মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েগন স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক দাবি করছেন, গাঁজা করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে। গাঁজা-র মধ্যে থাকা ক্যানাবিজেরোলিক অ্যাসিড ও ক্যানাবিডিওলিক অ্যাসিড যৌগ দুটি করোনা ভাইরাসের বহিঃআবরণে থাকা স্পাইক প্রোটিনের অংশগুলিকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে করোনা ভাইরাস মানব শরীরে প্রবেশ করলেও কোনও রকম সংক্রমণ ঘটাতে পারবে না। যদিও এবিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে ওই গবেষক দলটি মনে করছে।

অনলাইন পেপার : যুগ যুগ ধরে গাঁজা-কে মানুষ মাদক দ্রব্য হিসাবেই দেখে এসেছে। এই দ্রব্যের সেবনে বিভিন্ন রকম নেতিবাচক শারীরবৃত্তীয় প্রভাব প্রকাশ পায়, তাই বিশ্বের অধিকাংশ দেশই একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তবুও বিশ্বের এক বিরাট সংখ্যক মানুষ এই গাঁজা-কেই নিয়েছেন আপন করে। ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে ১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সীরাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন এই গাঁজা। সমগ্র বিশ্বের হিসাবে সেই সংখ্যা প্রায় ২.৭ থেকে ৪.৯ শতাংশ।
তবে গাঁজা যতই নিষিদ্ধ হোক। চিকিৎসাশাস্ত্রে এর ব্যবহার রয়েছে সুপ্রাচীনকাল থেকে। এমনকি ভারতীয় প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। মূলত ব্যথা নাশক ওষুধ তৈরিতে চিকিৎসাশাস্ত্রে একে ব্যবহার করা হয়। আর এবার বিশ্বব্যাপী চলা করোনা সংক্রমণের প্রভাব দমনে এই গাঁজা-কেই হাতিয়ার হিসাবে পেতে চাইছেন একদল বিজ্ঞানী। সম্প্রতি মার্কিন বিজনেস ম্যাগাজিন ‘ফোবর্স’-এ এবিষয়ে একটি গবেষণা মূলক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
ওই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েগন স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক দাবি করছেন, গাঁজা করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে। গাঁজা-র মধ্যে থাকা ক্যানাবিজেরোলিক অ্যাসিড ও ক্যানাবিডিওলিক অ্যাসিড যৌগ দুটি করোনা ভাইরাসের বহিঃআবরণে থাকা স্পাইক প্রোটিনের অংশগুলিকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে করোনা ভাইরাস মানব শরীরে প্রবেশ করলেও কোনও রকম সংক্রমণ ঘটাতে পারবে না। যদিও এবিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে ওই গবেষক দলটি মনে করছে। তাঁদের এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘জার্নাল অব ন্যাচারাল প্রোডাক্টস’-এ।
গবেষক দলটি আরও জানিয়েছে, গাঁজা-য় উপস্থিত থাকা ওই দুটি যৌগ করোনা সংক্রমণ রুখে দিতে পারে। এমনকি করোনার বেটা ও আলফা ভ্যারিয়েন্ট-এর বিরুদ্ধেও সমান কার্যকর। আর এই যৌগ দুটি খুব সহজেই গাঁজা-র শণ ও শণের নির্যাস থেকে পাওয়া সম্ভব। যা করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যারা নিয়মিত বা অনিয়মিত গাঁজা সেবন করে তাদের করোনা সংক্রমণ ঘটবে না, এমন কোনও কথা নেই।
নিষিদ্ধ এই দ্রব্যটিতে রয়েছে টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (টিএইচসি)-এর মতো সাইকোঅ্যাক্টিভ উপাদান। এছাড়াও এতে রয়েছে ক্যানাবিডিওল (সিবিডি), ক্যানাবিনল (সিবিএন), ক্যানাবিগেরো (সিবিজি), টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিভারিন (টিএইচসিভি), ক্যানাবিজেরোলিক এর মতো ৮৪টি ক্যানাবিনোয়েডস। সরাসরি গাঁজা সেবনে এর ক্ষতিকারক প্রভাব রয়েছে প্রচুর। তাই বারংবার এর থেকে দূরে থাকার কথা প্রচার করা হয়।