প্রথম দিকে করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যে ভ্যাকসিনগুলিকে বাজারে আনা হয়েছিল, তার লক্ষ্য ছিল, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া থেকে আটকানো, অন্তত সংক্রমণের যে পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হন অথবা মারা যান। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই টিকাকরণ করোনা সংক্রমণকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করার জন্য ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তিনি যেন গুরুতর অসুস্থ হয়ে না পড়েন, তার জন্য।

অনলাইন পেপার : করোনা-র তৃতীয় ঢেউ চলছে এখন দেশে দেশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ফ্রান্স, ইতালি আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলিতে প্রতিদিন গড় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১ লাখের উপর। এদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ফ্রান্স আর ইতালির অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। এখানে প্রতিদিন গড় আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের অন্য দেশগুলির অবস্থাও কম-বেশি প্রায় একই। যদিও এই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অতি সংক্রামক ডেলটা ও ওমিক্রন-কে এর জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, অধিকাংশ দেশ করোনা ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই সম্পূর্ণ করার পথে। তা সত্ত্বেও করোনা-র তৃতীয় ঢেউকে আটকানো সম্ভব হয়নি। এমনকি যাঁরা দুটি ডোজ গ্রহণ করেছেন, তাঁরাও করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই অনেকেই ভ্যাকসিনের উপর সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে অনেকে আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ব্যক্তও করতে শুরু করেছেন এবং সেই সঙ্গে ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার প্রচার করতেও শুরু করেছেন।
যদিও ভালো রকমভাবে কিছু না জেনে বা বুঝে ক্ষোভ প্রকাশ করাকে একেবারেই অনুচিত বলে মনে করছেন করোনা বিশেষজ্ঞরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এব্যাপারে মিথ্যাচার প্রচার করার পক্ষপাতীও নন তাঁরা। কিন্তু এটা অবশ্যই ঠিক, করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণের পরও অনেকেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ব্যাপারটা আসলে কী?
বিবিসি সংবাদ মাধ্যমে সম্প্রতি এবিষয়ে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। ব্রাজিলের ভ্যাক্সিনেশন সোসাইটির পরিচালক রেনাটো কেফুরি বিবিসি-কে জানিয়েছেন, প্রথম দিকে করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যে ভ্যাকসিনগুলিকে বাজারে আনা হয়েছিল, তার লক্ষ্য ছিল, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া থেকে আটকানো, অন্তত সংক্রমণের যে পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হন অথবা মারা যান। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই টিকাকরণ করোনা সংক্রমণকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করার জন্য ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তিনি যেন গুরুতর অসুস্থ হয়ে না পড়েন, তার জন্য।
তৃতীয় ঢেউ চলাকালের চিত্রটাও অনেকটা মি. কেফুরি-র বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। বিশ্ব জুড়ে করোনা-য় আক্রান্তের হার, গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মারা যাওয়ার হার পর্যবেক্ষণ করে জানা যাচ্ছে, প্রতিদিন করোনা-য় আক্রান্তের হার যেভাবে বাড়ছে, হাসপাতালে ভর্তি ও মারা যাওয়ার হার সেই তুলনায় খুবই কম। হু (WHO) ও ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোলের একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, শুধুমাত্র ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্যই ইউরোপের ৩৩টি দেশের ৪ লাখ ৭০ হাজার ষাটোর্ধ ব্যক্তিকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
তাই করোনা-র বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প কোনও পথ খোলা নেয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এব্যাপারে বর্তমান ভ্যাকসিনগুলি খুব ভালোভাবেই কাজ করছে বলেও মনে করছেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞরা আবার বুস্টার ডোজ গ্রহণ করারও পক্ষপাতী। এব্যাপারে তাঁরা জানিয়েছেন, সময়ের ব্যবধানে সুরক্ষাবলয় দুর্বল হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর সময় যত এগিয়ে যাবে, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে থাকবে। তখন প্রয়োজন পড়বে তৃতীয় ডোজের।