কালীর মহিমা : পঞ্চমুণ্ডির আসনে সিদ্ধিলাভের সময় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল নিরিশা কালীর

Advertisement

কথিত রয়েছে, তন্ত্র পূজিত এই পুজো প্রথম শুরু করেছিলেন যে তান্ত্রিক, তিনি তন্ত্রসাধনায় সিদ্ধিলাভের পর এই পুজোর দায়িত্ব দিয়ে যান নিরিশা গ্রামেরই কোনও এক চৌকিদারকে। চৌকিদার জাতিতে ডোম হওয়ায় তিনি এই পুজোর দায়িত্ব অর্পণ করেন নন্দকিশোর বন্দ্যোপাধ্যায় নামের একজন স্থানীয় ব্রাহ্মণ-কে। তারপর বিভিন্ন সময়ে একাধিক হাত বদলের পর বর্তমানে রায় পরিবারের হাতে রয়েছে এই পুজোর মূল দায়িত্ব।


কালীর মহিমা : পঞ্চমুণ্ডির আসনে সিদ্ধিলাভের সময় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল নিরিশা কালীর

রেমা মণ্ডল : বীরভূম জেলার আমোদপুর জংশন থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমের প্রাচীন ও জনবহুল গ্রাম নিরিশা। স্থানীয়দের কাছে এই গ্রামের নিরিশা কালী বা ‘নিরিশা মা’ বেশ জাগ্রত। এই কালীর মহিমা এখন ছড়িয়ে পড়েছে দূর থেকে দূরে। শোনা যায় নিরিশা মায়ের বয়স আনুমানিক ৬০০ বছর। কোনও এক তান্ত্রিক পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে সিদ্ধিলাভের সময় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই নিরিশা কালীর। তখন এই গ্রাম ছিল প্রায় ঘন জঙ্গলে ঘেরা।

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব হলেও গোটা নিরিশাবাসীর কাছে কালীপুজো-ই যেন শ্রেষ্ঠ উৎসব। কারণ এই সময়ে গ্রামের নিরিশা মাকে হাজিয়ে তোলা হয় নতুন রূপে ও নতুন সাজে। তাকে নিয়ে যেন উৎসাহের শেষ থাকে না গ্রামবাসীদের। প্রায় এক মাস আগে থেকেই গোটা গ্রাম জুড়ে উৎসবের মেজাজ টের পাওয়া যায়। দেবাংশী ও গ্রামবাসীদের আন্তরিক চেষ্টায় ২০ ফুট দীর্ঘ কালী মূর্তি গড়া শুরু হয় মূল মন্দির থেকে ৪০০ গজ দূরের অন্য আর একটি মন্দিরে। প্রায় চার পুরুষ ধরে এইভাবেই মূর্তি গড়ার কাজ চলে আসছে এখানে।

কালীপুজোর আগের দিন শুরু হয় খড়ি দেওয়া ও পুজোর দিন প্রতিমার গায়ে চাপানো হয় রঙ। রঙের কাজ শেষ হলে দেবাংশীদের বাড়ি থেকে ঢাক, ঢোল, কাঁসর, ঘণ্টা সহযোগে আসে মায়ের অলঙ্কার ও পুজোর বিশেষ সাজ। অলঙ্কারে সুসজ্জিত করার পর আসে চক্ষুদানের পর্ব। এই পর্বটি বিশেষ আকর্ষণের। ভক্তি ভরে প্রতিমার চোখের সাদা বিন্দুতে দেওয়া হয় কালির আঁচড়। তারপর প্রতিমা শিল্পীর কাছে কৃতজ্ঞ চিত্তে অনুমতি নিয়ে ২০ ফুট দীর্ঘ এই নিরিশা মাকে নির্মাণ কুঠির থেকে নিয়ে যাওয়া হয় মূল মন্দিরে। কালীকে নিয়ে যাওয়ার এই শোভাযাত্রার মুহূর্তটি যেন কালীপুজোর রাতের শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ এখানে। মহাসমারোহে ঢাক-ঢোল সহযোগে নিরিশা মায়ের স্থান পরিবর্তনের এই দৃশ্যের সাক্ষী হতে এই গ্রামে আগমন ঘটে সহস্রাধিক দর্শনার্থীর।

কথিত রয়েছে, তন্ত্র পূজিত এই পুজো প্রথম শুরু করেছিলেন যে তান্ত্রিক, তিনি তন্ত্রসাধনায় সিদ্ধিলাভের পর এই পুজোর দায়িত্ব দিয়ে যান নিরিশা গ্রামেরই কোনও এক চৌকিদারকে। চৌকিদার জাতিতে ডোম হওয়ায় তিনি এই পুজোর দায়িত্ব অর্পণ করেন নন্দকিশোর বন্দ্যোপাধ্যায় নামের একজন স্থানীয় ব্রাহ্মণ-কে। তারপর বিভিন্ন সময়ে একাধিক হাত বদলের পর বর্তমানে রায় পরিবারের হাতে রয়েছে এই পুজোর মূল দায়িত্ব।

মহা জাগ্রত এই নিরিশা মায়ের মহিমা এখন বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছে। এখানে বিভিন্ন স্ত্রী ব্যাধির ওষুধও দেওয়া হয় রোগ নির্মূলের জন্য। বলাবাহুল্য, তার অধিকাংশই ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শুধুমাত্র কার্তিকের এই বিশেষ কালীপুজোর দিনেই নয়, সারা বছর ধরেই সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এবং প্রত্যেক অমাবস্যায় এখানে বিপুল মানুষের সমাগম ঘটে।

Advertisement
Previous articleকালীর মহিমা : দোনাইপুরে একই মন্দিরে পুজো হয় তিন কালীর
Next articleঅলক্ষ্মীর পুজো দেওয়া হয় কালীপুজোর রাতে, কিন্তু কেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here