উৎকৃষ্ট এই খেজুর রস সূর্যের তাপ সহ্য করতে পারে না। ইস্ট-এর আক্রমণে রসে অম্লতার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই গ্রীষ্মের মরশুমে খেজুর রস পাওয়া মুশকিল। গাছি-রা সাধারণত কার্তিকের শেষে যখন শীতের হালকা শিরশিরানি শুরু হয়, প্রায় তখন থেকে ফাল্গুনের শেষ সময় পর্যন্ত খেজুর গাছ কেটে থাকেন। পরে ধীরে ধীরে খেজুর রসের মান ও পরিমাণ দুই-ই কমতে শুরু করে। খেজুর রস পাওয়ার জন্য গাছি-রা সূর্যের অনুপস্থিতিকে লক্ষ্য রাখেন।

জনদর্পণ ডেস্ক : বঙ্গে শীত এখন ফুল ফর্মে। প্রায় প্রতিদিনই চলছে নতুন নতুন রেকর্ড ভাঙার খেলা। বাতাসের তাপমাত্রা থাকছে স্বাভাবিকের ২ থেকে ৩ ডিগ্রী নিচে। আর এমন হাড় কাঁপানো শীত এলেই নলেন গুড়ের কথা মনে পড়ে যায়। এই গুড় দিয়েই তো তৈরি হয় বিচিত্র রকমের পীঠে আর পায়েস। বাঙালি এই পীঠে আর পায়েসের জন্য শীতের অপেক্ষায় থাকে সারা বছর। এবার তার অবসান ঘটেছে বলতে হবে।
‘নলেন গুড়’ শব্দটা কীভাবে এসেছে, তা নিয়ে রয়েছে অসংখ্য বিতর্ক। তবে বিতর্ক যতই থাক, নলেন গুড় যে আসলে খেজুর গুড়-কেই বলা হয়, এবিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই। এই নলেন গুড় তৈরি হয় খেজুর রস থেকে। খেজুর রস আগুনের তাপে বাষ্পীভূত করে বা জ্বাল দিয়ে এই গুড় পাওয়া সম্ভব। তাই শীতের এই মরশুমে নলেন গুড় বা খেজুর গুড়ের পাশাপাশি খেজুর রসের চাহিদাও নেহাত কম নয়। অবশ্য শীতের মরশুম ছাড়া এই রস অন্য কোনও ঋতুতে পাওয়াও সম্ভব নয়।
সাধারণত এই বঙ্গদেশের খেজুর গাছে যে খেজুর ফলে, তা উৎকৃষ্ট নয়। এই সমস্ত খেজুর আকারে ছোটো ও কম শাঁসযুক্ত হয়ে থাকে। তাই খেজুরের জন্য এই গাছগুলির ব্যবহার কম। তবে শীতের মরশুমে এই গাছ যেন স্বর্গের ‘ইচ্ছা বৃক্ষ’ হয়ে ওঠে। কারণ গাছি-রা তখন তাঁদের অপূর্ব কৌশলে এর মুণ্ড ছেদন করে অমৃত সমান খেজুর রস বের করে আনেন। যা পরে নলেন গুড়ে রূপান্তরিত হয়।
উৎকৃষ্ট এই খেজুর রস সূর্যের তাপ সহ্য করতে পারে না। ইস্ট-এর আক্রমণে রসে অম্লতার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই গ্রীষ্মের মরশুমে খেজুর রস পাওয়া মুশকিল। গাছি-রা সাধারণত কার্তিকের শেষে যখন শীতের হালকা শিরশিরানি শুরু হয়, প্রায় তখন থেকে ফাল্গুনের শেষ সময় পর্যন্ত খেজুর গাছ কেটে থাকেন। পরে ধীরে ধীরে খেজুর রসের মান ও পরিমাণ দুই-ই কমতে শুরু করে। খেজুর রস পাওয়ার জন্য গাছি-রা সূর্যের অনুপস্থিতিকে লক্ষ্য রাখেন। তাই আগের দিন সন্ধ্যার কিছু আগে খেজুর গাছে রসের ভাঁড় ঝুলিয়ে রাখেন। আর তা নামিয়ে আনেন পরের দিন ভোরবেলা সূর্য ওঠার কিছু আগে। তারপর আগুনে বাষ্পীভূত করে তৈরি করেন নলেন গুড়।
স্বাদ ও গন্ধের পাশাপাশি খেজুর রস-এর পুষ্টিগুণও সমান আকর্ষণীয়। বহু উপাদানের সমষ্টি হওয়ায় এর উপকারিতাও রয়েছে যথেষ্ট। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপন্ন এই সুমধুর পানীয়তে দ্রবীভূত রয়েছে গ্লুকোজ, মিনারেল, প্রোটিন আর ফ্যাট। খনিজের মধ্যে এই পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে লৌহ, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম। এমনকি বেশ কয়েকটি ভিটামিনও রয়েছে এই খেজুর রস-এ।
ফলে নিয়মিত পান করলে শরীরে অতিরিক্ত এনার্জি পাওয়া যায়। তবে সদ্য গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুর রস বা কাঁচা রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকা আবশ্যক। কারণ অনেক সময় রসের অতিরিক্ত মিষ্টতার জন্য অনেক ক্ষতিকারক পতঙ্গ আকৃষ্ট হয়ে রসে নিমজ্জিত হয়ে যায়। তখন কাঁচা রস খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।