সৌর ঝড় থেকে সৃষ্টি হয়ে ছুটে আসা সৌর কণা বা মহাজাগতিক রশ্মিগুলি প্রাণীদের পক্ষে মোটেও সুখকর নয়। যদি ঝাঁকে ঝাঁকে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে পৃথিবী পৃষ্ঠে নেমে আসে, তবে নিমেষের মধ্যেই বিনাশ ঘটতে পারে প্রাণী জগতের। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এমনটি ঘটার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ ভু-চৌম্বকের প্রভাবে পৃথিবীকে বেষ্টন করে তৈরি হয়েছে অদৃশ্য ‘ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট’। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যাকে ‘পৃথিবীর রক্ষা কবচ’ বলে মেনে নিয়েছেন।

জনদর্পণ ডেস্ক : জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কয়েক মাস আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, এক শক্তিশালী সৌর ঝড় আছড়ে পড়তে চলেছে পৃথিবীর উপর। তাঁরা বুঝতে পারছিলেন, নিয়মমাফিক সূর্য ততক্ষণে বেশ চঞ্চল হয়ে উঠেছে। আর সেই সঙ্গে সূর্যের ভিতর বিস্ফোরণ ঘটার মতো পরিবেশও তৈরি হতে শুরু করেছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সেই পূর্বাভাস অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর রাতের দিকে পৃথিবীর উপর আছড়ে পড়েছে সৌর ঝড়। তার ফলপ্রসূ উত্তর গোলার্ধের আকাশে বহুদূর পর্যন্ত দেখা মিলেছে অরোরা বা মেরু জ্যোতির। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এবারের সৌর ঝড় আঘাত হেনেছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে। এই ঝড়কে তাঁরা জি৩ (G3) পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
এমনিতেই সূর্যের ভিতর প্রায় সবসময়ই ছোটো ছোটো বিস্ফোরণ ঘটে। যা থেকে নির্গত হয় স্বল্প মাত্রার তেজস্ক্রিয় রশ্মি। কিন্তু পৃথিবীর সাপেক্ষে প্রতি ১১ বছরে সূর্যের ভিতর বেশ বড়ো ধরণের কিছু পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের সময় বড়ো আকারের একা বা একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে সূর্যের ভিতর। তখন প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরণের সৌর কণা বা মহাজাগতিক রশ্মি নির্গত হয় সূর্য থেকে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এক কথায় একেই সৌর ঝড় বলে দাবি করেন।
এবারের সৌর ঝড়-এর সময় অধিক পরিমাণে এক্স১ (X1) প্রকৃতির সৌরকণা নির্গত হয়েছে বলে দাবি করছেন নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। স্পেস ডট কম সূত্রে জানা গেল, এই সৌরকণা ধরা দিয়েছে নাসার সোলার ডাইনামিকস অবজারভেটরি সিস্টেমে। নাসা জানিয়েছে, সৌর ঝড়-এর সময় উৎপন্ন এক্স১ রশ্মিগুলি সূর্য থেকে নির্গত হয়েছিল গত ২৮ অক্টোবর, এবং তা পৃথিবীতে পৌঁছায় ৩১ অক্টোবর রাতের দিকে। কণাগুলির গতিবেগ ছিল প্রায় ৩৫ লক্ষ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
সৌর ঝড় থেকে সৃষ্টি হয়ে ছুটে আসা সৌর কণা বা মহাজাগতিক রশ্মিগুলি প্রাণীদের পক্ষে মোটেও সুখকর নয়। যদি ঝাঁকে ঝাঁকে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে পৃথিবী পৃষ্ঠে নেমে আসে, তবে নিমেষের মধ্যেই বিনাশ ঘটতে পারে প্রাণী জগতের। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এমনটি ঘটার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ ভু-চৌম্বকের প্রভাবে পৃথিবীকে বেষ্টন করে তৈরি হয়েছে অদৃশ্য ‘ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট’। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যাকে ‘পৃথিবীর রক্ষা কবচ’ বলে মেনে নিয়েছেন। সূর্য থেকে ধেয়ে আসা সৌর কণাগুলির অধিকাংশই বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের বহু পূর্বে এই বেল্টে আটকা পড়ে যায়। আর বেঁচে যায় পৃথিবীর প্রাণী জগত।
তবে পৃথিবীর দুই মেরুতে ‘ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট’-এর পরিধি অনেকটাই নিচু হয়ে যাওয়ায় সৌর কণাগুলির কিছু অংশ ওই অঞ্চল দিয়ে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। তখন বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে কণাগুলির সংঘর্ষে তৈরি হয় মেরুপ্রভা বা অরোরা।
কিন্তু স্যাটেলাইটগুলির অধিকাংশই যেহেতু ‘ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট’-এর বাইরে স্থাপিত, তাই সৌর কণাগুলির ব্যাপক প্রভাব পড়ে এদের উপর। ক্রমাগত আছড়ে পড়া কণাগুলির প্রভাবে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় স্যাটেলাইটগুলিতে। ফলে স্যাটেলাইট-এর উপর নির্ভরশীল যে কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থায় সাময়িক বিঘ্ন ঘটে সৌর ঝড়-এর সময়।