দেবী এদিন রটনা, অপবাদ বা কলঙ্কনাশিনী রূপে পুজো পায়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, পরে ওই বিশেষ দিনকে বলা হতে থাকে রটন্তী চতুর্দশী। এই দিনে পুজো হয় বলে তাকে বলা হয়েছে রটন্তী কালী। রটন্তী কালী-র কথা মধ্যযুগের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও উল্লেখ রয়েছে। মাঘ মাসের এই বিশেষ দিনে আজও বাংলার বিভিন্ন গ্রাম বা শহরে করা হয় দেবী কালীর বিশেষ আরাধনা। এমনকি প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দিরগুলিতেও এদিন বিশেষভাবে কালী পুজোর আয়োজন করা হয়।

জনদর্পণ ডেস্ক : কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতেই যে শুধু কালী পুজো করতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। সপ্তাহের প্রতি শনি-মঙ্গলবারেও কালী পুজোর আয়োজন করা হয় মন্দিরে মন্দিরে। অথবা প্রতি অমাবস্যা তিথিতেও বিশেষভাবে কালী পুজোর আয়োজন হয়ে থাকে। এছাড়াও রয়েছে বছরের কোনও না কোনও বিশেষ দিন। এই দিনগুলিতে অঞ্চল ভেদে লোক বিশ্বাস অনুযায়ী কালী পুজো হয়ে থাকে। যাকে সাধারণ কথায় ‘কাম্যপুজো’ বলা হয়ে থাকে।
এখানে রটন্তী কালী তেমনই একটি কাম্যপুজোর উদাহরণ। এই পুজো হয়ে থাকে মাঘ মাসের কৃষ্ণচতুর্দশীতে। এই বিশেষ দিনটিকে আবার রটন্তী চতুর্দশীও বলা হয়। পুজোর সময় হিসাবে বেছে নেওয়া হয় মধ্যরাত-কে। সব কিছুরই একটা বিশেষ তাৎপর্য থাকে। রটন্তী কালী পুজোরও রয়েছে। কী সেই তাৎপর্য?
অনেকের ধারণা ‘রটনা’ থেকেই এসেছে রটন্তী। যার অন্য অর্থ প্রচার বা অপবাদ। অর্থাৎ দুইভাবে রটন্তী কালী-র জন্ম হতে পারে। প্রথমত, কোনও বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এই কালী পুজোর সূচনা হয়েছিল। পরে রটনা বা প্রচার পেয়ে বৃহৎ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। দ্বিতীয়ত, অপবাদ বা অপপ্রচার রুখতে মহাশক্তির কাছে প্রার্থনা জানাতে রটন্তী কালী পুজোর শুরু হয়েছে।
‘ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ’-এ এর কিছুটা আভাস পাওয়া যায়। শ্রীরাধিকার স্বামী ছিলেন আয়ান ঘোষ। যিনি আবার ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের নিজের মামা। এদিকে শ্রীরাধিকা মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে শ্রীকৃষ্ণকে। তাই আয়ান ঘোষকে বিয়ে করলেও তার মন পড়ে থাকে শ্রীকৃষ্ণের কাছে। গোপনে তাদের সাক্ষাতও হতে থাকে কুঞ্জবনে।
এদিকে শ্রীরাধিকার শাশুড়ি কুটিলা ছিল বড্ড বেশি সন্দেহ বাতিক মহিলা। শ্রীরাধিকার উপর সন্দেহ করতে শুরু করে। বিভিন্নভাবে রাধিকার মনোভাব জানতে চায়। কিন্তু কোনওভাবেই সফল হতে পারে না।
একদিন সেই উদ্দেশ্য পূরণের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে যায় কুটিলা। কুঞ্জবনে দেখে ফেলে রাধিকার কৃষ্ণ সঙ্গ। হাতেনাতে ধরার জন্য খবর দেয় আয়ান ঘোষকে। খবর পেয়ে আয়ান ঘোষও সন্দেহের বশে উপস্থিত হয় কুঞ্জবনে। কিন্তু ততক্ষণে শ্রীকৃষ্ণের লীলায় দৃশ্যপট পালটে যায়। শ্রীরাধিকাকে অপবাদের হাত থেকে বাঁচাতে শ্রীকৃষ্ণ রূপ ধরে মা কালীর। আয়ান ঘোষ ও কুটিলা উভয়েই দেখতে পায়, কুঞ্জবনে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্বয়ং মা কালী। আর তার পদতলে বসে রাধিকা দেবী কালীর সেবা করছে। সেবারের মতো কলঙ্ক বা অপবাদের হাত থেকে রক্ষা পায় শ্রীরাধিকা।
সেই থেকে ওই বিশেষ দিনেই শুরু হতে থাকে কালী পুজো। দেবী এদিন রটনা, অপবাদ বা কলঙ্কনাশিনী রূপে পুজো পায়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, পরে ওই বিশেষ দিনকে বলা হতে থাকে রটন্তী চতুর্দশী। এই দিনে পুজো হয় বলে তাকে বলা হয়েছে রটন্তী কালী।
রটন্তী কালী-র কথা মধ্যযুগের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও উল্লেখ রয়েছে। মাঘ মাসের এই বিশেষ দিনে আজও বাংলার বিভিন্ন গ্রাম বা শহরে করা হয় দেবী কালীর বিশেষ আরাধনা। এমনকি প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দিরগুলিতেও এদিন বিশেষভাবে কালী পুজোর আয়োজন করা হয়।