ও পেটের একাধিক সমস্যায় ব্যবহার হয়ে আসছে। এই গাছকে পরিবেশবিদরা ঘরের মধ্যেও সাজিয়ে রাখতে বলেছেন। কারণ অ্যালোভেরা যেমন ঘরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তেমনি রাতের বেলা অক্সিজেন –ও দিতে পারে।
৩. অর্কিড :

অনেকেই শখ করে বাড়ির ব্যালকনিতে অর্কিড রাখতে পছন্দ করেন। রঙ-বেরঙের অর্কিড গাছগুলি যখন ফুলে ভরে যায়, তখন বেশ মনোরম দেখায় বাড়ির পরিবেশকে। তবে এখানেও জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিডও কিন্তু রাতের বেলা অক্সিজেন দিতে পারে।
৪. স্নেক প্ল্যান্ট :

দেখতে বিষধর সাপের ফণার মতো, কিন্তু আদতে একটি নিরীহ বাহারি গাছ। বাড়ির ভিতরের পরিবেশকে বেশ মনোরম রাখতে অনেকেই শখ করে স্নেক প্ল্যান্ট রাখেন। এই গাছের এমন কিছু বিশেষ গুণ রয়েছে, যা অন্য কোনও গাছের থেকে আশাও করা যায় না। ঘরের বিষাক্ত গ্যাস, বিশেষ করে ফর্মালডিহাইড ও বেঞ্জিন স্নেক প্ল্যান্ট শোষণ করে নিতে পারে। এছাড়াও পরিবেশবিদদের দাবি, যে সমস্ত গাছ রাতের বেলা অক্সিজেন –এর যোগান দিতে পারে, তাদের মধ্যে স্নেক প্ল্যান্ট রয়েছে সবার উপরে।
৫. নিম :

নিম গাছের ঔষধি গুণ অফুরন্ত। এতে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল। যা পার্শ্ববর্তী বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য করে। এই গাছও বিভিন্ন রোগ নির্মূল করতে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর পাশাপাশি নিম গাছের অন্যতম গুণ, এই গাছ মশা তাড়াতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি রাতের বেলা অক্সিজেনের যোগান দিয়ে পরিবেশের বাতাসকে বিশুদ্ধও রাখতে পারে।
৬. অশ্বত্থ :

প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে অশ্বত্থ গাছ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে। সুবিশাল শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট বহুবর্ষজীবী বৃক্ষ হওয়ার জন্য বট গাছের পাশাপাশি অশ্বত্থ গাছেরও মানব সভ্যতায় বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। একদিকে অসংখ্য পশুপাখির আশ্রয়দাতা হিসেবে এর যেমন সুনাম রয়েছে, তেমনি এর রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গুণও। এর নিচে বহু মহাপুরুষ তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেছেন। বর্তমান পরিবেশবিদদের দাবি, এই অশ্বত্থ গাছও রাতের বেলা অল্প-বিস্তর অক্সিজেন দিতে পারে।