মারকোলা গ্রামে বর্তমানে চারটি পারিবারিক দুর্গাপুজো হয়ে থাকে। তার দুটিই এই চৌধুরী বাড়ির পুজো। কথিত রয়েছে, এই পুজোয় আগে মোষ বলি দেওয়া হত। কিন্তু জমিদার শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর সময়ে বলি দেওয়ার ঠিক পূর্বে বলির দুটি মোষ-ই হঠাৎ মারা যায়। পরে স্বপ্নাদেশে তিনি ‘বরাহ’ বলির নির্দেশ পান। আর সেই থেকে আজও নবমীর দিন শূকর বলি দেওয়া হয় এখানে। |

সুজয় ঘোষাল : বীরভূম জেলার নানান স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক বৈচিত্র্যময় দুর্গাপুজো। এই পুজোগুলি প্রাচীনত্বের নিরিখে যেমন ঐতিহ্যবাহী, ঠিক তেমনি নিজস্ব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের গুণেও ব্যতিক্রমী। এমনই অন্যতম একটি ব্যতিক্রমী দুর্গাপুজোর সন্ধান মিলবে এই জেলার সাঁইথিয়া ব্লকের ফুলুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মারকোলা গ্রামে। এই গ্রামে চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজোয় নবমীর দিন বলি দেওয়া হয় শূকর। যা একটি স্বতন্ত্র বৈশষ্ট্য এবং বেশ বৈচিত্র্যময়।
সাধরণত দুর্গাপুজোয় ছাগ, মেষ, মহিষ, লাউ, চালকুমড়ো ইত্যাদি বলির চল থাকলেও শূকর বলি সচরাচর দেখা যায় না। কিন্ত মারকোলা গ্রামে এই শূকর বলির প্রথা চিরাচরিতভাবে বংশপরম্পায় হয়ে আসছে বহু বছর ধরে।
চৌধুরী পরিবারের সদস্য মানিকেশ্বর চৌধুরী ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের একজন স্বনামধন্য আইনজীবী। তিনি এই মারকোলা গ্রামে ১২৭৯ বঙ্গাব্দে পরপর ছয়টি টেরাকোটার মন্দির ও ‘দুর্গাবাড়ি’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে এই গ্রামে দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন রাধিকামোহন চৌধুরী। তৎকালীন সময়ে তিনি ছিলেন এই গ্রামের জমিদার। মারকোলা গ্রামে বর্তমানে চারটি পারিবারিক দুর্গাপুজো হয়ে থাকে। তার দুটিই এই চৌধুরী বাড়ির পুজো।
কথিত রয়েছে, এই পুজোয় আগে মোষ বলি দেওয়া হত। কিন্তু জমিদার শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর সময়ে বলি দেওয়ার ঠিক পূর্বে বলির দুটি মোষ-ই হঠাৎ মারা যায়। পরে স্বপ্নাদেশে তিনি ‘বরাহ’ বলির নির্দেশ পান। আর সেই থেকে আজও নবমীর দিন শূকর বলি দেওয়া হয় এখানে।
চৌধুরী পরিবারের বর্তমান সদস্য অখিলবন্ধু চৌধুরী ও উৎপল চৌধুরী থেকে জানা গেল, পুরনো নিয়ম-নিষ্ঠা মেনে আজও চৌধুরী বাড়ির এই দুর্গাপুজো করা হয়ে থাকে। এখানে ব্যতিক্রম বলতে নবমীর দিন শূকর বলি। যা অন্যান্য স্থানের দুর্গাপুজো থেকে অনেকটাই পৃথক করে দিয়েছে। ওই দিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য দর্শনার্থীর আগমন ঘটে মন্দির প্রাঙ্গণে। তবে বর্তমানে পুজোর খরচ বেড়ে যাওয়ায় চৌধুরী বাড়ির অন্য সদস্যরাও এই পুজোয় অংশগ্রহণ করেন।
মারকোলা গ্রামের এই ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো বীরভূমের মানচিত্রে অবশ্যই একটি বিশেষ স্থান দখল করে থাকবে। কারণ প্রাচীনত্বের পাশাপাশি চৌধুরী পরিবারের এই দুর্গাপুজো নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের গুণে অন্যগুলির থেকে অনেকটাই ব্যতিক্রম।