ভেষজ বা প্রাকৃতিক উপাদান থেকে সৃষ্ট ভেষজ আবির ত্বক বা চোখের প্রায় কোনও ক্ষতিই করতে পারে না। তবে এই ভেষজ আবির ব্যবহার সম্পর্কে মানুষ এখনও তেমনভাবে সচেতন নয়। খোলা বাজারে এর মূল্যও সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে থাকে। তবে একাধিক প্রতিষ্ঠানের বারংবার সচেতনতার প্রভাবে এখন পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ ভেষজ আবির ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন।

বিজয় ঘোষাল : আর কিছুদিন পরই দোলযাত্রা বা হোলী। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় এই দোল উৎসবের প্রধান উপাদান আবির। এদিন একে অপরকে বিভিন্ন রঙের আবিরে সাজিয়ে উৎসবের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর রীতি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। তাই দোল উৎসবকে মাথায় রেখে বীরভূম জেলার সাঁইথিয়া ব্লকের ভগবতীপুর গ্রামের বার্ড ফাউন্ডেশন-এর সহায়তায় গ্রামের অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা মহিলারা তৈরি করছেন প্রাকৃতিক উপাদান থেকে ভেষজ আবির। দোলের পূর্বে যার চাহিদা থাকে তুঙ্গে।
বর্তমানে বাজারে রাসায়নিক আবিরের ছড়াছড়ি। যা ত্বক ও চোখের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই ধরনের আবির তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় রেড অষ্কাইড, মেটানিল ইয়েল, ম্যালাকাইট গ্রিন ছাড়াও ক্যাডিয়াম ও সীসার মতো বিষাক্ত রাসায়নিক। ফলে দোল উৎসবের পর একাধিক মানুষ ত্বকের সমস্যায় ভোগেন। এই রঙের ব্যবহারে অনেকের এলার্জি রয়েছে।
অপরদিকে ভেষজ বা প্রাকৃতিক উপাদান থেকে সৃষ্ট ভেষজ আবির ত্বক বা চোখের প্রায় কোনও ক্ষতিই করতে পারে না। তবে এই ভেষজ আবির ব্যবহার সম্পর্কে মানুষ এখনও তেমনভাবে সচেতন নয়। খোলা বাজারে এর মূল্যও সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে থাকে। তবে একাধিক প্রতিষ্ঠানের বারংবার সচেতনতার প্রভাবে এখন পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ ভেষজ আবির ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন।
তাই দোল উৎসবের প্রক্কালে ভেষজ উপাদান তথা প্রাকৃতিক উপাদান থেকে ভেষজ আবির তৈরির মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলাদের আয়ের পথ দেখাচ্ছে আমোদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভগবতীপুর গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বীরভূম ইনস্টিটিউট অব রুরাল ডেভেলপমেন্ট (বার্ড) ফাউন্ডেশন। এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গ্রামের গৃহবধূদের প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে ভেষজ আবির প্রক্রিয়াকরণ শেখাচ্ছে। ভেষজ আবির তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মূলত বিভিন্ন প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান, এই যেমন- জবা ফুল, অপরাজিতা ফুল, পলাশ ফুল, নিম পাতা, গোলাপের পাপড়ি, কাঁচা হলুদ।
আমোদপুরের পাশ্ববর্তী গ্রাম যেমন সাহাপুর, কুচুইঘাটা, ভগবতীপুর গ্রামের বীনা হাজরা, শোভা মন্ডল, পূর্নিমা থান্ডার, জয়শ্রী বাগ্দী, লিপিকা সাহা, ঝুমা বাগ্দী, প্রমুখরা সুগন্ধি তথা ভেষজ আবির তৈরি করছেন। হাতে মাত্র আর কয়েকটা দিন। তাই সকাল থেকে কর্ম ব্যস্তটা ধরা পড়েছে বার্ড ফাউন্ডেশন এর অঙ্গনে। উৎপাদিত আবির এই মহিলাদের মাধ্যমে খোলাবাজার তথা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হবে। এছাড়া শান্তিনিকেতনে ভেষজ আবির বিক্রি করার কথাও তাঁরা ভাবছেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক বিব্রসু পরামানিক জানালেন, তাদের আবির তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ৭০-৮০ কেজি, চাহিদা অনুযায়ী আবির তৈরি করা হবে। প্যাকেট প্রতি দাম রাখা হয়েছে মাত্র ২৫ টাকা। গ্রামীণ মহিলাদের আয়ের পথ দেখানোর জন্য এই প্রয়াস আগামী দিনেও পথ দেখাবে এই রকমভাবে।