পুজো শেষ, এবার মায়ের আগমন বার্তা নিয়ে নীলকণ্ঠ পাখি যাবে কৈলাস

Advertisement
তবে শিবের কণ্ঠ নীল হলেও নীলকণ্ঠ পাখির কণ্ঠ কিন্তু মোটেও নীল নয়। বরং তার গলা ও বুকের দিকটি কিছুটা বাদামি ও খয়েরি মিশ্রিত। লেজ ও ডানা অবশ্য গাঢ় নীল। ভারতীয় উপমহাদেশে এই পাখির ইংরেজি নাম ইণ্ডিয়ান রোলার (India Roller)। বৈজ্ঞানিক নাম কোরাশিয়াস বেঙ্গলেনসিস (Coracias Benghalensis)। ঠোঁট থেকে লেজ পর্যন্ত এদের আকার হতে পায় ২৫-৩৫ সেন্টিমিটার মাত্র।
পুজো শেষ, এবার মায়ের আগমন বার্তা নিয়ে নীলকণ্ঠ যাবে কৈলাস
Indian roller – Image by David Mark from Pixabay

জনদর্পণ ডেস্ক : কথিত রয়েছে, দশমীতে মা দুর্গা যখন মর্ত্য থেকে বিদায় নিয়ে কৈলাসের পথে গমন শুরু করে, তখন তার শুভাগমনের বার্তা মহাদেবের কাছে পৌঁছে দেয় নীলকণ্ঠ পাখি। তাই বিজয়া দশমীর দিন নীলকণ্ঠ দর্শন শুভ সংকেত বলে মনে করে হিন্দু সম্প্রদায়। এক সময়ে তাই বনেদি পরিবারের দুর্গাপুজোর দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের পূর্বে পরিবারের সদস্যেরা নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে দিতেন মুক্ত আকাশে। তবে আইন করে বর্তমানে নীলকণ্ঠ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই ওই সব বনেদি পরিবার মাটির নীলকণ্ঠ জলে ভাসিয়ে এখন তাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করে থাকে।

এছাড়াও রামায়ণে উল্লেখ রয়েছে, রাবণ বধের প্রাক্কালে রামচন্দ্র শুভ সংকেত হিসাবে নীলকণ্ঠ পাখি দর্শন করেছিলেন। অন্যদিকে রাবণ ছিলেন ব্রাহ্মণ ও শিবের সবচেয়ে বড়ো ভক্ত। রামচন্দ্র রাবণ বধ করলে তার ব্রহ্মহত্যার পাপ লাগে। এই পাপ খর্ব করার জন্য তিনি লক্ষ্মণ সহ শিবের উপাসনা শুরু করেন। দেবাদিদেব মহাদেব তখন কৈলাস থেকে নীলকণ্ঠ পাখির রূপ ধরে নেমে এসে রামচন্দ্রকে দর্শন দেন। এক্ষেত্রে নীলকণ্ঠ পাখিকে শিবের অন্যতম রূপ বা প্রতিনিধি হিসাবেও মনে করা হয়।

এটি মনে করার পিছনেও রয়েছে অন্য যুক্তি। পুরাণ মতে, সমুদ্র মন্থনের সময় নির্গত বিষ নিজের কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন মহাদেব। ফলে তার কণ্ঠ হয়ে যায় নীল বর্ণ। তাই শিবের অপর নাম ‘নীলকণ্ঠ’। এখানে শিবের কণ্ঠ বর্ণের সঙ্গে নীলকণ্ঠ পাখির গাত্র বর্ণের গাঢ় নীলের সম্পর্ক তৈরি করা হয়েছে।

তবে শিবের কণ্ঠ নীল হলেও নীলকণ্ঠ পাখির কণ্ঠ কিন্তু মোটেও নীল নয়। বরং তার গলা ও বুকের দিকটি কিছুটা বাদামি ও খয়েরি মিশ্রিত। লেজ ও ডানা অবশ্য গাঢ় নীল। ভারতীয় উপমহাদেশে এই পাখির ইংরেজি নাম ইণ্ডিয়ান রোলার (India Roller)। বৈজ্ঞানিক নাম কোরাশিয়াস বেঙ্গলেনসিস (Coracias Benghalensis)। ঠোঁট থেকে লেজ পর্যন্ত এদের আকার হতে পায় ২৫-৩৫ সেন্টিমিটার মাত্র। এরা অবাধে বিচরণ করে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, পাকিস্থানের পাহাড়ি অঞ্চলের পাদদেশে। এখনও পর্যন্ত পক্ষীবিদরা নীলকণ্ঠের ১৭টি প্রজাতির কথা জানতে পেরেছেন। এর মধ্যে ‘ইউরোপিয়ান রোলার’ আকারে বেশ কিছুটা ছোটো।

এক সময়ে গ্রাম-বাংলার মাঠে-ঘাটেও এদের বিচরণ ছিল অবাধ। মাঠের ছোটো-বড়ো যে কোনও পোকামাকড় এদের প্রিয় খাবার। শস্যখেতে তাই এদের হামেশায় দেখা পাওয়া যেত। চাষিরাও এদের দেখা মাত্র খুশি প্রকাশ করতেন। কারণ ক্ষতিকর পোকামাকড় ভক্ষণ করে নীলকণ্ঠ পাখি চাষিদের উপকারই করত। তবে এখন অবাধে শিকারের ফলে গ্রাম-বাংলা থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে নীলকণ্ঠ। তারা ক্রমশ সরতে সরতে পৌঁছে গিয়েছে উত্তরের পাহাড়ি অঞ্চলের পাদদেশে।

যাইহোক, এবছরের মতো দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটে গিয়েছে। উমা এবার বিদায় নেমে মর্ত্য থেকে। পৌঁছে যাবে কৈলাস শিবের কাছে। শিবের কাছে তার এই আগমন বার্তা এবার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেবে নীলকণ্ঠ পাখি।

Advertisement
Previous articleব্যতিক্রমী দুর্গাপুজো : এখানে দেবী দুর্গার সঙ্গে পুজো পায় জয়া ও বিজয়া
Next articleপরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কমাতেই হবে ‘আলোক দূষণ’-এর মাত্রা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here