কিন্তু কী কারণে আত্মঘাতী হল এলিজা। তা কোনওভাবেই বুঝে উঠতে পারছিল না তাঁর পরিবার। কারণ তাঁর মতো প্রাণ চঞ্চল, মিশুকে ও সর্বদা হাসিখুশি থাকা ছেলেটি কী এমন সমস্যায় পড়ল যে তার জন্য তাঁকে আত্মহত্যার মতো কঠিন পদক্ষেপ বেছে নিতে হল?

দুই চোখে ছিল বড় টেনিস তারকা হওয়ার স্বপ্ন। ভাল টেনিসও খেলতে পারতেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এলিজা হিকক। কিন্তু নিজের সামান্য একটু ভুল আর ডিজিটাল অপরাধীদের পাতা ফাঁদে জড়িয়ে অকালেই চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে। পড়ে রইল তাঁর টেনিস ব্যাট আর বাবা-মা-যমজ দুই বোনের সুখের সংসার।
ঘটনাটি ঘটে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। এলিজা হিকককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আবিস্কার করে তাঁর দুই যমজ বোন। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিল এলিজা হয়তো বেঁচে রয়েছে। দুই বোন মায়ের কাছে প্রথম এই মর্মান্তিক দৃশ্যের ঘটনা জানায়। পরে এলিজা কে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এলিজা হিককের এই আত্মঘাতীতে সমগ্র পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া।
কিন্তু কী কারণে আত্মঘাতী হল এলিজা। তা কোনওভাবেই বুঝে উঠতে পারছিল না তাঁর পরিবার। কারণ তাঁর মতো প্রাণ চঞ্চল, মিশুকে ও সর্বদা হাসিখুশি থাকা ছেলেটি কী এমন সমস্যায় পড়ল যে তার জন্য তাঁকে আত্মহত্যার মতো কঠিন পদক্ষেপ বেছে নিতে হল?
এলিজা র মা প্রায় প্রতি নিয়তই ছেলের মোবাইল ঘাঁটতেন। বয়ঃসন্ধির ফাঁদে পড়ে ছেলে যে নিয়মিত পর্ণ সাইট দেখত, তাও অজ্ঞাত ছিল না মায়ের কাছে। একদল ডিজিটাল প্রতারক তাঁকে নিয়মিত অশ্লীল ছবি পাঠাত তাও জানতেন তিনি। হয়তো ছেলেকে এব্যাপারে সাবধানও করেছিলেন তিনি। কিন্তু কখনওই বুঝতে পারেননি, পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিয়ে যাবে।
প্রতারকদের পাঠানো শেষ কয়েকটা ম্যাসেজ সন্দেহের বীজ বুনে দেয় পরিবারের মনে। দেখা যায় এলিজা কে অশ্লীল ছবি পাঠাতে পাঠাতে হঠাৎই তাঁর নিজেরই একটি নগ্ন ছবি পাঠিয়েছে প্রতারকেরা। তারপরই শুরু হয় ব্ল্যাক মেইলিং। প্রতারকদের দাবি ছিল যদি এই মুহূর্তে ৩ হাজার মার্কিন ডলার তাদের না দেওয়া হয়, তাহলে খুব শীঘ্রই এলিজার এই নগ্ন ছবি চলে যাবে পর্ণ সাইটে।
এলিজা র পরিবার এরপরই দ্বারস্থ হয় পুলিশের। তাঁর আত্মহত্যার পূর্ণ তদন্তের দাবি জানায় এফবিআই এর কাছে। প্রায় দুই মাস তদন্তের পর এফবিআই জানায় এলিজা কে পাঠানো প্রতারকদের ওই নগ্ন ছবি কোনওভাবেই এলিজা র নিজের নয়। অপরাধীরা AI এর মাধ্যমে নির্মাণ করেছিল ওই ছবি। তারপর তাঁকে ব্ল্যাক মেইল করতে শুরু করে।
দুর্ভাগ্যবশত, অপরাধীদের দাবি মানতে পারেননি এলিজা। সেই মুহূর্তে ৩ হাজার ডলার তাঁর কাছে ছিল না। এদিকে তাঁর নগ্ন ছবি পর্ণ সাইটে ছড়িয়ে পরার আশঙ্কায় আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্তে নিজেকে টেনে নিয়ে যেতে বাধ্য হয় সে।
এফবিআই জানাচ্ছে, ডিজিটাল অপরাধীরা এখন অপরাধ জগতে নতুন করে সংযোজন ঘটিয়েছে AI কে। AI কে ব্যবহার করে এখন বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করছে তারা।
এলিজা হিকক যে কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে, এটিও এক ধরণের যৌন নির্যাতন। তবে এলিজা -ই এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার এই ধরণের যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং এন্ড এক্সপ্লয়েটেড চিলড্রেন জানাচ্ছে, ২০২৩ সালে তাদের কাছে এই ধরণের আর্থিক যৌন নির্যাতনের রিপোর্ট ছিল ২৬ হাজার ৭১৮টি।