শুনতে যতই আজগুবি মনে হোক, এখানে যুক্তি রয়েছে ষোলোআনা। পৃথিবীতে যে পাঁচবার বরফ যুগ নেমেছিল, তার শেষটির পরিসমাপ্তি ঘটেছিল প্রায় ১৩ হাজার বছর পূর্বে। পরে ক্রমশ বরফ গলতে গলতে পৃথিবীর দুই মেরুতে স্থায়ী হয়। অর্থাৎ গ্রিনল্যান্ড সহ দুই মেরুতে জমে থাকা বরফ বা হিমবাহের বয়স আনুমানিক ১০ হাজার বছর বা তারও বেশি। গবেষকদের ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা এই ‘আদি বরফ’ গলা জলের থেকে বিশুদ্ধ জল আর কিছুই হতে পারে না।

শুনতে আজগুবি মনে হলেও সত্য। বরফ বা হিমবাহ আবার সংগ্রহ করার কোনও বস্তু হল! কিন্তু সংগ্রহ-ই করা হয়। আর এমন আজব ঘটনা ঘটে গ্রিনল্যান্ডে। এক শ্রেণীর মানুষের এখন রীতিমতো লাভজনক জীবিকা এই বরফ বা হিমবাহ সংগ্রহ। সংগ্রহ করা এই বরফের টুকরো তাঁদের মাধ্যমেই পৌঁছে যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এবং তার উপযুক্ত পারিশ্রমিকও তাঁরা পেয়ে থাকেন।
আসলে ডেনমার্কের অধীনস্থ বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো দ্বীপ এই গ্রিনল্যান্ড এর অধিকাংশ স্থানই পড়ছে উত্তর মেরু বা সুমেরু অঞ্চলের মধ্যে। সারা বছরই এখানে প্রায় বরফাচ্ছন্ন থাকে। তাই গ্রীষ্মের মাসগুলি ছাড়া বছরের বাকি সময় এখানে স্থায়ী হওয়া অত্যন্ত কষ্টকর। এখানকার স্থানীয়দের কাছে জীবিকার বিকল্প কোনও ব্যবস্থাও নেই। তবে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে নিজেরাই বেছে নিয়েছেন বিশেষ কিছু কর্মসংস্থান। তার অন্যতম এই বরফ বা হিমবাহ সংগ্রহ। সংগ্রহকারীরা এক্ষেত্রে মাইলের পর মাইল নৌ-যোগে পাড়ি দিতেও পিছপা হন না।
তাঁরা কেন সংগ্রহ করেন এই বরফ বা হিমবাহ? শুনতে যতই আজগুবি মনে হোক, এখানে যুক্তি রয়েছে ষোলোআনা। পৃথিবীতে যে পাঁচবার বরফ যুগ নেমেছিল, তার শেষটির পরিসমাপ্তি ঘটেছিল প্রায় ১৩ হাজার বছর পূর্বে। পরে ক্রমশ বরফ গলতে গলতে পৃথিবীর দুই মেরুতে স্থায়ী হয়। অর্থাৎ গ্রিনল্যান্ড সহ দুই মেরুতে জমে থাকা বরফ বা হিমবাহের বয়স আনুমানিক ১০ হাজার বছর বা তারও বেশি। গবেষকদের ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা এই ‘আদি বরফ’ গলা জলের থেকে বিশুদ্ধ জল আর কিছুই হতে পারে না।
আর তাই এই বরফের মূল্য অপরিসীম। বিশুদ্ধ এই বরফ গলা জল দিয়েই তৈরি হয় দামি বিয়ার বা ওয়াইনের মতো পানীয় দ্রব্য। এমনকি বিভিন্ন ধরণের প্রসাধনী সামগ্রীও তৈরি করতে প্রয়োজন পরে এই জলের। গ্রিনল্যান্ডের বাজারে এক বোতল এই বিশুদ্ধ জলের মূল্য ১০ ডলার প্রায়। গ্রিনল্যান্ড থেকে এই জল পৌঁছে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
এই বরফ বা হিমবাহ সংগ্রহকারীরা সংগ্রহের জন্য এপ্রিল, মে ও জুন মাসকেই সাধারণত বেছে নিয়ে থাকেন। তাঁরা এই বরফ সংগ্রহ করে থাকেন সাগরে ভাসমান ভেঙে যাওয়া হিমবাহের টুকরো থেকে। তবে ভাসমান এই টুকরোগুলির বহিরাবরণে সাগরের নোনা জল লেগে থাকে। সংগ্রহ করার পর তাঁরা সাবধানে বরফ টুকরোগুলির শরীর থেকে সেগুলি ঝেড়ে ফেলেন।