Thursday, May 1, 2025

তারাশঙ্কর এর ‘হাঁসুলী বাঁক’-এ আজ যেন ক্ষয় ধরেছে রীতিমতো (ভিডিও সহ)

- Advertisement -

তারাশঙ্কর এর হাঁসুলী বাঁকটি প্রকৃতপক্ষে পশ্চিম কাদিপুর গ্রামের সীমান্তে অবস্থিত। গ্রামটি লাভপুর থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার দূরে। পথে যেতে যেতে দু’ধারে দেখা মিলবে উন্মুক্ত প্রান্তর আর সারিবদ্ধ তালগাছ।এখানে আকাশ যেন দিগন্তরেখা ছুঁয়ে গিয়েছে। নজরে পড়বে ছোটো ছোটো গ্রাম আর তাঁর ফাঁক দিয়ে এগিয়ে চলা মেঠোপথ।


তারাশঙ্কর

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা কথাসাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় নাম। এক কথায় বলতে গেলে, বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডার তাঁকে ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাঁর লেখা অসংখ্য উপন্যাসের মধ্যে ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ অন্যতম। উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৫৪ বঙ্গাব্দে। আর এটি তিনি উৎসর্গ করেছিলেন কবি কালিদাস রায়কে। পরে ষাটের দশকে এই বিখ্যাত উপন্যাস নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছিল। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন পরিচালক তপন সিংহ।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর লেখনীতে হাঁসুলী বাঁকের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা এক কথায় অসাধারণ। ঐতিহাসিক দিক দিয়েও এর গুরুত্ব অপরিসীম। এই অঞ্চলে সেকালের সমাজ ব্যবস্থা, গ্রাম্য জীবন, ধনী-দরিদ্র, আদিবাসী সমাজ সমস্ত কিছুই নিখুঁতভাবে উল্লেখ করেছেন। তবে সময়ের সাথে সাথে আজ হাঁসুলী বাঁকের অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। মিল খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।

তারাশঙ্কর এর হাঁসুলী বাঁকটি প্রকৃতপক্ষে পশ্চিম কাদিপুর গ্রামের সীমান্তে অবস্থিত। গ্রামটি লাভপুর থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার দূরে। পথে যেতে যেতে দু’ধারে দেখা মিলবে উন্মুক্ত প্রান্তর আর সারিবদ্ধ তালগাছ। এখানে আকাশ যেন দিগন্তরেখা ছুঁয়ে গিয়েছে। নজরে পড়বে ছোটো ছোটো গ্রাম আর তাঁর ফাঁক দিয়ে এগিয়ে চলা মেঠো পথ।



হাঁসুলী বাঁক মূলত কোপাই আর বক্রেশ্বর নদীর সংযোগ স্থল। নদী এখানে বড্ড বেশি এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়েছে। নদীর এই বাঁক দেখতে অনেকটা আদিবাসী রমণীর হাঁসুলি গয়নার মতো। তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে হাঁসুলি বাঁক। গুগল ম্যাপে এর স্পষ্ট অস্তিত্ব বুঝতে পারা যায়। ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন অশ্বক্ষুরাকৃতি নদী পথের ঠিক আগের অবস্থা।

- Advertisement -

তবে তারাশঙ্কর এর এই হাঁসুলী বাঁক আর আগের মতো নেই। এখানে যেন ক্ষয় ধরেছে। চতুর্দিকে গজিয়ে ওঠা একাধিক ইটের ভাটা আর ক্রমাগত বেড়ে চলা পরিবেশ দূষণ স্থানটির ঐতিহ্য নষ্ট করে দিচ্ছে। বিশিষ্ট ছড়াকার গৌর গোপাল পালও এই বিষয়ে একমত। তিনি জানালেন, অসংখ্য দর্শনার্থীকে তিনি এই হাঁসুলী বাঁক দেখাতে নিয়ে এসেছেন। দর্শনার্থীরা এর সৌন্দর্যও উপভোগ করেছে। কিন্তু অধিকাংশ দর্শনার্থী হাঁসুলী বাঁকের এই ক্ষয়ে যাওয়া রূপ পছন্দ করেননি। গৌর গোপাল বাবুও চাইছেন, ইট ভাটা চলুক, তাতে কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এই স্থানটির রক্ষার্থের দিকে প্রশাসনের কিছুটা নজর দেওয়া প্রয়োজন।

সাহিত্যগত বা ঐতিহাসিকভাবে স্থানটির গুরুত্ব অনেক। প্রতি বছর অসংখ্য দর্শনার্থী দেখতে আসেন এই তারাশঙ্কর এর হাঁসুলী বাঁক। তাই স্থানটি সাজিয়ে গুছিয়ে আরও আকর্ষণীয় করা যেতেই পারে।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর