ব্যতিক্রমী দুর্গাপুজো : এখানে দেবী দুর্গার সঙ্গে পুজো পায় জয়া ও বিজয়া

Advertisement
এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য, এখানে দেবী দুর্গার সঙ্গে থাকে না লক্ষ্মী, সরস্বতী, গনেশ ও কার্তিক। তার বদলে এখানে দুর্গার সঙ্গে পুজো করা হয় দেবীরই দুই সহচরী জয়া ও বিজয়া-কে। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ঋষি গৌতমের ঔরসে দেবী অহল্যার গর্ভে চার কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছিল, যথাক্রমে জয়া, বিজয়া, জয়ন্তী ও অপরাজিতা। অন্য আরও একটি কাহিনীতে জানা যায়, জয়া ও বিজয়া দেবী লক্ষ্মী ও দেবী সরস্বতীরই প্রতিরূপ।
এখানে দেবী দুর্গার সঙ্গে পুজো পায় জয়া ও বিজয়া

বিজয় ঘোষাল : থিম পুজোর জৌলুস আর আভিজাত্যের ভিড়ে কোথায় যেন প্রচারহীনভাবে থেকে যায় গ্রাম-বাংলার ব্যতিক্রমী সব দুর্গাপুজো। আর এরই সঙ্গে অজানা থেকে যায় ওইসব পুজোগুলির প্রকৃত ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ব্যতিক্রমী হওয়ার কারণ। বীরভূম সহ সমগ্র বঙ্গদেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতে ছড়িয়ে রয়েছে এই রকমই সব দুর্গাপুজো। তাদেরই একটি মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞা ব্লকের সাহোড়া গ্রামের ভট্টাচার্য-ব্যানার্জি বাড়ির দুর্গাপুজো।

এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য, এখানে দেবী দুর্গার সঙ্গে থাকে না লক্ষ্মী, সরস্বতী, গনেশ ও কার্তিক। তার বদলে এখানে দুর্গার সঙ্গে পুজো করা হয় দেবীরই দুই সহচরী জয়া ও বিজয়া-কে। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ঋষি গৌতমের ঔরসে দেবী অহল্যার গর্ভে চার কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছিল, যথাক্রমে জয়া, বিজয়া, জয়ন্তী ও অপরাজিতা। অন্য আরও একটি কাহিনীতে জানা যায়, জয়া ও বিজয়া দেবী লক্ষ্মী ও দেবী সরস্বতীরই প্রতিরূপ। এমনকি অনেক স্থানে জগদ্ধাত্রী পুজোতেও জয়া-বিজয়ার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

এখানে জয়া-বিজয়ার কোনও বাহন থাকে না। ভট্টাচার্য-ব্যানার্জি পরিবারের অন্যতম সদস্য চঞ্চল ভট্টাচার্যের থেকে জানা গেল, তাঁদের এই পুজোর বয়স সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তবে তাঁরা দাবি করেন এই পুজোর বয়স আনুমানিক ৭০০ বছরেরও বেশি হতে পারে।

কীভাবে এই পুজো শুরু হয়েছিল? এব্যাপারে চঞ্চল বাবু জানালেন, তাঁদের পূর্বপুরুষরা নাকি কোনও এক আশ্বিনের চতুর্থী অথবা পঞ্চমী তিথিতে মূয়রাক্ষী নদীর বন্যায় ভেসে আসা পাঁচ পুতুলের একটি কাঠামো পান। যেহেতু এই ঘটনার সঙ্গে দৈবিক ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে, ভেবে সেই বছর তাঁরা ঘটে-পটে দুর্গাপুজো সারেন। পরের বছর থেকে ওই কাঠামোতেই দেবী দুর্গা সহ জয়া ও বিজয়ার পুজো করা শুরু করে তাঁদের ভট্টাচার্য পরিবার। যদিও পূর্বে নাকি তাঁদের পদবী ছিল ঘোষাল। বংশপরম্পরায় পৌরহিত্য করার জন্য তাঁদের পদবী পরিবর্তিত হয়ে যায় ভট্টাচার্য-এ।

বর্তমানে এই পুজো পালাক্রমে ৪টি পরিবারে করে থাকে। তার মধ্যে ৩টি ভট্টাচার্য পরিবার এবং ১টি ব্যানার্জি পরিবার থেকে এসেছে। আগে এখানে সন্ধিপুজোয় ছাগ বলির রীতি ছিল। কিন্তু কোনও এক বছর ওই বলিদানে বাধা পড়লে ছাগ বলিদান বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তবে এখনও নিয়ম মেনে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে কুমড়ো বলির প্রথা রয়েছে। আরও একটি প্রথা এখানকার পুজোকে অন্যগুলির থেকে পৃথক করে রেখেছে। এখানে এখনও নিয়ম মেনে প্রতি বছর নবমীতে কুমারী পুজো হয়ে থাকে। যার দর্শন পেতে দূরদূরান্ত থেকেও অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড় জমে পুজো প্রাঙ্গণে।

Advertisement
Previous articleব্যতিক্রমী দুর্গাপুজো : এখানে সংস্কৃতের বদলে মন্ত্রোচ্চারণ হয় কোঁড়া ভাষায়
Next articleপুজো শেষ, এবার মায়ের আগমন বার্তা নিয়ে নীলকণ্ঠ পাখি যাবে কৈলাস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here