LAIKA : মহাকাশে প্রথম শহিদ হয়েছিল যে মহাকাশচারী

Advertisement

LAIKA (১৯৫৪-১৯৫৭)-কে যখন মহাকাশ কেন্দ্রে আনা হয়েছিল, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩ বছর ও ভর ছিল প্রায় ৬ কেজি। LAIKA-র পিতৃ বা মাতৃ পরিচয় জানা না গেলেও সে ছিল হাস্কি প্রজাতির একটি মেয়ে কুকুর। LAIKA (এটি একটি রুশ শব্দ)-র  আক্ষরিক অর্থ ‘যে ঘেউ ঘেউ করে’। LAIKA-র প্রশিক্ষণ খুব সহজ ছিল না। পথের কুকুরকে ধরে এনে শিক্ষা দেওয়া ছিল খুব কঠিন। এতে তাকে অনেক ধকল সহ্য করতে হয়েছিল।


LAIKA : মহাকাশে প্রথম শহিদ হয়েছিল যে মহাকাশচারী
Symbolic Image – Image by NASA-Imagery from Pixabay

ধ্রুব পাল : আজ থেকে ঠিক ৬৪ বছর আগে নভেম্বরের ৩ তারিখে রাশিয়ান মহাকাশ বিজ্ঞানীরা ঘটিয়েছিলেন এক যুগান্তকারী ঘটনা। যে ঘটনার পর সমগ্র পৃথিবীবাসী আশ্বস্ত হতে পেরেছিল, মহাকাশেও প্রাণীদের বেঁচে থাকা সম্ভব। তারপরই মানুষ মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার সাহস অর্জন করে।

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর স্পুটনিক ১ এর সফল অভিযানের পর রুশ নেতা নিকিতা রুসেভ নভেম্বরের বলসেভিক বিপ্লবের ৪০তম বর্ষপূর্তিতে দ্বিতীয় আর একটি মহাকাশ অভিযানের ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। অর্থাৎ হাতে তখন সময় ছিল ১ মাসেরও কম। নির্দেশ ছিল এই অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ সারতে হবে। আর সেই সঙ্গে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা চাইছিলেন এবার কোনও জীবন্ত প্রাণীকে মহাকাশে পাঠিয়ে সমগ্র পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দেবেন। তাই খুব দ্রুত তৈরি হতে থাকে স্পুটনিক ২।

সময় কম থাকায় গবেষকরা খুব দ্রুত অপেক্ষাকৃত সাধারণ ও নিম্নমানের একটা নকশা বানালেন। যার ফলে স্পুটনিক ২ ছিল অনেক নিচু মানের ও অপরীক্ষিত যন্ত্রপাতি দিয়ে তৈরি মহাকাশযান।

এবার প্রয়োজন পড়ল এমন একটি প্রাণীর যে তাঁদের এই পুরো প্রক্রিয়াটি নির্বিঘ্নে সমাপ্ত করতে পারবে। হ্যাঁ, কুকুর হলে মন্দ হয় না। বেছে নেওয়া হল পাড়ার গলিপথে আর পাঁচটা কুকুরের সঙ্গে অবহেলায় বেড়ে ওঠা অতি সাধারণ ৩টে কুকুরকে। গলি পথের কুকুর নেওয়ার কারণ, এরা অন্য পোষা কুকুরের থেকে অনেক বেশি সহনশীল। এই ৩টি কুকুরের মধ্যে LAIKA বা ‘লাইকা’ গবেষকদের সমস্ত পরীক্ষায় পাশ করে মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার ছাড়পত্র আদায় করে নিয়েছিল।

LAIKA (১৯৫৪-১৯৫৭)-কে যখন মহাকাশ কেন্দ্রে আনা হয়েছিল, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩ বছর ও ভর ছিল প্রায় ৬ কেজি। লাইকার পিতৃ বা মাতৃ পরিচয় জানা না গেলেও সে ছিল হাস্কি প্রজাতির একটি মেয়ে কুকুর। LAIKA (এটি একটি রুশ শব্দ)-র  আক্ষরিক অর্থ ‘যে ঘেউ ঘেউ করে’।

LAIKA-র প্রশিক্ষণ খুব সহজ ছিল না। পথের কুকুরকে ধরে এনে শিক্ষা দেওয়া ছিল খুব কঠিন। এতে তাকে অনেক ধকল সহ্য করতে হয়েছিল। এমনিতেই স্পুটনিক ২-এর কেবিনটি ছিল খুব ছোটো। তাই LAIKA-কে সেখানে অভ্যস্ত করানোর জন্য এর থেকেও ছোটো একটি কেবিনে ২০ দিন পর্যন্ত আটকে রাখা হয়েছিল। এর ফলে LAIKA-র শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। যদিও প্রশিক্ষকরা বুঝতে পেরেছিলেন দীর্ঘ দিনের প্রশিক্ষণ ছাড়া কোনও ফল হবে না। কিন্তু হাতে সময় ছিল একেবারেই কম।

মহাকাশযানটিতে জীবন ধরণের জন্য একটি অক্সিজেন উৎপাদক ও কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছিল। এছাড়াও একটি পাখা ছিল যা কেবিনটির তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে গেলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠত। LAIKA-র জন্য প্রয়োজনীয় খাবার আকারে ছিল জেলিটিন। তার মল-মূত্র সংগ্রহের জন্যেও ছিল উপযুক্ত ব্যবস্থা। সে যেন ছোট্ট কেবিনটিতে খুব বেশি নড়াচড়া করতে না পারে, তার জন্য তাকে একটি হারনেস পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং ওই হারনেসটি কেবিনের সঙ্গে শিকল দিয়ে আটকানো ছিল। LAIKA-কে কৃত্রিম উপগ্রহের ভিতর এই কেবিনটিতে স্থাপন করা হয়েছিল ৩১ অক্টোবর।

এরপর চলে এল দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেই দিন অর্থাৎ ৩ নভেম্বর। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আগের দিন রাত থেকেই ছিলেন দারুণ ব্যস্ত। ইতস্তত ছোটোছুটি সর্বত্র। শুধু একজনই ছিল নির্বিকার। সে LAIKA। যাকে নিয়ে এত ব্যস্ততা, সে আসলে বুঝতেই পারছিল না যে সে-ই আজ ‘বলির পাঁঠা’ হতে চলেছে। কারণ না ফেরার দেশে যাওয়ার এটাই ছিল তখন শেষ প্রস্তুতি।

একরাশ ধুলো ও ছাই উড়িয়ে মহাকাশের দিকে ছুটে চলল স্পুটনিক ২। কিছুক্ষণ পরে নির্দিষ্ট কক্ষপথে তাকে স্থাপনও করা হল। পরীক্ষায় পাশ হয়ে গেল, মহাকাশে ভরশূন্য অবস্থাতেও বেঁচে থাকা সম্ভব। প্রায় ৫ মাস পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চলল স্পুটনিক ২। এরই মধ্যে রাশিয়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যা গবেষণা করার তা সবই প্রায় করে ফেলেছেন। এবার স্পুটনিক ২-কে ফিরিয়ে আনার পালা।

কিন্তু হায়! এতকিছুর পরেও শেষ রক্ষা যেন আর হল না। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ফিরিয়ে আনতে পারলেন না স্পুটনিক ২-কে। ফিরিয়ে আনার পথে পৃথিবীর কাছাকাছি পৌঁছে প্রচণ্ড এক বিস্ফোরণে ফেটে গেল প্রথম প্রাণী পরিবাহী মহাকাশযান এই স্পুটনিক ২। আর সেই সঙ্গে চিরতরে হারিয়ে গেল পৃথিবীর প্রথম মহাকাশচারী LAIKA-ও।

এতদূর পর্যন্ত অবশ্য কারোরই অজানা ছিল না। কিন্তু পরে জানা যায়, সোভিয়েত রাশিয়া দীর্ঘদিন লাইকার প্রকৃত মৃত্যু রহস্য গোপন রেখেছিল। পূর্বে জানা গিয়েছিল ৫ মাস প্রদক্ষিণের পর স্পুটনিক ২ বিস্ফোরণ হওয়ার সময় লাইকার মৃত্যু ঘটেছিল। পরে তারা ঘোষণা করে মহাকাশে মাত্র ৭ দিন বেঁচে ছিল লাইকা। কেবিনের যান্ত্রিক ত্রুটির ফলে অত্যধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ছিল তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। এক্ষেত্রে মৃত্যুর পূর্বাবস্থার হৃদস্পন্দন বিশ্লেষণ করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন সেসময় ভয় পেয়ে হয়তো লাইকার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল।

Advertisement
Previous articlePAXLOVID হতে চলেছে করোনার দ্বিতীয় খাওয়ার ওষুধ
Next articleZIKA VIRUS : এবার এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক থাকার সময় এসেছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here