হাইপারসনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত মিসাইলকে যে কোনও সময় গতিপথ পরিবর্তিত করা সম্ভব। কারণ এই ধরণের মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্র ও গ্লাইড ভেহিকল প্রযুক্তির সংমিশ্রণে তৈরি। এছাড়াও এটি আঁকাবাঁকা পথে চলতে সক্ষম। এই ধরণের মিসাইল পৃথিবীর কক্ষপথেও কিছুক্ষণের জন্য পৌঁছে যেতে পারে। তাছাড়া এটি আবার পারমাণবিক বোমাও বহন করতে সক্ষম। এখন এই হাইপারসনিক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে বিশ্বের অন্তত ৮টি দেশ।

অনলাইন পেপার : এই গতির পৃথিবীতে এখন আরও গতির দিকে এগোচ্ছে বিশ্ব। উন্নত বিশ্বের দেশগুলির হাতে এমনিতেই যে সমস্ত মারণাস্ত্রের প্রযুক্তি রয়েছে, যার মোকাবিলা করা বেশ কঠিন। এখন তারা-ই আবার আরও উন্নত প্রযুক্তির মারানাস্ত্র চাইছে। অন্তত এমন একটি প্রযুক্তির সন্ধান তারা চাইছে, বিরোধী পক্ষের কাছে এই মুহূর্তে যার কোনও উপযুক্ত জবাব থাকবে না। অর্থাৎ প্রায় বিনা বাধায় শত্রুপক্ষকে চোখের পলকে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখবে।
সেই রকমই এখনও পর্যন্ত মারণাস্ত্রের শেষতম সংযোজন হতে চলেছে হাইপারসনিক প্রযুক্তি। চলতি বিশ্বে প্রতিটি প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্রকে রুখে দেওয়ার বিপরীত প্রযুক্তি হাতে রয়েছে বিরোধী পক্ষের। তাই সহসা দুটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ একে অপরকে দুর্বল ভাবতে চাই না। কিন্তু হাইপারসনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত মিসাইল নিজের টার্গেটকে বিনা বাধায় নিখুঁতভাবে পূরণ করতে পারে। কারণ বিরোধী পক্ষের কাছে একে আটকানোর মতো ক্ষমতা এখনও পর্যন্ত নেই।
হাইপারসনিক প্রযুক্তি আসলে কী? এটি এমন একটি প্রযুক্তি, এখানে গতিই যার শেষ কথা। বিবিসি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই প্রযুক্তিতে নির্মিত মিসাইল শব্দের অন্তত ৫ গুণ দ্রুতগতি সম্পন্ন হতে পারে। আর তাই একবার এই প্রক্রিয়ায় নির্মিত মিসাইল নিক্ষেপ করলে গতির কারণে তার গতিপথ ও প্রকৃতি সম্পর্কে পূর্বাভাস পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। শক্তিশালী রাডারও প্রথম অবস্থায় একে নির্ণয় করতে পারে না। আর পারলেও বিরোধী পক্ষের কাছে একে আটকানোর কোনও জবাব থাকে না। বিশেষজ্ঞরা তাই হাইপারসনিক প্রযুক্তিকে ‘নেক্সট বিগ থিং’ বলে দাবি করেছেন।
প্রচলিত ব্যালিস্টিক মিসাইলের সঙ্গে এর প্রকৃত পার্থক্য কোথায়? বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ইন্টার্কন্টিনেনন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলিও দ্রুতগতি সম্পন্ন হতে পারে। এগুলি রকেট প্রযুক্তিতে নির্মিত। তাই নিক্ষেপের পর বিরোধী পক্ষ এর গতিপথ আন্দাজ করতে পারে। অর্থাৎ প্রায় সরলরেখায় বা পূর্ব নির্ধারিত রুটে চলতে থাকে ইন্টার্কন্টিনেনন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলি। কিন্তু হাইপারসনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত মিসাইলকে যে কোনও সময় গতিপথ পরিবর্তিত করা সম্ভব। কারণ এই ধরণের মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্র ও গ্লাইড ভেহিকল প্রযুক্তির সংমিশ্রণে তৈরি। এছাড়াও এটি আঁকাবাঁকা পথে চলতে সক্ষম। এই ধরণের মিসাইল পৃথিবীর কক্ষপথেও কিছুক্ষণের জন্য পৌঁছে যেতে পারে। তাছাড়া এটি আবার পারমাণবিক বোমাও বহন করতে সক্ষম।
এখন এই হাইপারসনিক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে বিশ্বের অন্তত ৮টি দেশ। তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চিন এই প্রযুক্তির খুবই কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। তারা ইতিমধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শুরু করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৩ সালেই এই প্রযুক্তির মিসাইল সফলভাবে নিক্ষেপ করতে পেরেছিল। চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ‘রেথিওন’ নামে আরও একটি মিসাইল তারা পরীক্ষা করে। এটি শব্দের অন্তত ৫ গুণ দ্রুতগতি সম্পন্ন বলেও তারা দাবি করে। এর কয়েকদিন পর ৪ অক্টোবর রাশিয়াও এই একই ধরণের একটি পরীক্ষা চালায়। তাদের এই ধরণের মিসাইলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জিরকন’। রাশিয়া দাবি করছে, এর গতি হতে পারে শব্দের থেকেও ৯ গুণ বেশি। তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল চিন। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী, গত আগস্টে তারা একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে। যেটি পৃথিবীর কক্ষপথে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আবার ভূমিতে নেমে আসে। অবশ্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এটি আঘাত হানতে পারেনি। এটি শব্দের অন্তত ৫ গুণ দ্রুতগতি সম্পন্ন ছিল। তবে চিন যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি মানতে চাইনি। তারা দাবি করেছিল, এটি আসলে তাদের কোনও মিসাইল পরীক্ষা-ই ছিল না। এটি ছিল পুনর্ব্যবহারযোগ্য একটি রকেট পরীক্ষা।