এমনিতেই মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝের অঞ্চল (অ্যাস্টারয়েড বেল্ট)-কে গ্রহাণু-দের রাজ্য হিসাবেই চিহ্নিত করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। অধিকাংশ গ্রহাণু এই অঞ্চলে অবস্থান করেই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে থাকে। কিন্তু তাদের নির্দিষ্ট কোনও কক্ষপথ থাকে না। তাই মাঝে মধ্যেই তারা প্রদক্ষিণকালে পৃথিবীর কক্ষপথে চলে আসে। আর তখনই পৃথিবীতে তাদের আছড়ে পড়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। অতীতে এই সম্ভাবনা বহুবারই তৈরি হয়েছে। তবে নাসা জানিয়েছে (৭৪৮২) ১৯৯৪ পিসি-১ গ্রহাণু-টি অ্যাস্টারয়েড বেল্ট-এ অবস্থান করছে না।

অনলাইন পেপার : একাধিক গবেষক দাবি করেন, প্রায় ৬ কোটি বছর আগে কোনও এক ভয়ঙ্কর গ্রহাণু-র আঘাতে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলুপ্ত ঘটেছিল দাবনাকৃতি ডাইনোসরদের। এর আগে যারা প্রায় ১৬ কোটি বছর ধরে পৃথিবী জুড়ে দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করে গিয়েছে। এই ঘটনা যদি সত্য হয়, তবে ধরেই নেওয়া যেতে পারে, কোনও একটি সভ্যতাকে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে গ্রহাণু।
তাই জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গ্রহাণু-দের মাঝে মধ্যেই সন্দেহের চোখে দেখে থাকেন, অন্তত যে সমস্ত গ্রহাণু চলা পথে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে চায়। সম্প্রতি এমনই একটি গ্রহাণু পৃথিবীর দিকেই ধেয়ে আসছে বলে জনিয়েছে নাসা। যদিও এই প্রথমবার নয়, ওই গ্রহাণু-টি এর আগেও বেশ কয়েকবার পৃথিবীকে পাশ কাটিয়ে বা বলা চলে ‘ভয় দেখিয়ে’ আশঙ্কাজনকভাবে পেরিয়ে গিয়েছে। তেমন কোনও ক্ষতি অবশ্য সে করতে পারেনি। আর এবারও সে ভয়ঙ্করভাবেই এগিয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গ্রহাণু-টির নাম রেখেছেন (৭৪৮২) ১৯৯৪ পিসি-১। নাসা জানিয়েছে, গ্রহাণু-টির উচ্চতা হতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং-এর উচ্চতার থেকেও আড়াই গুণ বেশি। নিউইয়র্ক শহরের এই এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং-এর উচ্চতা প্রায় ৩৮১ মিটার বা ১২৫০ ফুট। এই হিসাবে গ্রহাণু-টির উচ্চতা হবে প্রায় ৯৫২ মিটার বা ৩১২৫ ফুট। এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১ কিলোমিটার। এর গতিবেগও আশঙ্কাজনক বলেই জানিয়েছে নাসা। পৃথিবীর খুব কাছে এসে পৌঁছালে এর গতিবেগ হতে পারে প্রায় ১৯ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড বা ৭০ হাজার ৪১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
এমনিতেই মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝের অঞ্চল (অ্যাস্টারয়েড বেল্ট)-কে গ্রহাণু-দের রাজ্য হিসাবেই চিহ্নিত করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। অধিকাংশ গ্রহাণু এই অঞ্চলে অবস্থান করেই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে থাকে। কিন্তু তাদের নির্দিষ্ট কোনও কক্ষপথ থাকে না। তাই মাঝে মধ্যেই তারা প্রদক্ষিণকালে পৃথিবীর কক্ষপথে চলে আসে। আর তখনই পৃথিবীতে তাদের আছড়ে পড়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। অতীতে এই সম্ভাবনা বহুবারই তৈরি হয়েছে।
তবে নাসা জানিয়েছে (৭৪৮২) ১৯৯৪ পিসি-১ গ্রহাণু-টি অ্যাস্টারয়েড বেল্ট-এ অবস্থান করছে না। তার অবস্থান পৃথিবীর খুব কাছের কোনও অঞ্চলে। এই অঞ্চলে তাদের ধারণা আরও প্রায় ২৬ হাজার গ্রহাণু রয়েছে। আর এই অঞ্চলের গ্রহাণু-দের খুবই বিপজ্জনক গ্রহাণু বলেই মনে করেন নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই (৭৪৮২) ১৯৯৪ পিসি-১ কে ‘সভ্যতার জন্য বিপজ্জনক’ বলে দাবি করেছেন। কারণ প্রদক্ষিণকালে এটি বারংবারই পৃথিবীর খুব কাছে এসে পৌঁছাচ্ছে। এর আগে ১৯৩৩, ১৯৭৪ ও ১৯৯৪ সালে পৃথিবীর খুব কাছে এসে পৌঁছেছিল। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের পর এটি আবারও পৃথিবীর খুব কাছে আসবে ২১০৫ সালের ১৮ জানুয়ারি। তবে এবছর পৃথিবীর খুব কাছে এসে পৌঁছালেও এখনও পর্যন্ত বিপদের কোনও কারণ নেই বলেই জানিয়েছেন নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। অন্তত গ্রহাণু-টির বর্তমান গতিপথ লক্ষ্য করে তেমনটিই জানা যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তার গতিপথের যদি কোনও পরিবর্তন না ঘটে, তবে পৃথিবী থেকে ওই গ্রহাণু-টির সবচেয়ে কম দূরত্ব হতে পারে চাঁদের দূরত্বের প্রায় ৫ গুণ।