আফ্রিকা মহাদেশ যে অতি বিচিত্র তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এই বৈচিত্র্যের মাঝেও অনেক বড় সমস্যা এখানকার শুষ্ক আবহাওয়া। তিনদিক সমুদ্র দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকা স্বত্বেও বছরের পর বছর অনাবৃষ্টি এখানকার পরিবেশকে অতি রুক্ষতা প্রদান করেছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশের অধিবাসীরা এই অনাবৃষ্টির সঙ্গেই নিজেদের জীবনকে গুছিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। তাই মাঝে মধ্যেই তাদের জীবনে তৈরি হয় ভয়ঙ্কর খাদ্য সঙ্কট।

অনলাইন পেপার : অবাক করা এই পৃথিবীর আধুনিক যুগেও দুই বিপরীত চিত্র ভাবিয়ে তুলবে যে কাউকেই। একদিকের চিত্রে দেখা যায় খাদ্যের কোনও অভাব এখানে নেই, বাড়তি খাদ্য নষ্ট হয়ে পচে ওঠে পথের ডাস্টবিনে। অপর ছবিটি ঠিক এর বিপরীত। খাদ্য উৎপাদনের অভাবে এখানে বিন্দু মাত্র দানাও থাকে না খাদ্যের প্রয়োজনে। ফলে অপুষ্টি জনিত সমস্যায় লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে এখানে। খিদের জ্বালা যেন কখনওই মিটতে চায় না এই অঞ্চল থেকে।
‘এই অঞ্চল’-গুলির মধ্যে আফ্রিকার এক বিশাল অঞ্চল মাথা উঁচিয়ে রয়েছে যুগ যুগ ধরে। এমনিতেই আফ্রিকা মহাদেশ যে অতি বিচিত্র তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এই বৈচিত্র্যের মাঝেও অনেক বড় সমস্যা এখানকার শুষ্ক আবহাওয়া। তিনদিক সমুদ্র দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকা স্বত্বেও বছরের পর বছর অনাবৃষ্টি এখানকার পরিবেশকে অতি রুক্ষতা প্রদান করেছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশের অধিবাসীরা এই অনাবৃষ্টির সঙ্গেই নিজেদের জীবনকে গুছিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। তাই মাঝে মধ্যেই তাদের জীবনে তৈরি হয় ভয়ঙ্কর খাদ্য সঙ্কট।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা WFP সম্প্রতি জানিয়েছে, আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আফ্রিকা মহাদেশের সোমালিয়া, কেনিয়া ও ইথিওপিয়ার প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য সঙ্কট-এর মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। কারণ এই অঞ্চলে চলছে ভয়াবহ খরা। যা বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। এর আগের ৩টি মরশুম গিয়েছে সম্পূর্ণ অনাবৃষ্টিতে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েক মাসেও এখানে বৃষ্টির তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। ফলে ফসল ফলানোর কোনও সম্ভাবনা তৈরি হয়নি এখানে। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন গ্রামীণ পরিবেশের মানুষেরা। পানীয় জল ও খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছে গবাদি পশুরাও। নষ্ট হচ্ছে চাষযোগ্য জমি ও ফসল। ফলে নিজেদের অঞ্চল ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে গ্রামীণ পরিবেশের ওই মানুষেরা।
সোমালিয়া, কেনিয়া ও ইথিওপিয়া আফ্রিকার ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ অঞ্চলের মধ্যে পড়ছে। সাধারণত সোমালিয়া, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, জিবুতি, ইরিত্রিয়া ও সুদান-কে নিয়ে গঠিত হয়েছে এই ‘হর্ন অব আফ্রিকা’। এই অঞ্চলটির অবস্থান পূর্ব আফ্রিকার লোহিত সাগরের দক্ষিণ উপকূলে প্রায় ২০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে। এখানে বসবাস করছে প্রায় ৯ কোটিরও বেশি মানুষ। জলবায়ু ও পরিবেশগত বিপর্যয় এই অঞ্চলের সঙ্গী হয়ে থাকে সব সময়। বিগত কয়েক দশকে খাদ্য সঙ্কট, অপুষ্টি জনিত সমস্যা ও দুর্ভিক্ষের কারণে ২ কোটিরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছে এখানে।
এর আগে ২০১১ সালের দীর্ঘ খরায় শুধুমাত্র সোমালিয়াতেই প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল খাদ্যাভাবে। আর এই সময় ইতিমধ্যেই ১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ খাদ্য সঙ্কট-এর মধ্যে রয়েছে। সাহায্য না পেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, আগামী ৬ মাসের জন্য পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রায় ৩২ কোটি ৭০ লক্ষ মার্কিন ডলারের প্রয়োজন পড়বে।