বাড়িতে অভাব চলছে চরম। এই অবস্থায় যে কোনও প্রকারে সংসারের হাল ধরা ছাড়া অন্য কোনও উপায়ও ছিল না হাদিয়া আহমাদির কাছে। নিজেই নেমে পড়লেন কাবুলের পথে। কনকনে ঠাণ্ডায় পথের ধারে বসে জুতো পালিশের কাজ শুরু করলেন এই এক সময়ের স্কুল শিক্ষিকা। দিন শেষে যা কিছু জোটাতে পারেন, তা দিয়েই কোনওরকমে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন তিনি। তবে আশা ছাড়তেও নারাজ এই স্কুল শিক্ষিকা। তাঁর মতে, পরিবারের অর্থ সংস্থানে সাহায্য করতে অবশ্যই মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে চাকরি করতে দিতে হবে তালিবানকে।

অনলাইন পেপার : ছিলেন শিক্ষিকা। একরাশ স্বপ্ন নিয়ে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মেয়েদের একটি স্কুলে পড়াতেন। ইচ্ছা ছিল দেশের মেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। তাঁর শিক্ষায় শিক্ষিত মেয়েরা সমাজে অন্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে, উপার্জন করবে আর নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু কয়েকদিনের ‘হঠাৎ ঝড়’-এ সব কিছুই যেন এলোমেলো হয়ে গেল। তাঁর স্বপ্ন, ইচ্ছা আর আকাঙ্ক্ষা সমস্ত কিছুই যেন মুহূর্তের মধ্যে মিলিয়ে গেল। কারণ তিনি এখন পথের ধারে বসে পেটের দায়ে জুতো পালিশ করছেন।
এমনটি যে হবে তা হয়তো আফগানিস্থানের হাদিয়া আহমাদি (নাম পরিবর্তিত)-র কল্পনাতেও ছিল না কখনও। কিন্তু এমনটিই ঘটল অবশেষে। গত আগস্টে সমগ্র আফগানিস্থান তালিবানের ক্ষমতায় চলে যাওয়ার পর বদলে গিয়েছে এই দেশের অনেক কিছুই। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন দেশের মহিলারা। সবার প্রথমে কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাঁদের কর্মক্ষেত্র। কোনও কোনও অঞ্চলে মহিলাদের পরিবারের পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়াও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে সমস্যায় পড়েছে সেই সমস্ত পরিবারগুলি, যাদের একমাত্র রোজগার করেন কোনও মহিলা।
যদিও হাদিয়া আহমাদি তাঁর পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন না। আল জাজিয়া সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি ৫ সন্তানের মা। পরিবারে হাদিয়ার পাশাপাশি তাঁর স্বামী ও বড়ো মেয়ে রোজগার করতেন। তিনি নিজে কাবুলের একটি মেয়েদের স্কুলে প্রায় ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছিলেন। তাঁর স্বামী একটি বেসরকারি সংস্থায় রান্নার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর তাঁর মেয়ে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বেশ সচ্ছল ছিল তাঁদের মধ্যবিত্ত পরিবারটি।
তবে তালিবান ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই সবকিছু কেমন যেন ওলটপালট হয়ে গেল তাঁদের। সবার প্রথমেই বন্ধ হয়ে গেল মেয়েদের স্কুল। আর সেই সঙ্গে চাকরি হারালেন তিনিও। এরপর একে একে চাকরি হারালেন তাঁর মেয়ে ও তাঁর স্বামী। তাঁদের সুখের মধ্যবিত্ত পরিবারে মুহূর্তের মধ্যে নেমে এল অভাবের কালো ছায়া। তাঁর ছেলে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ছিল। অভাবের কারণে তাঁরও পড়াশুনা এখন বন্ধ।
বাড়িতে অভাব চলছে চরম। এই অবস্থায় যে কোনও প্রকারে সংসারের হাল ধরা ছাড়া অন্য কোনও উপায়ও ছিল না হাদিয়া আহমাদির কাছে। নিজেই নেমে পড়লেন কাবুলের পথে। কনকনে ঠাণ্ডায় পথের ধারে বসে জুতো পালিশের কাজ শুরু করলেন এই এক সময়ের স্কুল শিক্ষিকা। দিন শেষে যা কিছু জোটাতে পারেন, তা দিয়েই কোনওরকমে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন তিনি। তবে আশা ছাড়তেও নারাজ এই স্কুল শিক্ষিকা। তাঁর মতে, পরিবারের অর্থ সংস্থানে সাহায্য করতে অবশ্যই মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে চাকরি করতে দিতে হবে তালিবানকে।
এদিকে আফগানিস্থানে তালিবান ক্ষমতায় আসার পরই বিদেশ থেকে আসা অর্থ সাহায্য প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে চরম অর্থ সংকটের মধ্যে রয়েছে সমগ্র আফগানিস্থান। ডব্লিউএফপি (WFP)-র রিপোর্ট অনুযায়ী, এদেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখন খাদ্য সংকটে ভুগছে। এর মধ্যে ৩০ লক্ষেরও বেশি শিশু রয়েছে অপুষ্টি জনিত সমস্যায়।